Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মৃত্তিকা পরিলেখ [Soil Profile] কাকে বলে? এর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত লেখো?

মৃত্তিকা পরিলেখ [Soil Profile] 


মৃত্তিকা পরিলেখ [Soil Profile] : মৃত্তিকার উপরিস্তর থেকে নিম্নস্তরে পরপর সাজানো অনুক্রমকে বলে মৃত্তিকা পরিলেখ অর্থাৎ ভূমির সমান্তরালে অবস্থিত সুস্পষ্ট স্তরযুক্ত মৃত্তিকার লম্বচ্ছেদকে মৃত্তিকা পরিলেখ বলে । এবং এর প্রতিটি স্তরকে বলা হয় হরাইজন । রুশ মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ভি. ডি. ডকুচেফ [V. V. Dokuchaiev] প্রথম মৃত্তিকা পরিলেখের ধারণা দেন।

আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখ [Ideal Soil Profile] : মৃত্তিকার আদর্শ পরিলেখ-এর স্তরগুলিকে উপর থেকে নীচের দিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায় – O, A, B, C, D প্রভৃতি। যদিও এ বিষয়ে মত পার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ বিজ্ঞানী মৃত্তিকার প্রধান তিনটি স্তরের কথা বলেন। যেমন- (i) A-স্তর বা উপরিস্তর বা topsoil যা হিউমাস বা জৈব উপাদানে গঠিত। (ii) অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে A-স্তর থেকে খনিজ পদার্থসমূহ B-স্তরে বা উপমৃত্তিকা স্তর বা Subsoil-এ সঞ্চিত হয়। (iii) অবশেষে রয়েছে C-স্তর যা আদি শিলা নামে পরিচিত।

মৃত্তিকা পরিলেখ [Soil Profile]


মৃত্তিকা স্তর বা হরাইজন [Soil Horizon] : ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত মৃত্তিকার এক-একটি পাতলা অথচ সুস্পষ্ট বিভাজিত অংশকে মৃত্তিকার হরাইজন বা স্তর বলে। একমাত্র পরিণত মাটিতে প্রায় সব ধরনের স্তর বা হরাইজন থাকে। পরিণত মাটির প্রধান প্রধান স্তর বা পরিলেখগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হল—

1) O স্তর বা জৈব স্তর [Organic Layer] : উৎপত্তি : মরা উদ্ভিদ, ঝরা পাতা, ডালপালা, মরা ঘাস এবং মৃত প্রাণী, প্রাণীর মল, মৃত কীটপতঙ্গ প্রভৃতি জীবজাত পদার্থ, ফাঙ্গাস ও ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা জৈবিক জারণ প্রক্রিয়ায় প্রায় অবিয়োজিত থেকে বা আংশিক বিয়োজিত হয়ে কিংবা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিয়োজিত হয়ে জৈবপদার্থগুলি হিউমাসে পরিণত হয়। হিউমাস সমৃদ্ধ মাটির এই উপরের স্তরকে জৈবস্তর বা organic layer বা O-স্তর বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে O-স্তরের দুটি উপস্তর থাকে— 

(i) O1 স্তর : এটি O-স্তরের সবচেয়ে উপরের স্তর। এই স্তরে উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত পদার্থগুলি বিশেষ পচে না। পদার্থগুলি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে। পদার্থগুলি কোন্ উৎস থেকে এসেছে তা সহজেই বোঝা যায় বা চেনা যায়। 

(ii) O2 স্তর : এটি জৈব পরিলেখের সবচেয়ে নীচের স্তর। এই স্তরে হিউমাস আরও বিয়োজিত হয়ে অবশেষে খনিজে রূপান্তরিত হয়।


2) A-স্তর : জৈব স্তরের ঠিক নীচের স্তরটি হল A-স্তর। এটি খনিজ স্তরের সবচেয়ে উপরের স্তর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই স্তরকে ধৌত বা বিধৌত স্তর বা এলুভিয়াল স্তর [Eluvial Horizon] বলে। কারণ এই স্তর থেকে পদার্থাদি অপসৃত ও নিম্নমুখী হয়ে B স্তরে মিশ্রিত হয়।এলুভিয়েশন পদ্ধতিতে এই স্তরটি গঠিত হয়। এলুভিয়েশন বলতে ধৌতকরণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। A-স্তরের তিনটি উপস্তর রয়েছে। এগুলি হল - 

(i) A1 স্তর : এটি পুরু ও হিউমাস সমৃদ্ধ স্তর। এখানে জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ থাকে।

(ii) A2 স্তর : একে এলুভিয়াল [Eluvial] স্তর বলে। এটি খুব বেশি গভীর নয়, হালকা রঙের সামান্য দানাযুক্ত। এই স্তর থেকে কাদা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির অপসারণ ঘটে। 

(iii) A3 স্তর : এটি একটি প্রান্তিক স্তর এবং B দিকে পরিবর্তনশীল হলেও A-স্তরের সঙ্গেই এই স্তরের মিল বেশি।


3) B-স্তর: A-স্তরের নীচে অবস্থিত এটি তৃতীয় স্তর। একে সঞ্চয়ণের স্তরও বলা হয়। এই স্তরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে যা A-স্তর থেকে ধৌত প্রক্রিয়ায় এসে সঞ্চিত হয়। এই স্তর ইলুভিয়াল স্তর নামেও পরিচিত। B-স্তরের তিনটি উপস্তর রয়েছে। এগুলি হল :

(i) B1 -স্তর : এটি একটি রূপান্তরিত স্তর।। তবে A-এর তুলনায় B-স্তরের সঙ্গে মিল বেশি। এই স্তরে A-স্তর থেকে আসা হিউমাস ও লৌহ এবং অ্যালুমিনিয়াম সঞ্চিত হয়।

(ii) B2 স্তর : স্তেপ মৃত্তিকায় এই স্তর বেশি গঠিত হতে দেখা যায়। এই স্তরে কার্বনেটের সঞ্চয় অধিক দেখা যায়। এটি অনেক সময় সালফেটযুক্ত উপস্তর বিশিষ্ট হয়। পডজল মৃত্তিকায় কাদার কণা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম এবং হাইড্রাস অক্সাইড জমা হয়ে এই স্তরে Hard Pan-এর সৃষ্টি হয়। 

(iii) B3 -স্তর : রূপান্তরিত স্তর, তবে B, তুলনায় C-এর অনুরূপ।


4) C-স্তর : B-স্তরের নীচে অবস্থিত C-স্তরটি মূলত আবহবিকার গ্রস্ত শিলাচূর্ণ দ্বারা গঠিত। এই স্তরে আদি শিলাচূর্ণ ও খনিজ পদার্থ থাকে।


5) D-স্তর ; এটি C-স্তরের নীচে অবস্থান করে। এটি প্রকৃতপক্ষে আদি শিলাস্তর। এখানে মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় অপরিবর্তিত শিলা অবস্থান করে। এই স্তরটি পিট [Peat] ও জলাভূমির মৃত্তিকায় একটি বিশেষ মৃত্তিকা স্তর হিসাবে L অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।


আরও নোটস পেতে ক্লিক করো ⬇️

মৃত্তিকা সৃষ্টির পদ্ধতি আলোচনা করো 

মৃত্তিকা গঠনের নিয়ন্ত্রকগুলি লেখো



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ