Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation of India)

                ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ 
       (Natural Vegetation of India)


স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation) : যেসব উদ্ভিদ কোনো স্থানের জলবায়ু ও মৃত্তিকাসহ বিভিন্ন স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের প্রভাবহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে জন্মায় ও বৃদ্ধি লাভ করে, তাদের ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation) বলে ।

ভারতের  স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ : বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু মৃত্তিকা এবং বিভিন্ন মানবিক কারণে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও বনভূমিও বৈচিত্র্যপূর্ণ।চ্যাম্পিয়ন ও পুরি ভারতের বনভূমিকে 5টি প্রধান ও 16টি অপ্রধান শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলি হল নিম্নরূপ --


1) ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য (Tropical Evergreen Forest) : 

অবস্থান : ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুরে এবং পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলে এই অরণ্য দেখা যায়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ : ভারতের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 200 সৈমি-এর বেশি ও বার্ষিক গড় উন্নতা 25°>35°C। উয় আর্দ্র প্রাকৃতিক পরিবেশে চিরসবুজ অরণ্য গড়ে উঠেছে।

প্রধান বৃক্ষ : রবার, আয়রনউড, রোজউড, মেহগনি,গর্জন, চাপলাস প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য : (i)  জলের অভাব হয় না বলে সারাবছর গাছগুলি সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে। তাই একে চিরসবুজ অরণ্য বলে। (ii) গাছগুলি অত্যন্ত লম্বা লম্বা 30 – 50 মিটার ও প্রচুর শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়। (iii) গাছের গুঁড়ি অত্যন্ত মোটা হয় এবং কাঠ খুব শক্ত ও ভারী হয়। (iv) এই অরণ্যের তলদেশ লতাগুল্ম, আগাছায় পূর্ণ থাকে, তাই সহজে প্রবেশ করা যায় না। উদ্ভিদের পাতাগুলি অত্যন্ত বড়ো বড়ো হয়। এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের ঘন সমাবেশ লক্ষ করা যায়। (v) এই অরণ্যের মাটি ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে এবং বিষাক্ত কীটপতঙ্গে ভরতি।

ব্যবহার : (i) এই অরণ্যের শক্ত ও মজবুত কাঠ গৃহনির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরি, রেলের স্লিপার তৈরি, যানবাহন তৈরি প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয় । (ii) রবার গাছের রস থেকে রবার তৈরি হয়। (iii) এই অরণ্য থেকে উপজাত দ্রব্য রূপে মধু, মোম, লাক্ষা, ভেষজ দ্রব্য প্রভৃতি পাওয়া যায়।


2) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য (Tropical Deciduous Forest) :

অবস্থান : উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের গাঙ্গেয় সমভূমি, অসমের ব্রহ্মপুত্র সমভূমি, পাঞ্জাব-হরিয়ানার শতদ্রু সমভূমি ও উপদ্বীপীয় মালভূমিতে এই অরণ্য গড়ে উঠেছে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ : বার্ষিক গড় উয়তা 25°C – 30°C এবং বৃষ্টিপাত 100-200 সেমি এই অরণ্যের পক্ষে আদর্শ। 

বৈশিষ্ট্য : (i) এই উদ্ভিদের গাছের পাতা শুষ্ক ঋতুতে জলের অভাবে ঝরে যায়। তাই এই অরণ্যকে পাতাঝরা অরণ্য বা পর্ণমোচী অরণ্য বলে। (ii) গাছগুলির কাঠ শক্ত ও ভারী। (iii) গাছগুলির উচ্চতা 10 - 35 মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। (iv) এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের সমাবেশ লক্ষ করা যায়। (v) গাছগুলি বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়। (vi) বৃক্ষগুলিতে বর্ষবলয় দেখা যায়। 

প্রধান বৃক্ষ : শাল, সেগুন, চন্দন, বাঁশ, আম, জাম, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, শিমুল, মহুয়া, শিরীষ প্রভৃতি।

ব্যবহার : ভারতে এই অরণ্যের ব্যবহারিক গুরুত্ব সর্বাধিক। (i) এই অরণ্যের শাল, সেগুন প্রভৃতি গাছের মূল্যবান কাঠ নানান আসবাবপত্র, যানবাহনের কাঠামো, দরজা-জানালা, রেলওয়ে স্লিপার প্রভৃতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। (ii) শিমুল গাছের নরমকাঠ দেশলাই কাঠি, বাক্স ও খেলনা প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (iii) চন্দন গাছ আসবাবপত্র নির্মাণ, ওষুধ ও সুগন্ধি তৈল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (iv) এ ছাড়া এই অরণ্য থেকে উপজাত দ্রব্য রূপে মোম, মধু, গঁদ, লাক্ষা, ধুনা ও রজন, বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্য, নানাবিধ ফল প্রভৃতি পাওয়া যায়। 


3)পার্বত্য উদ্ভিদ (Mountain Forest) :

অবস্থান : সাধারণত জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, দার্জিলিং, অরুণাচল প্রদেশের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও নীলগিরি ও আনাইমালাই পর্বতে এই অরণ্য দেখা যায়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ : ভারতের 1,500 মিটারের বেশি উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে বার্ষিক গড় উন্নতা 15°C-এর কম এবং গড়ে 50 - 100 সেমি তুষারপাত বা বৃষ্টিপাত দেখা যায় সেখানে এই অরণ্য গড়ে উঠেছে।

প্রধান বৃক্ষ : পাইন, ফার, স্পুস, বার্চ, লার্চ, সিডার, দেবদারু, ওক, পপলার, উইলো প্রভৃতি। 

বৈশিষ্ট্য : (i) গাছগুলি সরলভাবে অনেক ওপর পর্যন্ত উঠে যায়। (ii) গাছগুলিতে যাতে বরফ জমতে না পারে তার জন্য গাছের পাতাগুলি সরু ও ছুঁচোলো হয়। @ গাছগুলি মোচার মতো দেখতে হয়। (ii) গাছগুলির কাঠ নরম ও হালকা এবং কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। (iv) এই অরণ্যে একই প্রজাতির বৃক্ষের একত্র সমাবেশ লক্ষ করা যায়।

ব্যবহার : সরলবর্গীয় অরণ্যের কাঠ (i) আসবাবপত্র, (ii) বোর্ড, ফাইবার বোর্ড, (ii) কাগজের মণ্ড, (iv) খেলাধুলার সরঞ্জাম, (v) যানবাহনের কাঠামো, (vi) দেশলাই, (vii) প্যাকিং বাক্স, (viii) প্লাইউড প্রভৃতি তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।


4) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ (Tropical Thorm Forest) :

অবস্থান : রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিমাংশে দেখা যায়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ : বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 25-50 সেমি এবং উন্নতা 35°C – 40°C, এইরূপ চরমভাবাপন্ন পরিবেশে এই উদ্ভিদ দেখা যায়। 

বৈশিষ্ট্য (i) গাছের মূলগুলি জলসংগ্রহের জন্য মাটির খুব গভীরে প্রবেশ করে। (ii) দেহের জল যাতে পাতা দিয়ে বাষ্পীভূত হতে না পারে তার জন্য উদ্ভিদের পাতাগুলি ছোটো ও কখনো-কখনো কাঁটায় পরিণত হয়। (iii) কাণ্ড রসালো, চ্যাপটা ও মোমের আস্তরণে ঢাকা থাকে। (iv) পাতা সরু ও ছোটো হয়। (v) এই উদ্ভিদগুলি এদিক-ওদিক ছড়িয়ে অবস্থান করে। (vi) উচ্চতা 6 – 10 মিটারের মধ্যে হয়।

প্রধান বৃক্ষ : ফণীমনসা, অ্যাকাসিয়া, বাবলা, খেজুর প্রভৃতি। 


5) ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) :

অবস্থান :  পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গানদীর বদ্বীপ অঞ্চল (সুন্দরবন),ওড়িশার চিল্কা উপহ্রদ ও মহানদীর বদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চল, অন্ধ্রপ্রদেশের কৃয়া ও গোদাবরী নদীর বদ্বীপ এবং কোলেরু ও পুলিকট উপহ্রদ সংলগ্ন অঞ্চল,তামিলনাড়ুর কাবেরী নদীর বদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চল,গুজরাটের কাম্বে উপসাগর এলাকায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য : (i) লবণাক্ত জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসগ্রহণে অসুবিধা হয় বলে এক বিশেষ ধরনের মূল মাটির ওপর বেরিয়ে আসে। এগুলিকে শ্বাসমূল বলা হয়। (ii) নরম কাদামাটিতে জোয়ারভাটার জলপ্রবাহ সহ্য করে যাতে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তার জন্য এই অরণ্যের অধিকাংশ বৃক্ষের গোড়ায় ঠেসমূল  সৃষ্টি হয়। (iii) ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষের কাণ্ড রসালো প্রকৃতির। (iv) এই জাতীয় উদ্ভিদের মূলগুলি খুব দীর্ঘ ও প্রসারিত হয়। (v) এই অরণ্যে সারাবছরই সবুজ পাতা দেখা যায়। (vi) গাছের বীজ কাদাময় জলাভূমিতে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য গাছে থাকা অবস্থায় ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয়, একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। রাইজোফেরা নামক উদ্ভিদে দেখা যায়।

প্রধান বৃক্ষ : পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রধান বৃক্ষগুলি হল – সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হোগলা, হেতাল, পিটুলি, গোলপাতা, ক্যাওড়া, ছাতিম, কেয়া, বনতুলসী প্রভৃতি।

ব্যবহার : (i) কাঠ জ্বালানি রূপে ও গৃহনির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হয়। (ii) এই অরণ্যের পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া হয়। বেড়া ও চাটাই তৈরি করা হয়। (ii) এই অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু, মোম পাওয়া যায়। (iv) সুন্দরী, গরান প্রভৃতি গাছের কাঠ আসবাবপত্র, নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (v) গেঁওয়া, পিটুলি গাছ থেকে দেশলাই -এর কাঠি ও বাক্স তৈরি হয়।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ