Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মৃত্তিকা সংরক্ষণ (Soil Conservation) কাকে বলে? মৃত্তিকা সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি

মৃত্তিকা সংরক্ষণ (Soil Conservation) 



মৃত্তিকা সংরক্ষণ (Soil Conservation) : চাষের সুবিধার কারণে স্বস্থানে মাটিকে ধরে রাখা, উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলের জোগান B অব্যাহত রাখা, ভৌমজলের ভাণ্ডার ঠিক রাখা, নদী অববাহিকা অঞ্চলে বন্যারোধ প্রভৃতি কারণে মাটির সংরক্ষণ প্রয়োজন। অতএব, বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাটিকে ক্ষয় ও অবনমনের হাত থেকে রক্ষা করা হল মাটি সংরক্ষণ মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. বনভূমি সৃষ্টি [Afforestation] : উদ্ভিদ শিকড় একদিকে যেমন মৃত্তিকাকে ধরে রাখতে পারে, অপরদিকে তেমনি উদ্ভিদ মৃত্তিকার ওপর আচ্ছাদনের কাজ করে বলে বৃষ্টিবিন্দুর আঘাতজনিত গতিশক্তির আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে। এজন্য বনভূমি নষ্ট না করে প্রয়োজন মতো নতুন চারাগাছ লাগিয়ে বনভূমির সৃষ্টি, মৃত্তিকা ক্ষয়কে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

2. ধাপ চাষ [Terrace Cultivation] : পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ কেটে চাষ-আবাদ করা একটি পুরোনো রীতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমির ঢালের আড়াআড়িভাবে ধাপগুলি তৈরি করা হয় এবং ফসলের সারিও আড়াআড়িভাবে লাগানো হয়। ধাপগুলি দেখতে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকার হয়। এক্ষেত্রে জল সরাসরি গড়িয়ে পড়তে পারে না বলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণও কম হয়।

3. ফালি চাষ [Strip Cropping] : পাহাড়ি অঞ্চলে ছোটো ছোটো পাহাড়ি জমিতে পাহাড়ের ঢাল অনুসারে কয়েক সারি শস্যের মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে একখণ্ড জমিতে শস্য চাষ করার নামই ফালি চাষ। যেসব পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমির ঢাল অত্যন্ত বেশি এবং ঢাল সমভাবে একই দিকে বিস্তৃত সেই সব অঞ্চলে এভাবে ফালি চাষ করলে জলের প্রবাহের গতি প্রতিহত হয় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ হয়।

4. উচ্চতা অনুসারে চাষ [Contour farming] : কোনো বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চলে উঁচু-নীচু এলাকার সমান উচ্চতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমঢাল রেখা বলে। ওই রেখা বরাবর 8-9 ফুট উঁচুতে এমনভাবে বাঁধ দেওয়া হয় যাতে দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী ভূমি থেকে জল বের হতে না পারে। এভাবে বাঁধ দেওয়ার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয়কে ব্যাপক আকারে রোধ করা সম্ভব এবং এই পদ্ধতিতে চাষ-আবাদ করাকে উচ্চতা অনুসারে চাষ বলে।

5. গালিয় নিবারণ [Gully Reclamation] : যেসব এলাকার মৃত্তিকা নরম ও আলগা সেইসব এলাকায় মাঝে মাঝে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ঘটলে সেখানে নালি ক্ষয় সর্বাধিক হয়। এই নালিক্ষয় রোধের জন্য যে যে কৌশল গ্রহণ করা হয় তা হল - (i) খাত বরাবর জলপ্রবাহ রোধে বাঁধ নির্মাণ, (ii) খাতের সর্বোচ্চ অঞ্চলে ক্ষয়রোধ করার জন্য মৃত্তিকা প্রাচীর নির্মাণ, (iii) মৃত্তিকা খাতে বিভিন্ন ঝোপঝাড় সৃষ্টি করলে বা নালিক্ষয় অঞ্চলে বাঁধের পাশে চারা গাছ লাগালে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়।

6.নদী তীরের ক্ষয় [Conservation of river bank] : নদীর স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে নদী তীরবর্তী মৃত্তিকা সর্বদা নরম হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাই মৃত্তিকার প্রথনকে দৃঢ় করতে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে মাটির বাঁধ বা কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ করা সম্ভব।

7. শেল্টার বেল্ট [Shelter belt] : বায়ুপ্রবাহের গতিপথের আড়াআড়ি বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ভূমিক্ষয় অনেকটাই কমানো যায়।

8. বন্যা নিয়ন্ত্রণ [Flood Control] : বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও ভূমিক্ষয় কমানো যায়।

9. শস্যাবর্তন [Crop Rotation] : শস্যাবর্তন ও সারিবদ্ধ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন [crop rotation & interculture] মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বজায় রাখতে এবং মৃত্তিকার দৃঢ় গঠনে সাহায্য করে। ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস পায়।

10. পাটজাত পদার্থের ব্যবহার [Use of Jute Product] : মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ, মৃত্তিকার গুণাগুণ বৃদ্ধি এবং উদ্ভিদের আচ্ছাদন সৃষ্টির জন্য পাটজাত ভূমিবাহের ব্যবহার সবচেয়ে সম্ভাবনাপূর্ণ। কারণ- (i) পাট পচনশীল হলেও পাটজাত ভূমিবস্তু ভূমিভাগের ওপর জৈবপদার্থের পরিমাণ বৃষ্টিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। (ii) ভূমিভাগের ওপর পাটের চাদর প্রয়োগ দ্বারা বৃষ্টিবিন্দুর পতনজনিত আঘাত থেকে মাটিকেরাজা করা সম্ভব। (iii) পাটজাত ভূমিব বর্ষার সময় জলের গতিকে কিছু সময়ের জন্য প্রতিরোধ করে মৃত্তিকা ক্ষয়কে কমাতে সাহায্য করে। 

11. পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ : ব্যাপক হারে পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তৃণভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা মৃত্তিকাকে আটকে রাখে। ফলে রয়েছে পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করাতে পারলে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাস করা সম্ভব।

12. ঝুমচাষ নিষিদ্ধকরণ : বনভূমি নষ্ট করে চাষ করলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেড়ে যায়। এজন্য ঝুমচাষ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ