Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভারতের অসম জনসংখ্যা বন্টনের কারন ( Causes of Unequal Population Distribution in India)

ভারতের অসম জনসংখ্যা বন্টনের কারন 


ভারতের জনসংখ্যার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট হল অসম জনবন্টন। বর্তমান ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 121.01 কোটি (2011)। এই বিপুল জনসংখ্যার প্রায় 50% মানুষ সমভূমি অঞ্চলে বসবাস করে। মালভূমি অঞ্চলে জনসংখ্যার বন্টন মাঝারি আবার উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে জনসংখ্যার বন্টন অত্যন্ত কম। ভারতে জনসংখ্যার বন্টন মূলত অনুকূল জলবায়ু, ভূমির ঢাল, শিল্পকেন্দ্রের অবস্থান, ঊর্বর মৃত্তিকা প্রভৃতি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।ভারতের জনবন্টনের কারণগুলিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—

A. প্রাকৃতিক কারণ (Physical Factors)

B. আর্থ-সামাজিক কারণ (Socio-Economic Factors)


A. প্রাকৃতিক কারণ (Physical Factors) 

1. ভূপ্রকৃতি : ভূপ্রকৃতি ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। বন্ধুর পর্বত ও মালভূমির চেয়ে সমতল ভূমিতেই সাধারণত জনবসতি ঘন হয়। কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষে সমভূমিতে চাষাবাদের সুবিধা বেশি হওয়ায় সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রষ্মপুত্রের অববাহিকা অঞ্চলের সমতল, উর্বর ও জলসেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে জনবসতি বেশি। অপরপক্ষে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলের বন্ধুর, অনুর্বর ভূভাগ কৃষিকার্যের অনুপযুক্ত হওয়ায় এইসব স্থানে জনবসতি বেশ কম।

2. জলবায়ু : ভারতীয় উপমহাদেশে জনসংখ্যার বন্টনের উপর জলবায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই কোনো অঞ্চলে উষ্ণতার তারতম্য, বৃষ্টিপাতের পরিমান, আর্দ্রতা, শীতের প্রকোপ প্রভৃতি জলবায়ুগত উপাদান দ্বারা সেখানকার জনবন্টন নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কারণে উপকূলের জলবায়ু সারাবছর মনোরম বলে জনসংখ্যা বেশি ও  উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে অধিক উষ্ণতা ও অল্পবৃষ্টিপাতের জন্য অঞ্চল দুটি জনবিরল।

3. মৃত্তিকা : মৃত্তিকার গুণাগুনের উপর জনসংখ্যার বন্টন অনেকাংশে নির্ভর করে। গাঙ্গেয় সমভূমি, উপকূলীয় সমভূমি, ডেকানট্র্যাপ প্রভৃতি অঞ্চলের উর্বর মৃত্তিকা কৃষিকাজের অনুকূল হওয়ায় অঞ্চলটিতে অধিক জনবসতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে ছোটোনাগপুরের মালমুমিও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, হিমালয় অঞ্চলের পডজল মৃত্তিকা অনুর্বর হওয়ার কারণে জনবসতি কম।

4. নদনদী : উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রক্ষ্মপুত্র এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদী অববাহিকা অঞ্চলে লোকবসতি বেশি। কারণ এইসব নদী থেকে জলসেচ, জলনিকাশ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে পরিবহন, পানীয় জল সরবরাহ, মৎস্য চাষ প্রভৃতির নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায়।

5. স্বাভাবিক উদ্ভিদ : স্বাভাবিক উদ্ভিদ : পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এবং পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে গভীর অরণ্যের জন্য লোকবসতি কম। ভারতে বৃষ্টিপাত জনবণ্টনকে সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ করে, তাই বলা হয়—“The population map of India follows the rainfall map”.

6. খনিজ সম্পদ : ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় সেখানে খনিজ উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কাজের সুযোগ ও শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং জনঘনত্ব বেশী হয়। এই কারণে ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল, আসানসোল, রাণীগঞ্জ, সালেম, বাইলাভিলা, দুর্গাপুর প্রভৃতি অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশী।


B. আর্থ-সামাজিক কারণ (Socio-Economic Factors)

1. কৃষি  : ভারত একটি কৃষিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ। তাই ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে সমতল ভূমি, উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা, নিবিড় পদ্ধতিতে বছরে একাধিক বার চাষ হয় সেখানে জনসংখ্যার বন্টন স্বাভাবিকভাবেই বেশী হয়। এই কারণে ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে জনাধিক্য লক্ষ্য করা যায়।

2. শিল্প : শিল্পের অবস্থান, ভারতে জনসংখ্যা বন্টনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। শিল্পাঞ্চলে মানুষের কাজের সুযোগ বেশি থাকায় লোকজন এসে শিল্পাঞ্চলে বসবাস শুরু করে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায়। এই কারণে হুগলী নদীর তীরবর্তী অঞ্চল, হলদিয়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, গুজরাট, মুম্বাই-পুনে প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলগুলি অত্যাধিক ঘনজনবসতিপূর্ণ হয়।

3. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত সেখানে জনবসতি অত্যন্ত ঘন। যেমন—কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লী, চেন্নাই প্রভৃতি শহরের জনসংখ্যা বেশি।

4. পর্যটন শিল্প : দার্জিলিং, সিমলা, মুসৌরি, পুরী প্রভৃতি স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ হওয়ায় এইসব অঞ্চলে জনবসতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

5. ঐতিহাসিক কারণ : ভারতের দিল্লী, আগ্রা, মহিশূর, মুর্শিদাবাদ, জয়পুর, উদয়পুর, গোড়, নালন্দা প্রভৃতি ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। তাই এই সমস্ত অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশী হয়।

6. ধর্মীয় কারণ : ধর্মীয় আচার আচরণের জন্য ধর্মীয় স্থানগুলি তীর্থযাত্রীদের জন্য জনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই কারণের মথুরা, বৃন্দাবন, পুরী, গয়া, বারাণসী প্রভৃতি তীর্থস্থানগুলিতে বহু পুণ্যার্থীর আগমনের ফলে স্থানগুলি ঘনজনঘনত্ব যুক্ত।

7. শিক্ষাকেন্দ্র : কোনো কোনো স্থানে শিক্ষাকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। এই জন্য ভারতের নবদ্বীপ, শান্তিনিকেতন, বারাণসী প্রভৃতি স্থানগুলিতে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে জনবসতি গড়ে উঠেছে।

8. সরকারী নীতি : বিধাননগর, রাজারহাট (নিউটাউন) কল্যাণী প্রভৃতি উপনগরী স্থাপন, রাজধানী স্থাপন, রাজধানী স্থানান্তর (ভুবনেশ্বর, গান্ধীনগর, দিসপুর) এবং নতুন শিল্পাঞ্চল (হলদিয়া, গুরগাঁও) স্থাপন প্রভৃতি সরকারী নীতির ওইসব অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ