Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গ্রামীণ বসতির প্রকারভেদ (Types of rural settlement)

গ্রামীণ বসতির প্রকারভেদ (Types of rural settlement) 


গ্রামীণ কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Rural' কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'Rus' থেকে যার অর্থ কোনো নগরের বাইরে থাকা দূরবর্তী ভূমিভাগকে বোঝানো হত। তাই মধ্যযুগে কোন নগরের বহির্ভাগে থাকা বসতিগুলি গ্রামীণ বসতির রূপে পরিচিত ছিল।


গ্রামীণ বসতি (Rural Settlement) : যেসব বসতির অধিবাসীগনের 75% বা তারও বেশি বিভিন্ন প্রাথমিক অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে গ্রামীণ বসতি বলে।

    বিখ্যাত মানবীয় ভূগোলবিদ ভিদাল-লা-ব্লাশ এর মতে -"কোনো পরিবারের বৃহৎ সংস্করণই হল গ্রামীণ বসতি।"

বৈশিষ্ট্য : (i) গ্রামীণ এলাকায় বসতিগুলি খোলামেলা জায়গায় গড়ে ওঠে। (ii) গ্রামীণ জনবসতি প্রধানত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। (iii) গ্রামীণ জনবসতি মূলত দ্বিমাত্রিক। অর্থাৎ এখানকার বসতিগুলির অধিকাংশেরই অনুভূমিক বিস্তার (একতলা বাড়ি) লক্ষ্য করা যায়। (iv) গ্রামীণ জনবসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত বা গোষ্ঠীবদ্ধ হতে পারে। (v) গ্রামীণ জনবসতিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হয় না। (vi) গ্রামের মধ্যে অনেকগুলি পাড়া বা ক্ষুদ্র গ্রাম বা হ্যামলেট [hamlet] গড়ে উঠতে দেখা যায়। 


গ্রামীণ বসতির প্রকারভেদ (Types of rural settlement) : অবস্থান ও কেন্দ্রীভবন অনুসারে গ্রামীণ বসতিকে প্রধান তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হল—

1. সংঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি (Compact or Nucleated Settlement) : কোনো নির্দিষ্ট স্থানে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক বিভিন্ন সুবিধার কারণে অনেকগুলি বসতি গড়ে ওঠে, তখন তাকে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য : (i) পরিবারগুলির বসতবাড়ি পরস্পরে সঙ্গে মিলেমিশে অবস্থান করে। (ii) বসতিগুলির মধ্যে ব্যবধান কম থাকে। (iii) এই প্রকার বসতিতে বিভিন্ন প্রকার বর্ণের (Caste) মানুষের একসঙ্গে বসবাস লক্ষ করা যায়। (iv) এখানে গ্রামের লোকেদের প্রয়োজনে পুকুর, কুপ, ধর্মস্থান, দোকান প্রভৃতি তৈরি করা হয়। (v) বাসিন্দাদের নিজেদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধন গড়ে ওঠে।

সংঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি


*গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতির কারণ : গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠার কারণ গুলি হল - 

[A] প্রাকৃতিক কারণ : 

a)ভূপ্রকৃতি : সমতল ভূপ্রকৃতিতে কৃষি কাজের সুযোগ বেশি থাকায় গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে।

b)মৃত্তিকা : উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে কৃষিকাজের যথেষ্ট সুবিধা থাকায় উর্বর মৃত্তিকাস্থ স্থানে বহু কৃষিজীবী ব্যক্তিরা সন্নিবদ্ধ বসতি গড়ে তোলে।

উদাহরণ—গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ।

c)জলবায়ু : অনুকূল জলবায়ু অঞ্চলে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে অনেক সময় বিক্ষিপ্ত জনবসতি গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিতে পরিণত হয়।

d) জল : জীবন ধারণের জন্য ও চাষবাসের জন্য জলের প্রয়োজন। যেসব স্থানে জল পাওয়ার সুবিধা রয়েছে সেখানে জলের উৎসস্থানকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে।

[B] আর্থসামাজিক কারণ : 

a) কুটির শিল্প : অনেক সময় গ্রামীণ বসতি কুটির শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওটে। কুটির শিল্পে কাজের সুবিধার জন্য গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে।

b) নিরাপত্তার অভাব : নিরাপত্তার অভাবেও সংঘবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে। যে সমস্ত অঞ্চলে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা ঘটে, দস্যুরা হানা দেয়, বন্য জন্তুরা আক্রমণ করে সেখানে মানুষেরা নিজেদের রক্ষার তাগিদে বা নিরাপত্তার জন্য গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি গড়ে তোলে।

c) ধর্মীয় উৎসব : গ্রামের কেন্দ্রস্থলে মন্দির, মসজিদ, বড়ো গাছ বা কুয়োকে কেন্দ্র করে উৎসব, অনুষ্ঠান বা অন্যান্য উপলক্ষ্যে পরস্পরের সান্নিধ্যে গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে।

d) শিক্ষাকেন্দ্র : প্রাচীনকালে গুরুকূলীয় শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বর্তমানে বিদ্যালয় শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ বসতি একত্রে গড়ে ওঠে।


2. বিক্ষিপ্ত জনবসতি (Dispersed Settlement) : বন্ধুর ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে, অনুর্বর কৃষিক্ষেত্রে, অরণ্য ও তৃণক্ষেত্রে, প্রতিকূল জলবায়ু অঞ্চলে সেখানে কৃষকেরা স্বল্প নির্দিষ্ট স্থানেই বসতি গড়ে তোলে সেই সমস্ত বসতিকে বিক্ষিপ্ত বা বিচ্ছিন্ন বসতি বলে।

বৈশিষ্ট্য : (i) বসতবাড়িগুলির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান থাকে। (ii) এখানে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুবিধা সাধারণত কম। (iii) এখানে অতি ক্ষুদ্র পরিবারভুক্ত বসতিও দেখা যায় (iv) এই প্রকার বসতিতে নিরাপত্তার অভাব থাকে। (v) অধিবাসীদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাধারণত কম হয়।

বিক্ষিপ্ত জনবসতি


*বিক্ষিপ্ত জনবসতির কারণ : বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠার কারণ গুলি হল- 

[A] প্রাকৃতিক কারণ :

a)ভূ-প্রকৃতি : বন্ধুর ভূমিভাগ, ভূমির ঢাল, পাহাড়ের শীর্ষদেশ বরাবর যেখানে মৃত্তিকা অনুর্বর প্রকৃতির সেই স্থানে এই প্রকার বসতি দেখা যায়।

b) জলবায়ু : রুক্ষ জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে জমি কৃষির অনুপযুক্ত হয় সেখানে বিচ্ছিন্ন জনবসতির সৃষ্টি হয়। 

c) বন্যা : বন্যার প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য গ্রামের বিভিন্ন উঁচু অংশে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওটে। যেমন—গঙ্গা নদীর সমভূমির বসতি।

d) মৃত্তিকা : অনুর্বর প্রকার মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায় 

[B] আর্থসামাজিক কারণ : 

a) শান্তি ও নিরাপত্তা : বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী শান্তিপূর্ণ অবস্থার জন্য মানুষ উন্মুক্ত প্রান্তরে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করে।

b) জাতিভেদ প্রথা : অনেকক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে জাতিভেদ প্রথার কারণে অস্পৃশ্য জাতির

অন্তর্গত মানুষদের গ্রামের প্রান্তভাগে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতে হয়।

c) ভূমির পুনরুদ্ধার : লবণাক্ত ভূমি, জলাভূমি এবং অনুর্বর পতিত জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠে।


3. রৈখিক বা দণ্ডাকার বসতি (Linear Settlement) : যে সমস্ত গ্রামীণ বসতি সরলরেখার ন্যয় যখন কোনো রেলপথ ,সড়কপথ কিংবা কোনো নদীর উভয় প্রান্তে সারিবদ্ধ ভাবে গড়ে ওঠে ,তখন তাকে রৈখিক বা দন্ডাকার বসতি বলে।

বৈশিষ্ট্য : (i) এক্ষেত্রে বসতিগুলি দৈর্ঘ্যের দিক থেকে যথেষ্ট বিস্তৃত হলেও পার্শ্ববর্তী অংশে এর বিস্তার যথেষ্ট কম। (ii) সাধারণত রেললাইন, সড়কপথ, বাঁধ, নদী প্রভৃতি বরাবর এই ধরনের বসতি বিকাশলাভ করে। (iii) এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে বসতিগুলির মধ্যে দূরত্ব বেশি না থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বসতিগুলির মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব থাকে।

রৈখিক বা দন্ডাকার জনবসতি


*রৈখিক বসতির কারণ : রৈখিক জনবসতির কারণগুলি হল -

[A]প্রাকৃতিক কারণ :

 a) নদীর তীর বরাবর : নদী থেকে পানীয় জল, সেচের জল, নদীতে মৎস্য শিকার, পরিবহন প্রভৃতি সুবিধা পাওয়ার কারণে নদীর তীর বরাবর রৈখিক বসতি গড়ে ওঠে। 

b) উপকূল বরাবর : উপকূল বরাবর মৎস্যজীবীদের সারিবদ্ধ বসতি গড়ে তুলতে দেখা যায়। 

c) বালিয়াড়ি: দুটি সমান্তরাল বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অংশে এই প্রকার বসতি গড়ে ওঠে। 

d) পর্বতের পাদদেশ : পর্বতের বা পাহাড়ের পাদদেশ বরাবর এই প্রকার বসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।

[B]অর্থনৈতিক কারণ :

a) সড়ক ও রেললাইন : পরিবহন ও অন্যান্য সুবিধার কারণে সড়কপথ ও রেললাইনের ধার বরাবর এই প্রকার বসতি গড়ে ওঠে।

b) মৎস্য আহরণ : মৎস্য আহরণের সুবিধার জন্য খাল বা নদনদী বরাবর মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের রৈখিক বসতি গড়ে ওঠে।


NOTE : - * all answer write when questions mark 10.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ