Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভৌমজল [ Ground water] ভৌমজলস্তরের শ্রেণিবিভাগ (classification of Ground watertable)



ভৌমজলের সংজ্ঞা [Definition of Ground water] :জল পানীয় জল, জলসেচ, ও সাধারণভাবে সর্বপ্রকার জল যা ভূপৃষ্ঠের বা মাটির নীচে ভূ-অভ্যন্তরে পাওয়া যায় বা থাকে তাকে ভৌমজল বলে। ভূ-ত্বকের নীচে অর্থাৎ ভূগর্ভের মাটি, রেগোলিথ কিংবা শিলাছিদ্রে বা রন্ধ্রে যেসব জল অবস্থান করে তাদের ভৌমজল বা ভূ-উপপৃষ্ঠীয় জল বলে।

           ডঃ আর. এম. লোধা-এর মতে, “ভূপৃষ্ঠের নীচে এবং ভূ-অভ্যন্তরে অপ্রবেশ্য পদার্থ দ্বারা গঠিত স্তরের উপর মাটি ও শিলারন্ধ্রের স্থানগুলিকে যে জল অধিকার করে থাকে, তাকে ভৌমজল বলে।”


ভৌমজলের উৎস : উৎপত্তি অনুসারে ভৌমজল নিম্ন প্রকারের হয়-

1. সহজাত বা জন্মগত জল (Connate water) : পাললিক শিলা গঠিত হওয়ার সময় সমুদ্র বা হ্রদের কিছু জল অনেক সময় পাললিক শিলার মধ্যে থেকে যায় এদের সহজাত বা জন্মগত জল বলে। এই জাতীয় ভূগর্ভস্থ সহজাত জলকে আবার জীবাশ্ম জল (fossil water) ও বলা হয়।

2. ম্যাগমাটিক বা উৎস্যন্দ জল জুভেনাইল জল [Magmatic or Juvenile water] : অগ্ন্যুদ্গমের সময় যে খনিজ মিশ্রিত জল ভূঅভ্যন্তর থেকে বের হয় তাকে ম্যাগমাটিক বা উৎস্যন্দ জল বা জুভেনাইল জল বলে।

3. আবহিক জল (Meteoric water) : উৎসের বিচারে এই প্রকার জল দু'ধরনের হয়—(i) বৃষ্টির জল ও (ii) তুষারগলা জল। এই দুপ্রকার জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে মাটির নীচে প্রবেশ করে ভৌমজল ভাণ্ডার সৃষ্টি করে। এই ধরনের জলকে আবহিক বা মিটিওরিক জল বলে।

4. সমুদ্রের জল (Sea water) : সমুদ্রের জল অনেক সময় শিলার মধ্যে দিয়ে সামান্য পরিমাণে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে ভৌম জলের সঞ্চয়ে সাহায্য করে। এর পরিমাণ অতি সামান্য।


ভৌমজলের নিয়ন্ত্রকসমূহ (Controlling Factors of Ground Water): ভৌম জলের প্রধান নিয়ন্ত্রক গুলি হল-

1. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বেশি হলে অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ভূগর্ভে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। বর্ষাকালে সাধারণত ভৌমজলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শুষ্ক ঋতুতে ভৌমজলের পরিমাণ হ্রাস পায়। 

2. প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার উপস্থিতি : যে শিলার মধ্যে দিয়ে জল খুব সহজেই ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তাকে প্রবেশ্য শিলা বলা হয়। যেমন—চুনাপাথর, বেলেপাথর ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, যে শিলার মাধ্যমে জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না, তাকে অপ্রবেশ্য শিলা বলে।যেমন—শেল, স্লেট প্রভৃতি। কোনো স্থানে প্রবেশ্য শিলার নীচে অপ্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে সেক্ষেত্রে জলের নিম্নগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এক্ষেত্রে ওই প্রবেশ্য শিলায় সঞ্চিত জলকে ভৌমজল বলা হয়।

3. মৃত্তিকা বা শিলার প্রবেশ্যতা ও সচ্ছিদ্রতা : ভৌমজল সৃষ্টি, তার পরিমাণ এবং সঞ্চালন শিলার প্রবেশ্যতা ও সচ্ছিদ্রতা দ্বারা যথেষ্ট মাত্রায় প্রভাবিত হয়। যেমন—বেলেপাথর, ডলোমাইট, চুনাপাথর প্রভৃতি প্রবেশ্য শিলায় ভৌমজলের সঞ্চয় অধিক পরিমাণে লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে কাদা মাটির সচ্ছিদ্রতা বেশি হলেও এর প্রবেশ্যতার মাত্রা কম হওয়ায় ভৌমজলের সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়।

4. বাষ্পীভবন  : মরু অঞ্চলে ভৌমজলের পরিমাণ কম থাকে কারণ এখানে অতিরিক্ত উস্লতার কারণে বাষ্পীভবনের হার অধিক। ফলস্বরূপ ভৌমজলের পরিমাণ হ্রাস পায়।

5. ভূমির ঢাল : ভূমিভাগের ঢাল যত বেশি হয় তত দ্রুত নীচে নেমে যায় বলে ভৌমজল সঞ্চয়ে সুযোগ কম পায়। অন্যদিকে ভূমির ঢাল যত কম হয় ভৌমজল ভূপৃষ্ঠে তত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে বলে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ বেশি পায় ও সমৃদ্ধ ভৌমজল সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

6. ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি : গ্রামাঞ্চলে পশুচারণ ও কৃষিকাজের ফলে মাটির কণাগুলি আলগা হয়ে যাওয়ার ফলে জল অধিক মাত্রায় ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে শহরে পাকা রাস্তা ও ঘরবাড়ি মাটির উপরে একটি আচ্ছাদনের ভূমিকা পালন করে, যার ফলে জলের অনুপ্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ভৌমজলের পরিমাণ হ্রাস পায়।


ভূগর্ভস্থ জলস্তর বা ভৌমজলস্তর (Watertable or Ground Watertable) : 

সংজ্ঞা (Definition) :(স্থায়ী সম্পৃক্তস্তরের সঞ্চিত জলরাশির শীর্ষদেশ যোগ করলে যে কাল্পনিক রেখা পাওয়া যায়, সেই রেখাকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বা ভৌমজলস্তর বলে। অর্থাৎ ভৌমজলের উপরিপৃষ্ঠ বা ওপর সীমা বরাবর যে রেখা পাওয়া যায়, তা হল ভৌমজলস্তর বা ভৌমজলতল।


ভৌমজলস্তরের  শ্রেণিবিভাগ (classification of Ground watertable): 

ভূ-অভ্যন্তরে জল ও বায়ুর অবস্থান ও সঞ্চালনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ভৌমজল সঞ্জয়কে দুটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়― (A) অসম্পৃক্ত ও (B) সম্পৃক্ত স্তর।


 [A] ভাডোস স্তর বা অসম্পৃক্ত স্তর (Vados zone) : বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের যেটুকু জল শিলাস্তরের মধ্য দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করে, তা ভূ-ত্বকের উপরিভাগের মৃত্তিকাস্তরকে ভেদ করে সহজেই নীচে নেমে যায়। এই স্তরে জল দাঁড়াতে পারে না, জল ধরে রাখার ক্ষমতাও থাকে না এবং কখনো সম্পৃক্ত হয় না। এই কারণে হ্রদ বা জলাশয় ব্যতীত এই স্তরে জল জমে থাকে না বলে এই স্তরকে অসম্পৃক্ত স্তর বা ভাডোস স্তর বলে।

এই ভাডোস বা অসম্পৃক্ত স্তরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— [a] আর্দ্র মৃত্তিকা স্তর, [b] মধ্যবর্তী ভাডোস স্তর, [c] কৈশিক স্তর।  

[a] আর্দ্র মৃত্তিকা স্তর [Soil moisture zone] : ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে কাছে এবং অসম্পৃক্ত স্তরের সবচেয়ে উপরে যে অগভীর স্তর থেকে গাছের শিকড় মাটির গভীরে যে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে জল সংগ্রহ করে সেই পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে আর্দ্র মৃত্তিকা স্তর বলে।

[b] মধ্যবর্তী ভাডোস স্তর [Intermediate Vadose Zone] : মৃত্তিকা জল ও কৌশিক স্তর  এর মাঝখানের স্তরকে মধ্যবর্তী ভাডোস স্তর বলে।  এটি একটি পরিবর্তনশীল স্তর এবং ভৌমজল তলের ওঠানামার উপর এই স্তরের গভীরতা নির্ভর করে।

[c] কৈশিক স্তর ও কৈশিক জল [Capillary zone and Capillary water] এটি ভাডোস স্তরের সর্বনিম্নস্তর। এখানে মাটির রন্ধ্রগুলি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম [চুলের মতো সরু সরু] নল দ্বারা যুক্ত থাকে। এদের কৈশিক নল বলে। পৃষ্ঠীয় টান বেশি হলে অভিকর্ষীয় টানের প্রভাবকে অতিক্রম করে ভৌমজলপীঠ থেকে জল ওই নল দিয়ে উপরে উঠে এসে মাটির প্রতিটি কণাকে বেষ্টন করে তাদের গায়ে লেগে থাকে। মৃত্তিকাস্থিত এই প্রকার জলকে কৈশিক জল বলে। এখানে মাটির কণাগুলি জল দ্বারা বলয়ের আকারে ঘিরে থাকে এবং যে স্তরে অর্থাৎ সাধারণত ভাডোস স্তরের সর্বনিম্নস্তরে এরূপ ঘটে বলে এই প্রকার স্তরকে কৈশিক স্তর বলে।


[B] ফ্রিয়েটিক স্তর বা সম্পৃক্ত স্তর [Phreatic zone or saturated zone] :  ইংরাজি ‘phreatic'শব্দটি গ্রিক 'phreate’ [ফ্রিয়েট] কথা থেকে এসেছে। ‘Phreate' কথার অর্থ 'Artificial well' বা 'কৃত্ৰিম কৃপ'। মনুষ্যসৃষ্ট কূপ ও নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ যে জল উত্তোলন করা হয় তা ভূগর্ভের সম্পৃক্ত স্তর থেকে পাওয়া যায় বলে এই স্তরকে ফ্রিয়েটিক স্তর বা ফ্রিয়েটিক বলয় বলে। অসম্পৃক্ত স্তরের নীচে শিলার রন্ধ্রগুলি জলে পূর্ণ থাকে বা সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে। এই স্তরকে ফ্রিয়েটিক স্তর বা সম্পৃক্ত স্তর বলে। আর এই সম্পৃক্ত স্তরের জলই হল ভৌমজল।

জলপীঠের স্থায়িত্ব অনুসারে বা সম্পৃক্ত জলস্তরকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়—[a] স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর ও [b] সাময়িক সম্পৃক্ত স্তর।

[a] স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর [Zone of Permanent Saturation] :শুষ্কতম ঋতুতেও ভৌমজলের স্তর যে তলের নীচে নামে না অর্থাৎ মৃত্তিকা ও শিলা স্তরের যে অংশ সারাবছরই সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে সেই স্তরকে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বলে।

[b] সাময়িক সম্পৃক্ত স্তর [Periodic Saturated Zone]: অসম্পৃক্ত স্তরের ঠিক নীচে যে স্তর রয়েছে সেই স্তরে কেবলমাত্র বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের ফলে ভৌমজলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু বৃষ্টিহীন শীত ও গ্রীষ্মকালে নিক এই স্তরে জল থাকে না। এই কারণে এই স্তরটিকে সবিরাম সম্পৃক্ত স্তর বলা পার্শ্ব হয়। অর্থাৎ বর্ষাকালে জলপীঠের উপরে উঠে আসা এবং শুষ্ক ঋতুতে জলপীঠের কার নীচে নেমে যাওয়া এই দুই সীমার মধ্যবর্তী অংশকে সাময়িক বা পরিবর্তনশীল সম্পৃক্ত স্তর বলে।

ভৌমজলস্তর এর শ্রেণীবিভাগ



∆কিভাবে নোটগুলো খুঁজবে (Find Notes)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ