Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভারতের মৃত্তিকা (Soil of India)

        ভারতের মৃত্তিকা (Soil of India)


ভারতের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (ICAR) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকাকে উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের বিস্তার, শিলার গঠন ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে 8 টি প্রধান ভাগে এবং 26 টি উপবিভাগে ভাগ করেছে। ভারতের মৃত্তিকার শ্রেনীবিভাগ গুলি সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হল –


1)পলিমৃত্তিকা (Alluvial Soil): ভারতের প্রায় 15 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ, প্রায় 46% অঞ্চলজুড়েরয়েছে পলিমৃত্তিকা । এই প্রকার মৃত্তিকা রয়েছে সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে।হিমালয় ও উপদ্বীপীয় সংলগ্ন নদীগুলি পাললিক শিলা ক্ষয় করে নীচু অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে পলি মৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে।

বৈশিষ্ট্য : • রং : পলি মৃত্তিকা হালকা ধূসর থেকে ছাই ধূসর রঙের হয়। • গ্রথন : এই মৃত্তিকাতে শতকরা 50-60 ভাগ পলিকণা, 15-20 ভাগ সূক্ষ্ম বালিকণা ও 20-30 ভাগ কাদাকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে পলিকণার ভাগ বেশি থাকে বলে সূক্ষ্ম গ্রথনযুক্ত হয়। • খনিজের উপস্থিতি : এই মৃত্তিকাতে ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিন্তু নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম। • উৎপাদিত শস্য : পলি মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর। এই মৃত্তিকা অধ্যুষিত অঞ্চল ভারতের প্রধান কৃষি বলয়ের অন্তর্গত। যেমন—(i) পঞ্জাব, হরিয়ানা ভারতের গম বলয়; (ii) উত্তরপ্রদেশ ইক্ষু বলয়; (iii) বিহার গম ও পাট বলয়; (iv) পশ্চিমবঙ্গ ধান ও পাট বলয়।

আঞ্চলিক বণ্টন : উত্তর ভারতের পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম অধ্যুষিত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু সমভূমি। ও দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী অববাহিকা ও ↑ উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল।


2) কৃষ্ণ মৃত্তিকা (Black Soil) : পলি মৃত্তিকার পর ভারতের সর্বাধিক বণ্টিত মৃত্তিকার নাম কৃষ্ণ মৃত্তিকা। এটি ভারতের 5-50 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ, 17% স্থান জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। স্বল্প বৃষ্টিপাতের প্রভাবে (50–60 সেমি) লাভাগঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে এই মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়েছে। তেলুগু শব্দ ‘রেগুডা’ থেকে কৃষ্ণ মৃত্তিকার নামকরণ হয়েছে ‘রেগুর’।

বৈশিষ্ট্য: • রং: কৃষ্ণ মৃত্তিকা ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হয়। এই মৃত্তিকার রং কালো হয়। • গ্রথন : এই মৃত্তিকাতে শতকরা 55-60 ভাগ পলিকণা, 15-25 ভাগ কাদাকনা, 10-15 ভাগ সূক্ষ্ম বালিকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে পলিকণা ও কাদাকণার ভাগ বেশি থাকায় অত্যন্ত সূক্ষ্ম গ্ৰথনযুক্ত হয়। • খনিজের উপস্থিতি: লোহা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম কার্বনেট, অ্যালুমিনা, পটাশ এই মৃত্তিকার প্রধান খনিজ। • উৎপাদিত শস্য : এই কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর খুবই উর্বর। কার্পাস চাষের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। তাই এই মাটি কৃষ্ণ, কার্পাস মাটি বা 'Black cotton soil' নামে পরিচিত। কার্পাস ছাড়াও এই মাটিতে মিলেট, তৈলবীজ, তামাক, পিঁয়াজ প্রভৃতির চাষ হয়।  

আঞ্চলিক বণ্টন : দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম অংশ, গুজরাটের দক্ষিণ অংশ,অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর উত্তর অংশে এই মৃত্তিকার অবস্থান দেখা যায়।


3) লোহিত মৃত্তিকা (Red Soil) : ভারতের প্রায় 3-5 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ, প্রায় 11% অঞ্চল জুড়ে রয়েছে লোহিত মুক্তিকা। প্রাচীন কেলাসিত ও রূপান্তরিত গ্র্যানাইট ও নিস শিলায় গভীর আবহবিকারের মাধ্যমে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে। 

বৈশিষ্ট্য : • রং : এই মৃত্তিকাতে ফেরিক অক্সাইড থাকায় এই মৃত্তিকার রং লাল হয়। তবে জল যুক্ত হয়ে কখনো কখনো এর রং হলুদও হয়। • গ্রথন : এই মৃত্তিকাতে শতকরা 40-50 ভাগ পলিকণা, 20-30 ভাগ বালিকণা10-20 ভাগ কাদাকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে পলি ও বালি কণার ভাগ বেশি থাকায় এই মৃত্তিকা মাঝারি সুক্ষ্ম প্রথনযুক্ত হয়। • খনিজের উপস্থিতি এই মৃত্তিকাতে লোহার পরিমাণ বেশি। অনান্য খনিজ উপাদান কম। • উৎপাদিত শস্য : লোহিত মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকায় এই মৃত্তিকা অনুর্বর। তবে এই মাটি মিলেট, বাদাম,ভুট্টা, সয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপাদনে বিশেষ উপযোগী।

আঞ্চলিক বণ্টন : কর্ণাটক, মহারাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বাংশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ অংশ, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া জেলায় এবং উত্তর-পূর্বের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম,ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।


4) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ( Laterite Soil) : ভারতের 250 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ, প্রায় ৪% স্থান জুড়ে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।অধিক বৃষ্টির ফলে আবহবিকারগ্রস্ত উচ্চভূমির প্রাচীন শিলাস্তর থেকে সিলিকা ও অন্যান্য পদার্থ অপসারিত হয় এবং লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থেকে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য : • রং : এই মৃত্তিকায় লৌহ অক্সাইড থাকায় লাল হয়। তবে বাদামি ও হলুদ রঙেরও হতে পারে।  • গ্রথন : এই মুক্তিকাতে শতকরা 40-50 ভাগ বালিকণা, 30-40 ভাগ পলিকণা, 10-20 ভাগ কাদাকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে বালিকণা বেশি থাকায় অত্যন্ত মূল গ্রখনযুক্ত হয়। • খনিজের উপস্থিতি: লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড এই মৃত্তিকার প্রধান খনিজ উপাদান। •  উৎপাদিত শস্য : এই মৃত্তিকা অনুর্বর ফলে জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা, কফি, রবার ও বাদাম চাষ হয়।

আঞ্চলিক বণ্টন : পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চল, রাজমহল পাহাড়, বিন্ধ্য ও সাতপুরা মালভূমি অঞ্চল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট ও মেঘালয়ের কয়েকটি স্থানে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।


5) মরু মৃত্তিকা (Desert Soil) : ভারতের প্রায় 2-85 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ প্রায় 4:50% অঞ্চল জুড়ে এই মৃত্তিকা বিস্তৃত রয়েছে। মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত কম (50 সেমির কম) হওয়ায় যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রভাবে বেলেপাথর জাতীয় শিলাস্তর থেকে মরু মৃক্তিকার সৃষ্টি হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য : • রং : এই মৃত্তিকার রং বাদামি হলুদ ও হালকা হলুদ হয়। • গ্রথন : এই মৃত্তিকাতে শতকরা ৭০ ভাগ ও তার বেশি বালিকণা ও প্রায় 10 ভাগেরও কম কাদাকণা ও পলিকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে বালির ভাগ বেশি থাকায় এই মৃত্তিকা অত্যন্ত স্থূল প্রথনযুক্ত হয়। • খনিজের উপস্থিতি : এই মৃত্তিকাতে ফসফেট ও নাইট্রেট ভালো পরিমাণে রয়েছে ও লবণের ভাগ খুব বেশি। • উৎপাদিত শস্য মরু মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম ও জৈব পদার্থ কম থাকায় অনুর্বর প্রকৃতির। তবে জলসেচের মাধ্যমে গম, যব, মিলেট, তুলো, ডাল ও তৈলবীজ প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়।

আঞ্চলিক বণ্টন: রাজস্থান মরুভূমি ও তৎসংলগ্ন পঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাট অঞ্চল জুড়ে মরু মৃত্তিকা বণ্টিত হয়েছে।  


6) পার্বত্য মৃত্তিকা (Mountain Soil) : ভারতের প্রায় 1-50 লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ, 4:50% লক্ষ অঞ্চল জুড়ে পার্বত্য মৃত্তিকা বিস্তৃতরয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ডালপালা, লতাপাতা পচে সৃষ্ট জৈব পদার্থ শিলার সঙ্গে বিক্রিয়া করে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।তাই এই মৃত্তিকাকে অরণ্য মৃত্তিকা ও বলা হয়। 

বৈশিষ্ট্য :• রং: এই মৃত্তিকা ধূসর বাদামি ও কালচে রঙের হয়। • গ্রথন : এই মৃত্তিকাতে শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি বালিকণা এবং 20 ভাগেরও বেশি কাদাকণা ও পলিকণা থাকে। এই মৃত্তিকাতে বালির ভাগ বেশি থাকায় এই মৃত্তিকাও অত্যন্ত স্থূলগ্ৰথনযুক্ত হয়।• খনিজের উপস্থিতি: এই মৃত্তিকাতে পটাশ ও ফসফরাস ছাড়া অন্যান্য জৈব পদার্থ রয়েছে। • উৎপাদিত শষ্য : অনুর্বর হলেও এই মৃত্তিকাতে চা, কফি, বিভিন্ন মশলা, ফল প্রভৃতি বাগিচা ফসলেরচাষ হয়।

আঞ্চলিক বণ্টন: ভারতের হিমালয় সংলগ্ন জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম, অসম, অরুণাচলপ্রদেশ এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।


7) লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা (Saline and Alkaline Soil) : লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শুষ্ক ও প্রায় শুষ্ক অঞ্চলে এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের বৃহৎ নদীসমূহের দুর্বল নিকাশিযুক্ত নদীর মোহানা অঞ্চলে দেখা যায়। সমগ্র ভারতের প্রায় 70 লক্ষ হেক্টর এলাকায় এই মাটি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য  : • রং : এই মৃত্তিকা হালকা ধূসর রং এর হয় ।• খনিজের উপস্থিতি : এই মৃত্তিকাতে 90 ভাগ সোডিয়াম কার্বনেট লক্ষ্য করা যায়। এই মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের অভাব দেখা যায়। • উৎপাদিত শস্য : লবণের আধিক্যের জন্য এ মাটি কৃষি কার্যের অনুপযুক্ত । তবে এই জাতীয় মৃত্তিকায় নারকেল সুপারি জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।


8) জলাভূমির মৃত্তিকা (Peaty and Marshy Soil) : উম্ন-আর্দ্র অবস্থায় প্রচুর জৈবাংশ সঞ্চয়ের মাধ্যমে জলাভূমির মাটি সৃষ্টি হয়। এরূপ মাটি কেরল, উত্তর বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর উপকূলের কিছু কিছু স্থানে দেখা যায়৷ 

বৈশিষ্ট্য : • রং : মৃত্তিকা কালো রংয়ের হয়। • খনিজের উপস্থিতি : এই মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম লক্ষ্য করা যায়। • উৎপাদিত শস্য : গ্রীষ্মকালে জলাভূমির জল শুকালে প্রধানত ধানের চাষ হয়।

ভারতের মৃত্তিকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ