Header Ads Widget

Responsive Advertisement

কর্মধারার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণীবিভাগ (Functional Classification of Urban Settlement)


কর্মধারার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণীবিভাগ (Functional Classification of Urban Settlement) 


পৌর কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ শব্দ 'Urban' ল্যাটিন শব্দ 'Urbans' থেকে উৎপত্তি ঘটেছে। এটিসম্পূর্ণভাবে গ্রামীণ বসতির বৈশিষ্ট্য বহন করে । সাধারণত পৌর বসতি বলতে এমন এক আধুনিক যেখানে অধিকাংশ মানুষ প্রাথম,দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে যুক্ত থেকে নিজেদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায়।


পৌর বসতি ( Urban Settlement) : যখন কোনো অঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি হয় তখন উন্নত রাস্তাঘাট, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, উন্নত বাসস্থান, জল সরবরাহ , উন্নত জলনিকাশি ব্যবস্থা থাকে তখন সেই আধুনিক ও উন্নত পরিষেবাযুক্ত অঞ্চলকে পোর বসতি বলে।

                R. B. Mandal-এর মতে—যে অঞ্চলের জনবসতি খুব ঘন, যেখানে জীবন ধারণের সুযোগ সুবিধা বেশি, যেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত এবং যেখানকার অধিবাসীর অধিকাংশ কৃষিকার্য ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম করে থাকে, সেই অঞ্চলকে পৌর জনবসতি বলে।

                 ভারতের জনগণনা অনুসারে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জনবসতির সংখ্যা 5000 জনের বেশি হলেও জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 400 জন ও মোট পুরুষ শ্রমিকের 75% অকৃষিকাজে নিযুক্ত থাকলে তবে সেই জনপদকে পৌর জনবসতি বলে।

বৈশিষ্ট্য : (i) পৌরবসতি বা শহর ও নগরে সাধারণত পাকা ঘরবাড়ি গড়ে ওঠে। (ii) পৌরবসতি অঞ্চলে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হয়। (iii) বাড়িগুলির মধ্যে দূরত্ব যথেষ্ট কম থাকে।(iv) শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবার যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটে। (v) অধিবাসীদের আর্থসামাজিক অবস্থা যথেষ্ট উন্নত।


কর্মধারার ভিত্তিতে শহরের শ্রেণীবিভাগ (Functional Classification of Urban Settlement) : বিভিন্ন প্রকার মুখ্য কার্যাবলির ওপর নির্ভর করে, শহরের কর্মভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করা হয়। যথা—

1. প্রশাসনিক শহর : কোনো দেশের বা রাজ্যের রাজধানী, জেলা সদর, মহকুমা সদর, পৌরকেন্দ্র, বিচারালয় প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কাজকর্মকে কেন্দ্র করে যেসব শহর বা নগর গড়ে ওঠে তাদের প্রশাসনিক শহর বলে। উদাহরণ - (i) জাতীয় রাজধানী শহর - নতুন দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন ডি.সি., টোকিও, ক্যানবেরা প্রভৃতি।(ii) রাজ্য রাজধানী শহর - কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই, পাটনা, রাঁচি প্রভৃতি।


2. শিল্প শহর : ছোটো, মাঝারি ও বড়ো প্রভৃতি শিল্পসমূহকে কেন্দ্র করে যেসব পৌরবসতির সৃষ্টি হয় তাদের শিল্প শহর বলে। এই প্রকার শহরের অধিকাংশ লোকই কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন প্রকার শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে। উদাহরণ - দুর্গাপুর, পিটস্বার্গ, জামশেদপুর, আমেদাবাদ, কোয়েম্বাটুর প্রভৃতি।


3. প্রতিরক্ষা শহর : প্রতিরক্ষার দিক থেকে সুবিধাজনক স্থানে যেসব শহর গড়ে ওঠে তাদের প্রতিরক্ষা শহর বলে। প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত উপকরণ নির্মাণের কারখানা যেখানে গড়ে ওঠে, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। - উদাহরণ: ভারতের যোধপুর, চিতোরগড়, বিকানীর, গোয়ালিয়র প্রভৃতি।


4. সাংস্কৃতিক শহর : ধর্ম, শিক্ষা সংস্কৃতি প্রভৃতি কাজ যেসব শহরে সর্বাধিক সম্পন্ন হয় তাদের সাংস্কৃতিক শহর বলে। - উদাহরণ : a) ধর্মীয় শহর : হিন্দু ধর্মীয় শহর : বারাণসী, তিরুপতি, হরিদ্বার ‌। মুসলিম ধর্মীয় শহর : মক্কা, মদিনা, । ইহুদি ধর্মীয় শহর : জেরুজালেম, ।শিখ ধর্মীয় শহর: অমৃতসর, । বৌদ্ধ ধর্মীয় শহর : লাসা (তিব্বত) প্রভৃতি। 

b) শিক্ষা শহর : শান্তিনিকেতন, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হাইডেলবার্গ, আলিগড় প্রভৃতি।


5. সংগ্রাহক শহর : বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ, শোষণ ও বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে যেসব শহর গড়ে ওঠে তাদের সংগ্রাহক শহর বলে। উদাহরণ- a) খনি শহর - রানিগঞ্জ, ধানবাদ, ঝরিয়া। b) কাঠ সংগ্রাহক শহর - ডিমাপুর, কাঠগুদাম, কোটদ্বার। c) মৎস্য সংগ্রাহক শহর - গ্রিবি, হ্যালিফ্যাক্স, কোচি প্রভৃতি।


6. অবসরকালীন শহর : অবসর যাপন, ভ্রমণ, আমোদ-প্রমোদ প্রভৃতি কাজকর্মকে ভিত্তি করে যেসব শহর গড়ে ওঠে সেগুলিকে অবসরকালীন শহর বলে। যেমন - a) শৈল শহর : দার্জিলিং, উটি, সিমলা, মানালি, শ্রীনগর; b) সমুদ্র সৈকত শহর : পুরী, দীঘা, ফুকেট, গোপালপুর, মিয়ামি প্রভৃতি।


7. বন্দর শহর : বন্দর ও তার বিভিন্ন প্রকার কাজকর্মকে ভিত্তি করে কোনো শহর গড়ে উঠলে তাকে বন্দর শহর বলে। উদাহরণ - টোকিও, সিঙ্গাপুর, সাংহাই, হংকং, লন্ডন, কলকাতা প্রভৃতি হল উল্লেখযোগ্য বন্দর শহর। 


8. বাজার শহর : বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরো কেনাবেচার স্থান, গুদামঘর ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কাজকর্মের উপর নির্ভর করে যেসব পৌরবসতির সৃষ্টি হয়, তাদের বাজার শহর বলে। উদাহরণ - লুধিয়ানা, আমেদাবাদ প্রভৃতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ