Header Ads Widget

Responsive Advertisement

খনিজ তেলের ব্যবহার এবং বন্টন (Utilisation & Distribution of Petroleum)


 খনিজ তেল (Petroleum)


খনি থেকে সংগ্রহ করায় পেট্রোলিয়ামকে খনিজ তেল বলে। পেট্রোলিয়াম শব্দটি মূলত লাতিন শব্দ 'Petra' (যার অর্থ শিলা) এবং 'Oleum' (যার অর্থ তেল)-এর সমন্বয়ে গঠিত । কার্বন ও হাইড্রোজেন এর সংমিশ্রণে তৈরি হওয়ায় খনিজ তেলকে হাইড্রোকার্বনও বলা হয়। আধুনিক সভ্যতায় খনিজ তেলের বহুমুখী ব্যবহার ও গুরুত্বের ভিত্তিতে একে তরল সোনা বা কালো সোনা নামে অভিহিত করা হয়।

∆খনিজ তেলের ব্যবহার : বর্তমানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খনিজ তেলের ভূমিকা অপরিহার্য। কৃষি, শিল্প, পরিবহণ, গৃহস্থালি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে খনিজ তেলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিক সভ্যতার প্রধান ভিত্তি তৈরি করে খনিজ তেল। খনিজ তেলের প্রধান ব্যবহার গুলি হল নিম্নরূপ -

1.পরিবহনে : উৎপাদিত খনিজ তেলের প্রায় অর্ধেক পরিবহন সংক্রান্ত কাজে লাগে । যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক ।উচ্চমানের পেট্রোল বা গ্যাসোলিনের সাহায্যে বিমান চলাচল করে । আবার ট্রাক-বাস ,রেল ইঞ্জিন এবং জাহাজ চালাতে পেট্রোল এবং ডিজেলের ব্যবহৃত হয়।

2.শিল্পে : কারখানার মেশিনপত্র ও যন্ত্রপাতি চালাতে ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। এইসব জ্বালানি তেল ব্যবহার করে শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতির দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। কয়লা ব্যবহারের তুলনায় জ্বালানি তেল ব্যবহার অনেক বেশি সুবিধাজনক।

3.কৃষিতে : কৃষি-যন্ত্রপাতির জ্বালানি হিসেবে ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। ট্রাক্টর, হারভেস্টর, রিপার, পাম্প মেশিন চালাতে এই জ্বালানি তেল অপরিহার্য। কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।

4.পিচ্ছিলকারক পদার্থ : পেট্রোলিয়াম থেকে প্রাপ্ত মোবিল, গ্রিজ প্রভৃতি পিচ্ছিলকারক পদার্থ পরিবহন, কারখানা ও কৃষি যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়। এসব পিচ্ছিলকারী পদার্থ মেশিনপত্র ও যন্ত্রপাতিকে ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং এদের আয়ু বৃদ্ধি করে।

5.তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন : যেসব অঞ্চলে কয়লা পাওয়া যায় না, সেই অঞ্চলে ডিজেল ব্যবহার করে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

6.প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে : দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে ট্যাংক, জাহাজ, বিমান প্রভৃতি চালু রাখতে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুতের ক্ষেত্রে খনিজ তেলের ভূমিকা অপরিহার্ব।

7.অন্যান্য : বর্তমানের খনিজ তেল থেকে যে উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়, তাদের সাহায্যে অজস্র নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি হয় । যথা প্যারাফিন থেকে মোমবাতি, পিচ দ্বারা রাস্তাঘাট নির্মাণ হয় এবং রং, বার্নিশ প্রস্তূতিতে ব্যবহার করা হয়।


∆ভারতের খনিজ তেল উৎপাদক অঞ্চল : স্বাধীনতার আগে কেবল অসমে তেল উত্তোলিত হত। স্বাধীনতার পর ONGC এবং OIL এর প্রচেষ্টায় নতুন নতুন তৈল খনি আবিষ্কৃত হয়েছে । নতুন ও পুরাতন খনি গুলি যেগুলি থেকে বর্তমানে তেল উত্তোলন করা হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হল- 

[A]উত্তর পূর্ব ভারতের তৈল ক্ষেত্র

1.অসম : ভারতের প্রাচীনতম তৈল উত্তোলনকারী রাজ্য হল অসম । অসম ভারতের প্রাচীনতম তেলের খনি । অসমের ডিব্রুগর জেলার ডিগবয়, নাহারকাটিয়া, রুদ্রসাগর তৈল খনি থেকে উত্তোলন করা হয়।

2. অরুণাচল প্রদেশ : OIL এরাজ্যে খারগাও কূপ খনন করে তেল পেয়েছে । এছাড়া এরাজ্যে নিঙপুর অঞ্চলে তেলের খনি রয়েছে।

3. ত্রিপুরা : এ রাজ্যের উল্লেখযোগ্য tu উত্তোলনকারী খনি গুলি হল মামুনভাঙ্গা ,বারামুরা, মানু,আম্পিবাজার ,অমরপুর প্রভৃতি অঞ্চলে।

4. নাগাল্যান্ড : অসাম নাগাল্যান্ড সীমান্তে বোরহুল্লা, চাম্পাগাও, আঙ্গুরী প্রভৃতি অঞ্চলে তৈল খনি রয়েছে।


[B] পশ্চিম ভারতের উপকূলীয় তৈল ক্ষেত্র

1. গুজরাট : এরাজ্যে কাম্বে অববাহিকায় আঙ্কেলশ্বর, কল্লোল ,লুনেজ, কাঁদি , বাকরোল, প্রভৃতি খনি থেকে বর্তমানে প্রচুর তেল উত্তোলন করা হয়।

2. রাজস্থান : রাজস্থান নব আবিস্কৃত তৈল ক্ষেত্র মাঙ্গালা থেকে সর্বাধিক তেল উত্তোলন করা হয়।ভাগ্যম, ঐশ্বর্য ,রাগেশ্বরী, সরস্বতী এখানে উল্লেখযোগ্য তৈল ক্ষেত্র। এছাড়া যোধপুর, জয়সালমীর ,বিকানির প্রভৃতি নব আবিস্কৃত উত্তোলন কেন্দ্র।


[C] পশ্চিম উপকূলের সামুদ্রিক তৈল ক্ষেত্র : আরব সাগরের এই মহীসোপান অঞ্চল বৃহত্তম তেল উত্তোলন ও সঞ্চয় অঞ্চল এখানে বাণিজ্যিকভাবে তিনটি অঞ্চল থেকে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয় এগুলি হল বোম্বে হাই ,বাসিন এবং আলীয়াবেধ ।

1. বোম্বে হাই : ONGC 1974 সালে মুম্বাই শহর থেকে 176km দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে মহীসোপান অঞ্চলে ভাসমান তৈলকূপ খননকারী জাহাজে সম্রাট, এক বিশাল তৈল ক্ষেত্রের সন্ধান পায় । এই অঞ্চলে ভারতে সর্বাধিক তেল সঞ্চিত আছে। সাগরসম্রাট ও সাগরবিকাশ দুটি ভাসমান জাহাজের সাহায্যে কূপ খনন করে তেল উত্তোলন করা হয়। 2015-2016 সালে এই অঞ্চল থেকে সর্বাধিক 1.9 কোটি টন উত্তোলন করা হয়।


[D] দক্ষিণ ভারতের তৈল ক্ষেত্র

1. তামিলনাড়ু : তামিলনাড়ুর কাবেরী নদী অববাহিকা অঞ্চলে ভুবনগিরি, কাবেরীবেসিন ,কেভিলাম্পাল প্রভৃতি অঞ্চলে তৈলকূপ খনন করা হয়েছে।

2. অন্ধ্রপ্রদেশ : অন্ধ্রপ্রদেশে তেল উত্তোলন করা হয় কৃষ্ণা, কাবেরী ও গোদাবরী বদ্বীপ অঞ্চল থেকে।


[E] সম্ভাবনাময় অঞ্চল : ONGC & Geological Survey of India বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার সহায়তায় ভারতে 22টি নদী অববাহিকায় অনুসন্ধান চালিয়ে কতগুলি খনিজ তেল ও গ্যাসের সম্ভাবনাময় অঞ্চল চিহ্নিত করেছেন। এগুলি হল কাম্বে ,রাজস্থান, কাবেরী, কৃষ্ণা, গোদাবরী ,হিমালয়ের পাদদেশ, আন্দামান ,ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ,কেরালা ,কঙ্কন এবং মহানদী উপত্যকায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ