Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নদী(River) কাকে বলে? নদীর শ্রেণীবিভাগ(Classification of River)? নদী সম্পর্কিত কয়েকটি মৌলিক ধারণা

নদী (River)


নদীর সংজ্ঞা (Definition of river): 

                   বিখ্যাত ভূবিজ্ঞানী মরিসাওয়া নদীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন 'খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত জলধারাক নদী বলে '।

                 J Smith এর মতে 'স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠা খাতের ভেতর দিয়ে নিম্ন ঢালের দিকে বয়ে চলা সুবৃহৎ এবং সুপেয় কোনো জলধারা, হ্রদ বা সমুদ্রে পড়লে তাকে নদী বলে '। 

                   তবে সাধারণভাবে বলা যায় স্বাভাবিক উপায়ে সৃষ্ট কোন জলধারা যখন মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল অনুসারে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয়ে কোনো বৃহৎ সমুদ্রে বা হ্রদে পতিত হয় তখন সেই জলধারা কে বলা হয়় নদী ।


নদীর শ্রেণীবিভাগ 


1.সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ :

প্রধান নদী (Main River) : একটি নদী অববাহিকায়, ভূমির মুখ্য ঢাল বরাবর বয়ে যাওয়া যে নদীতে অন্যসব ছােটো ছােটো নদী জল নিয়ে আসে এবং যে নদী মােহনা পর্যন্ত ওই সমস্ত জলকে বয়ে নিয়ে যায় তাকে প্রধান নদী বলে। যেমন— গঙ্গা নদী।


উপনদী (Tributary) : প্রধান নদীতে যেসব ছােটো ছােটো নদী অপ্রধান ঢাল বরাবর বয়ে এসে যােগ দেয়, সেসব নদীকে উপনদী বলে। প্রধান নদীতে এই নদীগুলি জল উপহার (trnibute) দেয়, তাই এরা tribulary বা উপনদী। যেমন- যমুনা গঙ্গার উপনদী।


শাখানদী (Distributary) : প্রধান নদী তার নিম্নপ্রবাহে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে, জলকে ভাগ করে মােহনা পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যায়। সেই বিভাজিত নদীগুলিকে শাখানদী বলে। ডিস্ট্রিবিউট (distribute) কথার অর্থ বিভাজন। এই ছােট ছােট নদীগুলি বড় নদীর জল বিভাজন করে তাই এরা শাখা বা ডিস্ট্রিবিউটারি নদী। যেমন- ভাগীরথী-হুগলী নদী গঙ্গার শাখানদী।


2. জলের যােগানের ভিত্তিতে :

নিত্যবহ নদী (Perinial River) : যে সমস্ত নদী হিমবাহ বা ঝর্ণার জল থেকে উৎপন্ন হয়, সাধারণত তাতে সারাবছর জল থাকে। গঙ্গা নদী হিমবাহের দ্বারা পুষ্ট বলে, এটি একটি নিত্যবহ নদী। 


অনিত্যবহ নদী (Seasonal River) : যে সব নদী শুধুমাত্র বৃষ্টির জলে পুষ্ট তাতে সারা বছর জল থাকে না। গ্রীষ্মকালে এইসব নদী প্রায় শুকিয়ে যায়। যেমন- অজয় নদী।


3. উৎপত্তি অনুসারে নদীর শ্রেণিবিভাগ : 

অনুগামী নদী (Consequent Stream) : কোনাে এলাকা প্রাথমিকভাবে গঠিত হওয়ার পর বৃষ্টির জল প্রথমে চাদর প্রবাহ (Sheet wash ) ও পরে দুর্বল স্থান বরবার একত্রিত হয়ে যে নদীর সৃষ্টি করে তা ভূমির প্রাথমিক ঢাল বেয়ে প্রবাহিত হয়। এই নদী অববাহিকার প্রাথমিক ঢালের অনুগামী হয় তাই একে অনুগামী নদী বলে।


পরবর্তী নদী (Subsequent Stream) : অববাহিকার প্রধান ঢালের পার্শ্বদেশের জল কোনাে নি দুর্বল স্থান বা ফাটল বরাবর নদীতে এসে পড়ে। ক্ৰমশঃ ওই ফাটল বা দুর্বল স্থানে জলের কেন্দ্রীভূত প্রধাহের ফলে এর গভীরতা, প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্য সবই বৃদ্ধি পায় এবং একটি নদীর রূপ নেয়। এই নদী, মস্তক বরাবর ক্ষয়ের ফলে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে পরবর্তী নদী বলে। সাধারণত নম শিলা বরাবর প্রধান নদীর দুদিকে এরা বিস্তৃত হলে এদের দৈর্ঘ্য শিলান্তরের আয়ামের সমান্তরাল হয় এবং তাই এদের আয়াম নদীও বলে।


পুনর্ভবা নদী (Resequent Stream) : কোনাে এলাকায় স্থানীয় ঢালে সৃষ্টি হওয়া ছােটো নদী যদি বড়াে নদীর এলাকার ঢালের অভিমুখী হয়, তখন তাকে পুনর্ভবা  নদী বলে।


বিপরা নদী (Obsequent Stream) : কোনাে এলাকার স্থানীয় ঢালে তৈরি হওয়া কোনাে ছােটো নদী, যদি এলাকার সামগ্রিক ঢালের বিপরীতে অর্থাৎ বড়াে নদীর গতির বিপরীতে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বিপরা নদী বলে।


4. গঠনের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ :

পূর্ববর্তী নদী (Antecedent Stream) : প্রবাহপথে ব্যাপক ভূ-সংস্থানিক পরিবর্তন (Tectonic Change) সত্ত্বেও, নদী যদি নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে তার পুর্বেকার গতিপথ বজায় রাখতে সমর্থ হয়, তবে তাকে পূর্ববর্তী নদী (Antecedent Stream) বলে। যেমন - ঘ্ঘরা, কুশী নদী প্রভৃতি হিমালয় পর্বতের উৎপত্তির পূর্বে প্রবাহিত ছিল। এরা হিমালয় পর্বতের উত্থানের হারের চেয়ে দ্রুততর ক্ষয়কার্য চালিয়ে পুর্বপ্রবাহ বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। এজন্য এরা হল পূর্ববর্তী নদী।


অধ্যারোপিত নদী (Superimposed Stream) : নবীনতর গঠনের ওপর সৃষ্ট কোনাে নদী-ব্যবস্থা যদি ক্ষয়ের ফলে ক্রমশ নীচু হতে হতে প্রাচীন এবং ভিন্ন রকমের গঠনের ওপর এসে পড়ে এবং তা সত্ত্বেও যদি নদীর গতিপথের কোনাে পরিবর্তন না হয়, তখন তাকে অধ্যারােপিত নদী-ব্যবস্থা বলে। সুবর্ণরেখা নদী এরকম অধ্যারোপিত নদীর উদাহরণ।



নদী সম্পর্কিত কয়েকটি মৌলিক ধারণা :

নদী অববাহিকা(River basin) : প্রধান নদী, উপনদী ও শাখানদী দ্বারা গঠিত কোন একটি নদী গোষ্ঠী যতটুকু জায়গা দখল করে সেই পরিমাণ জায়গাকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যোগ করলে যে অঞ্চল পাওয়া যায় সেই অঞ্চলটি, ওই প্রধান নদীর অববাহিকা ।

বৈশিষ্ট্য :

• নদী অববাহিকা হল নদীর দুই ধারে অবস্থিত নিম্নভূম যা ক্রমশ ঢালু হয়ে নদীগর্ভের দিকে যায়।

• বন্যায় নদী অববাহিকা প্লাবিত হয়।

• নদী অববাহিকা এই নদীর ক্ষয় ও সঞ্চয় দেখা যায়।

উদাহরণ : আমাজন অববাহিকা বৃহত্তম নদী অববাহিকার উদাহরণ ।


নদী ধারণ অববাহিকা (Catchment basin) : নদী উচ্চ পর্বত অঞ্চল অথবা মালভূমি থেকে নিম্ন সমভূমির দিকে নেমে আসে। নদীর এই উৎসঅঞ্চলের অববাহিকাতে অনেকক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা একত্রে মিলিত হয়। ওই মিলিত জলবার নদী রূপে খাত বরাবর নিম্নদিকে প্রবাহিত হয়। নদীর উৎস অঞ্চলের এই অববাহিকাই ধারণ অববাহিকা।

অথবা

        পার্বত্য অঞ্চলে একটি নদী গোষ্ঠী যতটুকু অংশ দখল করে থাকে ,তাকে নদীর ধারণ অববাহিকা বলে ।

বৈশিষ্ট্য :

•ধারণ অববাহিকায় নদীর উৎপত্তি হয় ।

•ধারণ অববাহিকা সংকীর্ণ হয়।

•এই অংশে বেশি নদী ক্ষয় বেশি।

 উদাহরণ : গঙ্গার ধারণ অববাহিকা উত্তরাখণ্ডের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল।


নদীবর্তন(River regime) : নদীবর্তন হল ঋতুভিত্তিক জলের পরিমাণ এর হ্রাস বৃদ্ধি । নদীতে জলের পরিমাণ গতিবেগ ও জলের স্তরের উচ্চতা সারা বছর একই থাকে না বলে নদী বর্তন সৃষ্টি হয়। নদীর গতিবেগ , ক্ষয়ের এই ধরনের পরিবর্তনকে নদী বর্তন বলে।

নিয়ন্ত্রক : বছরের বিভিন্ন সময়ের বৃষ্টিপাত ,ভূমির ঢাল, শিলাস্তর, সূর্যের কিরণ ইত্যাদি।

শ্রেণীবিভাগ : নদীবর্তন প্রধানত তিন প্রকার । যথা -

a)সরল নদীবর্তন (জোয়ার ও ভাটা)

b)দ্বিমাত্রিক নদীবর্তন (বর্ষাকাল গ্রীষ্মকাল)

c)জটিল নদীবর্তন (বর্ষাকাল, গ্রীষ্মকাল ,বরফ গলা জলে প্রকোপ, বাঁধের জলে প্রবেশ, সেচের জন্য জল ধারণ প্রকৃতি )


জলবিভাজিকা(Watershed) : একটি নদী-অববাহিকা অপর একটি নদী-অববাহিকার মাঝের একটি উচ্চভূমি থেকে পৃথক থাকে। দুই নদী-অববাহিকার মাঝের এরূপ উচ্চভূমিই হলাে জল-বিভাজিকা (Water-shed) বা নদী-বিভাজিকা।

বৈশিষ্ট্য

• জলবিভাজিকা দুটি নদী গোষ্ঠীকে পৃথক করে।

• জলবিভাজিকা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে দুটি নদী একসাথে মিলিত হয়।

উদাহরণ : ভারতের সাতপুরা পর্বত নর্মদা ও তাপ্তি নদীর জলবিভাজিকা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ