Header Ads Widget

Responsive Advertisement

কয়লার শ্রেণীবিভাগ, ব্যবহার, এবং বন্টন (Types, Utilisation & Distribution of Coal)


কয়লা (Coal)


∆কয়লার শ্রেণীবিভাগ : 

[A] কার্বনের ভিত্তিতে কয়লা চার প্রকার। যথা-

1)অ্যানথ্রাসাইট : সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রকৃতির এই কয়লায় কার্বনের পরিমাণ থাকে 80-90%।

বৈশিষ্ট্য :

•এর রং উজ্জ্বল কালো, জালানো হলে ধোঁয়াহীন নীলাভ অগ্নিশিখা বের হয়।

•এটি খুব শক্ত ও উন্নত মানের কয়লা।

•জলীয় বাষ্প ও মালিন্য প্রায় থাকে না।

•বিটুমিনাস অপেক্ষা তাপ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।

•সঞ্চিত কয়লার পরিমাণ মাত্র 5%।


2)বিটুমিনাস : এটি উৎকৃষ্ট কয়লা এতে কার্বনের পরিমাণ 50-80%।

বৈশিষ্ট্য :

•এর রং কালো বা ধূসর কাল জালানো হলে দীর্ঘক্ষন ধরে পীত নীলাভ অগ্নিশিখা বের হয়।

•তাপ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।

•লিগনাইট অপেক্ষা কাঠিন্যতা বেশি।

•জলীয় বাষ্প ও মালিন্য কম থাকে।

•সঞ্চিত কয়লার শ্রেণীর 75%


3.লিগনাইট : এটি নিম্ন মানের কয়লা ,এতে কার্বনের পরিমাণ 35-50%

বৈশিষ্ট্য :

•এই কয়লা গাঢ় বাদামী রঙের তাই একে বাদামি কয়লা বলে।

•জালানো হলে পীত অগ্নিশিখা বের হয়।

•এটি নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির কয়লা।

•তাপ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি ও ধোঁয়া বেশি নির্গত হয়।

•পৃথিবীতে কয়লা লিগনাইট শ্রেণীর 15%


4)পীত : এটি নিকৃষ্ট মানের কয়লা, এতে কার্বনের পরিমাণ থাকে 35% এর কম।

বৈশিষ্ট্য :

•এটি হালকা বাদামী রঙের।

•এর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম পোড়ানো হলে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হয়।

•জলীয় বাষ্প মালিন্য প্রচুর পরিমাণে থাকে।

•এটি নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির।

•পৃথিবীতে সঞ্চিত কয়লার পরিমাণ মাত্র 5% ।


[B] যুগের ভিত্তিতে কয়লা কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা - 

1.গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা : ভারতে উৎপাদিত কয়লার প্রায়ই 95% গন্ডোয়ানা শ্রেণীভূক্ত । এটি সর্বপ্রাচীন এটি কার্বনিফেরাস যুগ 30-35 কোটি বছরের পূর্বের কয়লা । এই যুগের কয়লা অধিকাংশ অ্যানথ্রাসাইট ও বিটুমিনাস শ্রেণীর কয়লা । তাই এটি পরিণত কয়লা । এই কয়লা ভারতে দক্ষিণভাগ ও পূর্ব মধ্যভাগে বিভিন্ন নদী অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থান করে।

2. টারশিয়ারী যুগের কয়লা : ভারতের উৎপাদিত কয়লার মাত্র 1.2 % টারশিয়ারি শ্রেণীভূক্ত । এটি নবীনতম যুগের 6-7 কোটি বছর পূর্বের কয়লা । এটি নিঃকৃষ্ট শ্রেণীর লিগনাইট কয়লা । তাই এটি অপরিণত । ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে।


∆কয়লার ব্যবহার : কয়লা একটি ওজন হ্রাসশীল, গচ্ছিত, ক্ষয়িষ্ণু, অপুনর্ভব সম্পদ। কয়লার ব্যবহার এত ব্যাপক বিবিধ ও বিচিত্র যে এর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা অসম্ভব কঙ্কালের মতো মূল্যবান তাই কয়লাকে Black Diamond বা কালো হিরে বলে।কয়লার প্রধান ব্যবহার গুলি হল - 

1.বৈদ্যুতিক শক্তি : কয়লা পুড়িয়ে তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ভারতে 74% বিদ্যুৎ শক্তি কয়লা থেকে উৎপন্ন ।

2. গৃহস্থালির জ্বালানি : গৃহস্থালি জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক উন্নয়ন ও শীত প্রধান দেশে ঘর গরম রাখার জন্য আগুন জ্বালাতে প্রভৃতি কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয় বর্তমানে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য ও সংরক্ষণের জন্য শহরাঞ্চলে গৃহস্থালি জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার এখন খুবই কম।

3.লৌহ ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল : লৌহ ইস্পাত শিল্পে লৌহ পিণ্ড নিষ্কাশনের জন্য যে কোকের প্রয়োজন হয় তার প্রধান উৎস কয়লা ।ভারতে মোট উত্তোলিত কয়লা 55% লৌহ ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

4.সিমেন্ট শিল্পে : ভারতের উত্তোলিত কয়লার 4% জ্বালানি রূপে সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কয়লার পোড়া ছাই সিমেন্টে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

5.উপজাত দ্রব্য উৎপাদনে : কোকচুল্লিতে কার্বনেশন প্রক্রিয়া ও কয়লার তৈরীর সময় 1600 ধরনের উপজাত দ্রব্য যেমন- আলকাতরা ,কোলগ্যাস ,সিলিন্ডার, বেঞ্জিন, পিচ প্রভৃতি উৎপাদনে এবং নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।

6.রাসায়নিক শিল্পে : কয়লা অধিকাংশ দ্রব্য রাসায়নিক সার শিল্পে কাঁচামাল রূপে ব্যবহৃত হয় যেমন স্যাকারিন থেকে চিনি, মিষ্টি দ্রব্য ; ন্যাপথলিন থেকে কীটনাশক, রং ;ফেনল থেকে কীটনাশক ওষুধ প্রভৃতি উৎপাদিত হয়।

7.কৃষিকাজে ব্যবহার : কয়লা থেকে প্রাপ্ত আমোনিয়া ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থেকে রাসায়নিক সার উৎপাদন করা হয় । কয়লাভিত্তিক সার ও তে জমিতে ব্যবহার করে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করা যায়।

8.অন্যান্য : ইট,টালি ও মাটির পাত্র পোড়াতে এবং গ্রাফাইট পেন্সিলের সিস, ছাপার দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


∆ভারতে কয়লার বণ্টন : 2016 খ্রিস্টাব্দে ভারতে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় 692.4 মিলিয়ন টন এবং বিশ্বে কয়লা উৎপাদনে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। ভারতে প্রধানত দুটি ভূতাত্ত্বিক যুগ—গন্ডোয়ানা ও টার্সিয়ারি যুগের কয়লা পাওয়া যায়।

[A] গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা : ভারতের প্রায় 98.5% কয়লা গন্ডোয়ানা যুগের। এই যুগে কয়লা প্রায় 27-30 কোটি বছরের পুরোনো।ভারতের যেসব অঞ্চলে প্রধানত গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হল—

1.ছত্রিশগড় : ছত্রিশগড় রাজ্য কয়লা উত্তোলনে প্রথম । এ রাজ্যে কয়লা খনি গুলি মহানদী, ব্রাহ্মণী নদী উপত্যকায় অবস্থিত । এখানকার উল্লেখযোগ্য কয়লা খনি গুলি হল -সোনহাট, লখনপুর, সেন্দুরগড় , ঝিলিমিলি, কোরবা,বিশ্রামপুর প্রভৃতি।

2.উড়িষ্যা : ভারতের কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । এ রাজ্যের তালচের, রামপুর প্রভৃতি স্থানে প্রধান কয়লা খনি অঞ্চল রয়েছে।

3.ঝাড়খন্ড : কয়লা উত্তোলনে ভারতের তৃতীয় স্থান অধিকার করে ঝাড়খন্ড। এ রাজ্যের য দামোদর উপত্যকায় অবস্থিত ঝরিয়া, বোকারো, রামগড় রাজমহল, গিরিডি প্রধান কয়লা খনি অঞ্চল। ঝরিয়া ভারতের বৃহত্তম কয়লা খনি অঞ্চল।

4.মধ্যপ্রদেশ : কয়লা উত্তোলনে চতুর্থ স্থান অধিকার করে মধ্যপ্রদেশ । এ রাজ্যের কয়লা খনি অঞ্চল গুলি হল -সোহাগপুর ,উমারিয়া ,পাথরখেরা শিংগ্রাউলী প্রভৃতি।

5.তেলেঙ্গানা : কয়লা উত্তোলনে তেলেঙ্গানা পঞ্চম স্থান অধিকার করে এরা যে প্রধান কয়লা খনি অঞ্চল গুলি হল সিঙ্গারেলি,ইয়েলান্ডু, কামারাম, অন্তরগাঁও, কোঠাগুডেম, তাত্তুর প্রভৃতি।

6.মহারাষ্ট্র : মহারাষ্ট্র কয়লা উত্তোলনে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে মহারাষ্ট্রের কয়লা খনি অঞ্চল গুলি হলনাগপুর, ওয়ার্ধা, বল্লারপুর, কাম্পাতি প্রভৃতি।

7.পশ্চিমবঙ্গ : পশ্চিমবঙ্গ কয়লা উত্তোলনে সপ্তম স্থান অধিকার করে। রানীগঞ্জ পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ এবং ভারতীয় প্রাচীনতম কয়লা খনি। এছাড়াও অন্যান্য কয়লা খনি অঞ্চল গুলি হল আসানসোল, তিনধরিয়া, জয়ন্তী,অন্ডাল, জামুরিয়া, মেজিয়া ,মাকদুমনগর প্রভৃতি।

8. অন্যান্য : এছাড়াও তামিলনাড়ুর নেভেলি, রাজস্থানের পালানো, জম্মু-কাশ্মীরের মাকুর, মেঘালয় চেরাপুঞ্জি ,নাগাল্যান্ডের নাজিরা প্রভৃতি স্থানে কয়লা পাওয়া যায়।


[B] টার্সিয়ারি যুগের কয়লা : টার্সিয়ারি যুগের কয়লা নিকৃষ্ট মানের এবং অধিকাংশই লিগনাইট প্রকৃতির কয়লা। এই যুগের কয়লা প্রায় 5.5-6.5 কোটি বছরের পুরোনো। ভারতে নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলিতে টার্সিয়ারি যুগের কয়লা পাওয়া যায় মেঘালয়ের -চেরাপুঞ্জি, তুরা প্রভৃতি; অসমের নাজিরা, মাকুম, জয়পুর প্রভৃতি ; অরুণাচল প্রদেশের—নামচিক, নামফুক ; তামিলনাড়ুর নেভেলি ও রাজস্থান বিকানীর-এর পালানা ; গুজরাটের ব্রোচ, কচ্ছ ; পশ্চিমবঙ্গের–তিনধারিয়া, বাগরীকোট।জম্মু ও কাশ্মীরের লাড্ডা, কালাকোট প্রভৃতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ