Header Ads Widget

Responsive Advertisement

হিমবাহের ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সমূহ(Erosional & Descriptional landforms of Glacier)

                     হিমবাহ (glacier)


হিমবাহ (Glacier): Glacier' ' কথাটি ল্যাটিন শব্দ 'Glacies' এবং ফরাসি শব্দ 'Glace' থেকে এসেছে, যার অর্থ হল বরফ বা ice। তাই বলা যায় যে, হিমবাহ হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে স্থলভাগের উপর দিয়ে ধীর গতিতে প্রবহমান তুষার ও কঠিন বরফপুঞ্জ।

বৈশিষ্ট্য :

  • হিমবাহ একটি গতিশীল অবস্থা।
  • এটি সাধারণত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থান করে।

উদাহরণ : গঙ্গোত্রী ,সিয়াচেন হিমবাহ।


প্রকারভেদ: হিমবাহের অবস্থান অনুসারে হিমবাহ তিন শ্রেণির হয়। যেমন- (ক) মহাদেশীয় হিমবাহ্, (খ) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ এবং (গ) পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ।


ক) মহাদেশীয় হিমবাহ (continental glacier) : স্থলভাগের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বরফের সঞ্চয়কে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে। অর্থাৎ সুমেরুর নিকট গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বিশাল হিমবাহকে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে। 

বৈশিষ্ট্য: 

  • এরূপ হিমবাহের ক্ষেত্রে বরফ কেন্দ্রস্থল থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।  
  • মহাদেশীয় হিমবাহ কচ্ছপের পিঠের মতো।
  • এগুলি আয়তনে বৃহৎ হয়।
  • বরফের গভীরতা বেশি থাকে।

উদাহরণ : আন্টার্টিকা ল্যাম্বার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ।


খ) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ (Mountain or Valley Glacier): যেসব হিমবাহ পার্বত্য উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাদের পার্বত্য হিমবাহ বলে। উপত্যকায় বেশি অবস্থান বলে একে উপত্যকা হিমবাহও বলে। আল্পস পর্বতে অধিক দেখা যায় বলে একে আল্পীয় হিমবাহও বলে। 

বৈশিষ্ট্য: 

  • উচ্চ পর্বত ও উপত্যকায় অবস্থান।
  • এই হিমবাহের গতি বেশি। 
  • এই হিমবাহ মাঝেমধ্যে হঠাৎ ঝরে বা ধসে পড়ে। একে হিমানী সম্প্রপাত বলে। 

উদাহরণ : আলাস্কার হুবার্ড পৃথিবীর দীর্ঘতম পার্বত্য হিমবাহ।


গ) পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ(Pediment glacier): উপত্যকা হিমবাহ নীচে নামতে নামতে যখন পর্বতের পাদদেশে বিস্তৃত হয়, তখন তাকে পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ বলে। 

বৈশিষ্ট্য: 

  • নিম্নগামী পার্বত্য হিমবাহ পাদদেশে পরস্পর জোড়া লেগে এই হিমবাহের সৃষ্টি হয়। 
  • এরূপ হিমবাহের অগ্রভাগকে লোব বলে।

উদাহরণ : আলাস্কার মালাস্পিনা পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ।


হিমরেখা (snowline): যে-কোনো স্থানেই সারাবছর জমে থাকা বরফের নিম্নতম প্রান্তরেখাকে হিমরেখা বলে। অর্থাৎ কোনো অঞ্চলে যে সীমারেখার ওপরে বরফ জমে থাকে ও যার নীচে বরফ গলে যায় সেই সীমারেখাই হিমরেখা 

শ্রেণিবিভাগ : হিমরেখা দুই প্রকার যথা

  1. স্থায়ী হিমরেখা : যে হিমরেখার ঊর্ধ্বে বরফ কখনও গলে না, তাকে স্থায়ী হিমরেখা বলে।
  2. অস্থায়ী হিমরেখা : ঋতুভেদে উয়তার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে যে হিমরেখার উচ্চতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, সেই হিমরেখাকে অস্থায়ী হিমরেখা বলে।

বৈশিষ্ট্য: 

  • হিমরেখার নীচে হিমবাহ থাকে না। 
  • হিমরেখার উচ্চতা নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে কমতে থাকে।
  • হিমবাহ সর্বদা হিমরেখার ওপরে থাকে। 
  • হিমরেখার অবস্থান ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়।
  • উচ্চতা : হিমরেখা মেরু অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠে, গ্রিনল্যান্ডে 600 মিটার, হিমালয়ে 3800 4800 মিটার ও আপ্পস পার্বত্য অঞ্চলে 2800 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। নিরক্ষীয় অঞ্চলে 5200 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।


হিমশৈল (iceberg): হিমবাহ বা বরফ স্তূপের ভেঙে যাওয়া বৃহদাকার খণ্ড সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় থাকলে, সেই বৃহদাকার ভাসমান বরফ স্তূপকে হিমশৈল বলে। Iceberg একটি জার্মান শব্দ; যার অর্থ Ice = বরক ও berg = পাহাড় বা শৈল। অর্থাৎ সমুদ্রে পাহাড়প্রমাণ ভাসমান হিমবাহই হিমশৈল।

সৃষ্টির কারণ : মূলত মহাদেশীয় হিমবাহ সমুদ্রের ওপর অগ্রসর হলে তার ভারে ও জলের ঊর্ধ্বচাপে সমুদ্রস্রোত ও বায়ুপ্রবাহের বেগে চিড় খেয়ে বেশ কিছুটা অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই বিচ্ছিন্ন অংশই সমুদ্রজলে হিমশৈল রূপে ভাসমান থাকে।

বৈশিষ্ট্য : 

  • হিমশৈলগুলির 10 ভাগের 1 ভাগ জলেরওপরে থাকে এবং বাকি 9 ভাগ জলের নীচে নিমজ্জিত থাকে।  
  • হিমশৈল ভাসতে ভাসতে উষ্ণ স্রোতের সম্মুখীন হলে সমুদ্রে মেঘ-কুয়াশার সৃষ্টি হয়। 
  • হিমশৈলগুলি গলে গেলে তার মধ্যবর্তী নুড়ি, বালি, পাথর জমে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়।

দৃশ্যমানের স্থান : প্রধানত আন্টার্টিকা ও গ্রীনল্যান্ডের উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা যায়।


হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সমূহ


1)ফাটল (crevas) : প্রবাহমান হিমবাহ যে সমস্ত অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সে সমস্ত অঞ্চল মসৃণ হয় । যখন হিমবাহ  অমসৃণ অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন বরফের গায়ে অনেক ফাটল সৃষ্টি হয়, একেই ফাটল বা ক্রেভাস  বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • বৈষম্যমূলক প্রবাহের ফলে হিমবাহে ক্রেভাস এর সৃষ্টি হয়।
  • হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে বিস্তৃত থাকে।
  • ফাটলের মধ্যে অনেক সময় জল জমে ক্রেভাস লেক গঠন করে।

ফাটল

2)বার্গস্রুন্ড (Bergschrund): উচ্চ উপত্যকায় হিমবাহ যাওয়ার সময় হিমবাহ ও পর্বতগাত্রের মধ্যে এক গভীর ফাটল বা ফাঁক সৃষ্টি হয়। একে বার্গশ্রুভ বলে। Bergchrund একটি জার্মানি শব্দ; যার অর্থ 'mountain cleft' বা পার্বত্য চিড় বা ফাটল। 

বৈশিষ্ট্য :

  • এরূপ ফাটল হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে তলদেশের শিলাস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
  • এর গভীরতা অনেক বেশি।
  • এগুলি পর্বতারোহীদের পক্ষে বিপদজনক। 


3)নুনাটকস (Nunataks) : মহাদেশীয় হিমবাহের মধ্য কোনো কোনো স্থানে বিশেষ করে প্রান্তের দিকে, যেখানে বরফের স্তূপ ততটা পুরু নয় সেখানে বরফের ভিতর থেকে পর্বতের শৃঙ্গগুলোকে তুষারমুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এরূপ তলদেশ বরফাবৃত কিন্তু শিখরদেশ বরফমুক্ত পর্বতশৃঙ্গকে এস্কিমো ভাষায় নুনাটাকস (Nunataks) বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

  • মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এর উৎপত্তি হয়।
  • এটি একটি এস্কিমো ভাষা যার অর্থ তুষার মুক্তভূমি।

উদাহরণ : আন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডে এরূপ অনেক নুনাটাকস দেখা যায়। মাউন্ট তাকাহি হল এরূপ একটি নুনাটাকস-এর উদাহরণ।


4)সার্ক বা করি (cirque or Corrie) : উচ্চ পর্বতগাত্রে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হাতলযুক্ত চেয়ার বা চামচের মতো ভূমিরূপকে করি পার্বত্য হিমবাহ বলে। হিমবাহ বিজ্ঞানী শারাপেঁতিয়ার 1923 খ্রিস্টাব্দে প্রথম এরূপ ভূমি রূপকে সিরক্ নামকরণ করেন। করির তিনটি অংশ– (ক) মস্তক দেশে খাড়া দেয়াল, (খ) মধ্যভাগে গর্ত, (গ) নিম্নদিকে ঢিবির মতো উঁচু শিলা স্তূপ। 

বৈশিষ্ট্য:

  • করির পিছনের দেয়াল খুবই খাড়া হয়। 
  • করির উপরিভাগে একটি হিমবাহ অবস্থান করে। 
  • করির মধ্যভাগের গর্তে জল জমে হ্রদ তৈরি হয়। এগুলিকে করি হ্রদ বা টার্ন হ্রদ বলে।

উদাহরণ হিমালয় পর্বতের হিমবাহ অধ্যুষিত আঞ্চলে দেখা যায়।

করি

5)হিমশিরা বা এরিটি (Arate) : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পাশাপাশি দুটি সার্ক সৃষ্টি হলে তাদের মাঝের বিভাজিকাটিও ও সংকীর্ণ হয়ে শৈলশিরার আকারে অবস্থান করে। ছুরির ফলায় ন্যায় তীক্ষ্ণ বা করাতের দাঁতের ন্যায় খাঁজকাটা এই শৈলশিরাকে হিমশিরা বা এরিটি বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  • নদীর জল-বিভাজিকার মতো অ্যারেট দুই করির বিভাজিকা হিসেবে অবস্থান করে।  
  • অ্যারেটের শীর্ষদেশ এবড়োখেবড়ো বা খাঁজকাটা প্রকৃতির হয়।

উদাহরণ : আল্পস  পার্বত্য অঞ্চলে এরূপ বহু এরিটি দেখা যায়।


6)পিরামিড চূড়া (prramidal peak) : পর্বতের বিভিন্ন দিক থেকে তিন-চারটি  সার্ক সৃষ্টি হলে, এদের মধ্যবর্তী খাড়া পর্বতচূড়া টিকে পিরামিড চূড়া বলে। সুইস্ আল্পসে একে হর্ন বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • হিমবাহের ঊর্ধ্ব ভাগে এই ভূমি দেখা যায় ।
  • এটি উৎপাটন ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : ম্যাটারহর্ন, ভিসহর্ন সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত পিরামিড চূড়া। ভারতে হিমালয়ের পিরামিড চূড়া হলো শিবলিঙ্গ, নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ।

পিরামিড চূড়া

7)হিমদ্রোণী বা ‘U’ আকৃতির উপত্যকা (glacial trough): হিমবাহের ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রশস্ত মোটামুটি মসৃণ ও খাড়া ঢালের পার্শ্বদেশবিশিষ্ট যে হিমবাহ উপত্যকা সৃষ্টি হয় তাকে হিমদ্রোণী বলে। হিমদ্রোণী দেখতে ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো, তাই একে ‘U’ আকৃতির উপত্যকাও বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  • হিমবাহ উপত্যকার পার্শ্বদেশ খাড়া হয়।
  • হিমদ্রোণীতে সৃষ্ট হ্রদকে প্যাটারনস্টার রথ হ্রদ বলে।

উদাহরণ : হিমালয়ের রূপকুণ্ড একটি হিমদ্রোণী।

হিমদ্রোণী
8)ঝুলন্ত উপত্যকা (hanging valley) : কোনো মূল হিমবাহে একাধিক উপহিমবাহ এসে পড়ে। মূল হিমবাহের  উপত্যকার গভীরতা উপহিমবাহ অপেক্ষা অনেক বেশি হয়। হিমবাহ অপসারিত হলে উপহিমবাহের উপত্যকাগুলি  মূল হিমবাহের ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে মনে  হয়, একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

  • ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
  • প্রধান হিমবাহ অপেক্ষা উপ হিমবাহ কম গভীর হয়।
  • প্রধান হিমবাহের সাথে উপ হিমবাহ গুলি খাড়া প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে ।

উদাহরণ : বদ্রীনাথের কাছে ঋষিগঙ্গা একটি ঝুলন্ত উপত্যকা।

ঝুলন্ত উপতাকা
9)রসে মতানে (Roche Moutonnee) : হিমবাহের প্রবাহ পথে কোনো কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে ঢিবির প্রতিবাত ঢাল অর্থাৎ, হিমবাহ প্রবাহের দিকটি মসৃণ, চকচকে ও আঁচড়যুক্ত হয়। কিন্তু অনুবাত ঢাল অর্থাৎ, বিপরীত দিকটি উৎপাটন ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অসমতল ভগ্ন ও খাঁজকাটা হয়। এই প্রকার ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  • হিমবাহের প্রবাহের দিক মসৃণ এবং বিপরীত দিক  অমসৃণ হয়।
  • রসেমতানে দৈর্ঘ্য কয়েক মিটার থেকে কয় কিলোমিটার হতে পারে।

উদাহরণ : মধ্য হিমালয় অঞ্চলে রসে মতানে দেখা যায়।

রসেমতানে

10)ক্রাগ ও টেল (crag and tail) হিমবাহের গতিপথে কোনো কঠিন (আগ্নেয় শিলা)শিলাস্তুপের পিছনে কোমল (পাললিক) শিলা থাকলে কঠিন শিলা পিছনের কোমল শিলাকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এরুপ কঠিন শিলাস্তূপকে ক্র্যাগ বলে। পিছনের মৃদু ঢালের ল্যাজের  মতো কোমল শিলাকে টেল বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • ক্রাগ কঠিন শিলা দিয়ে গঠিত এবং টেল নরম শিলা দিয়ে গঠিত।
  • ক্রাগ সাধারণত আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত এবং টেল পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।

উদাহরণ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সিয়াচেন হিমবাহে ক্রাগ ও টেল দেখা যায়।

ক্রাগ ও টেল

11)ফিয়র্ড (Fjord): সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে অনেকসময় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা গভীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়। এই উপত্যাকা গুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু হলে বরফমুক্ত হওয়ার পর সমুদ্রের জলে ভরে যায়। জলমগ্ন এরূপ উপত্যকাকে ফিয়র্ড বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

  • নরওয়েজীয় শব্দ ফিয়র্ড 'Fiord', যার অর্থ উচ্চ ভৃগুর মাঝে সংকীর্ণ অবনমিত অংশ।
  • সমুদ্র জলে নিমজ্জিত হিমদ্রোণী হল ফিয়র্ড।

উদাহরণ – নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।


হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপসমূহ 

1. গ্রাবরেখা( Moraine): উচ্চ পার্বত্য হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ঠ প্রধান ভূমিরূপ হল গ্রাবরেখা। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে ক্ষয়জাত নুড়ি, পাথর, শিলাখণ্ড প্রভৃতি হিমবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে বিভিন্নভাবে জমা হয়ে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে গ্রাবরেখা বলে। 

শ্রেণীবিভাগ : অবস্থান ও প্রকৃতি অনুসারে গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—a)প্রান্ত গ্রাবরেখা, b)ভূমি গ্রাবরেখা, c) পার্শ্ব গ্রাবরেখা, d)মধ্য গ্রাবরেখা, e) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা, f) হিমতল গ্রাবরেখা প্রভৃতি।

উদাহরণ : তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচেন ও লাচুং অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।


2. ড্রামলিন (Drumlin): হিমবাহ প্রভাবিত নিম্ন অঞ্চলে প্রধানত টিল, নুড়ি, প্রস্তরখণ্ড দ্বারা গঠিত ওলটানো নৌকা বা চামচ আকৃতির ঢিল বা ঢিবিকে ড্রামলিন বলে। আকাশ থেকে দেখলে ড্রামলিনগুলিকে ঝুড়িভরতি ডিমের মতো ভূমিরূপ দেখায়। তাই একে 'Basket of eggs topography বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  • একটি আদর্শ ড্রামলিনের দৈর্ঘ্য 1-2 কিমি, প্রস্থ 400-600মি এবং উচ্চতা 15-30মি হয়।
  • ড্রামলিন হিমগ্রাবের অপক্ষেপনে গঠিত হয়।

উদাহরণ : স্কটল্যান্ড ,আয়ারল্যান্ড সহ উত্তর ইউরোপে প্রচুর ড্রামলিন দেখা যায়।


3. আগামুখ(Erratic) : আগামুখ কথাটির অর্থ আগন্তূক বা ভিনদেশী। হিমবাহের ধাক্কায় বড় বড় শিলাখণ্ড সহ দূর দেশ থেকে নেমে এসে এমন স্থানে সঞ্চিত হয় যেখানে ওই ধরনের শিলাস্তরে কাছাকাছি কোথাও দেখা যায় না অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ওই শিলাখণ্ড সম্পূর্ণ আলাদা, তাই তাকে বলা হয় আগামুক বা Erratic ।

বৈশিষ্ট্য : 

  • ল্যাটিন শব্দ Erraticas এর অর্থ চলমান বা Wondering ।
  • আগামুখ এর সাহায্যে হিমবাহের উৎস ও প্রবাহপথ জানা যায়।
  • হিমবাহের দ্বারা বাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশে অঞ্চলে জমা হয়।

উদাহরণ : কাশ্মীরের পহেলগাঁও এ এরূপ আগামুখ দেখা যায়।


4.বোল্ডার ক্লে ও টিল(Boulder Clay and Till) : পর্বতের পাদদেশে এসে হিমবাহ গলে গেলে হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড একত্রে সতি হয়। এদের একত্রে অবক্ষেপ বলে। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অবক্ষেপকে বোল্ডার ক্লে ও টিল বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  • এগুলি পর্বতের পাদদেশে লক্ষ্য করা যায়।
  • এর আরেক নাম টিল বা শক্ত কর্দ।

উদাহরণ : তিস্তা অববাহিকার লাচেন অঞ্চলে দেখা যায়।


হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সমূহ (Glacial- fluvial dispositional landforms) :-



হিমবাহ ছাড়াও হিমবাহ ও জল প্রবাহের দ্বারা কিছু বিশেষ ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গঠিত হয়ে থাকে। এই ভূমিরূপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এসকার, বহিঃবিধৌত সমভূমি, কেটল হ্রদ এবং কেম বা কেমমঞ্চ।


A.বহিঃবিধৌত সমভূমি(Outwash Plain) : হিমবাহ পার্বত্যপ্রবাহ থেকে পর্বত পাদদেশে নেমে এসে গলে গেলে ওই হিমবাহ বাহিত নুড়ি, পাথর, কাদা প্রভৃতি একত্রে সঞ্চিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাক জুড়ে সমভূমির সৃষ্টি করে, এদের বহিঃবিধৌত সমভূমি বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

  1. এই সমভূমিতে চাপা পড়ে থাকা বরফের চাঁই গলে গিয়ে যে ছোটো বড়ো গর্তের সৃষ্টি করে তাকে কেটল বলে। কেটল জলপূর্ণ হলে তাকে কেটল হ্রদ বলে। 
  2. হিমবাহের প্রান্ত গ্রাবরেখার বাইরে এই সমভূমি গড়ে ওঠে।

উদাহরণ : ফিনল্যান্ডে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায়।


B.এসকার(Esker) : অধিকাংশ হিমবাহের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত নদীর খাতে কাদা, বালি, নুড়ি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে দীর্ঘ সংকীর্ণ, আঁকাবাঁকা শৈলশিরা গঠিত হয়, তাকে এসকার বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

  1. বরফ গলে গেলে এসকার দেখা যায়। 
  2. এসকারের দু-দিকেই হ্রদ বা জলাভূমি দেখা যায়। ফলে এসকারগুলি উঁচু রাস্তার মতো কাজ করে।
  3. এসকার 1200 কিমি দীর্ঘ, 3-50 মিটার উঁচু হয়। 

উদাহরণ : ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকারটি পৃথিবী বিখ্যাত।


C.কেম ও কেমমঞ্চ(Kame & kame terrace) : হিমবাহের শেষপ্রান্তে বা প্রান্ত গ্রাবরেখা যখন বরফ গলে যায় তখন হিমবাহের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, কাদা প্রভৃতি স্তূপাকারে জমে যে ত্রিকোণাকার ব দ্বীপের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে ,তাকে কেম বলে। হিমবাহ উপত্যকার দুইপাশে যখন কেম সৃষ্টি হয় তখন তাকে কেমমঞ্চ বলে।

বৈশিষ্ট্য :

  1. কেম এর আকৃতিবিশিষ্ট বদ্বীপ বা পলি শঙ্কুর মত।
  2. হিমবাহের শেষ প্রান্তে বা প্রান্ত গ্রাবরেখা ই কেম লক্ষ্য করা যায়।

উদাহরণ :ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নরফেকের গ্লাভেন উপত্যকায় কেম ও কেমমঞ দেখতে পাওয়া যায়।


D.কেটল ও কেটল হ্রদ(Kette or Kettle Laka): বহিঃবিধৌত সমভূমির ওপর অনেকসময় কোনো ফাটলের মধ্যে গতিহীন বরফের চাই অবক্ষেপ দ্বারা চাপা পড়ে যায়। পরে বরফ গলে গেলে ভূপৃষ্ঠে যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল বলে। এই কেটেলে জল সঞ্চিত হলে , তাকে কেটল হ্রদ বলে।

উদাহরণ : স্কটল্যান্ডের অর্কন দ্বীপে কেটল হ্রদ দেখা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ