Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বায়ু (Aeolian) | বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপসমূহ (Erosional & Dispositional landforms of Aeolian)

                      বায়ু (Aeolian)


           ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপ গঠন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । যদিও ভূপৃষ্ঠের সর্বত্রই বায়ু প্রবাহিত হয় । তথাপি বায়ুপ্রবাহের প্রভাব কেবলমাত্র উদ্ভিদ মরু অঞ্চলে এবং উপকূল অঞ্চলে বিশেষভাবে কার্যকর । মরু অঞ্চলে বায়ু প্রবাহের ফলে গঠিত নানা রকমের ভূমিরূপ লক্ষ্য করা যায়।


বায়ুর কার্য : 

             শুষ্ক মরু অঞ্চলে বায়ু প্রধান প্রাকৃতিক শক্তি। এখানে বায়ুর তিন ধরনের কাজ দেখা যায়। যথা—(ক) ক্ষয়সাধন, (খ) অপসারণ ও (গ) সঞ্চয়

বায়ুর ক্ষয়কার্যের পদ্ধতি :

মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন। ক্ষয়সাধন তিন পদ্ধতিতে ঘটে। এগুলি হলো— 

অবঘর্ষ : মরু অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড, বালুকা বাতাসে বয়ে যায়। বহু বছর ধরে এই প্রবাহ চলতে থাকে। এই প্রস্তরখণ্ডের ঘর্ষণে শিলাস্তর ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় অবঘর্ষ ক্ষয়। এই ক্ষয়েই ভেন্টিফ্যাক্ট, ড্রেইকান্টার, ইয়ারদাঙ, জিউগেন, গৌর প্রভৃতি ভূমিরূপ তৈরি হয়। 

ঘর্ষণ : মরু অঞ্চলে বায়ুর ধাক্কায় বায়ুবাহিত প্রস্তরখণ্ডগুলির নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ফলে বড়ো প্রস্তরখণ্ডগুলি ভেঙে ক্ষুদ্র বালিকণায় পরিণত হয়। এটিই ঘর্ষণ ক্ষয়। 

অপসারণ : বায়ু একস্থান থেকে অন্যস্থানে, দূরে, বালিকণাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। একে অপসারণ বলে। অপসারণে লক্ষ লক্ষ টন বালি উড়ে যায়। এরকম ধূলিঝড়কে সাহারায় বলে সাইমুম এবং থর মরুভূমিতে বলে 'আঁধি'। এরূপ ধূলিঝড়ে মরুভূমি প্রসারিত হয়, কৃষিভূমি আবৃত হয়।


বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপসমূহ (Erosional landforms of Aeolian) :

ভূপৃষ্ঠে বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে । যেমন-

 

1) মরু খাত (Blow out): মরুভূমিতে কোথাও কোথাও হালকা ও সূক্ষ্ম বালুকণা দ্বারা পূর্ণ থাকলে বায়ুপ্রবাহ তারা এরূপ শিথিল অংশ সহজেই ক্ষয় হয় ক্রমাগত এইরূপ ক্ষয় সাধনার ফলে এই অঞ্চল নিচু হয়ে যে গর্তের সৃষ্টি করে তাকে মরুখাত বলে।

বৈশিষ্ট্য :

•বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।

•অপসারণের মাত্রা তীব্রতর হয়ে শেষ পর্যন্ত মরুদ্দ্যান সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের কাতারা পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাত।

মরুখাত

2)মরু পেডমেন্ট : পাশাপাশি বা অনুভূমিকভাবে দুটি শিলাস্তর সমানভাবে ক্ষয় হওয়ার ফলে মরু অঞ্চলে পাকা রাস্তা বা মেঝের  মতো মসৃণ ও সুদীর্ঘ ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় এই ভূমিরূপকে মরু পেডমেন্ট বলে।

বৈশিষ্ট্য :

•এটিকে অধিবাসীরা যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে। 

•এটি খুব শক্ত শিলায় গঠিত হয় ।

•বায়ুর গতিবেগ খুব বেশি থাকলে এই ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে মরু পেডমেন্ট দেখা যায়।


3) ভেন্টিফ্যাক্ট : কোন কোন মরুভূমিতে সারা বছর ধরে নির্দিষ্ট দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় তাহলে সেদিকটা ক্রমাগত ক্ষয়সাধন এর ফলে মরুভূমিতে পড়ে থাকা নুড়ি ,পাথর ,শিলা চূর্ণ একদিকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় মসৃন হয়ে যায় এবং তার বিপরীত দিক অমসৃণ থেকে যায়। ব্রাজিলের মতো একদিক মসৃণ শিলা চূর্ণ গুলোকে ভেন্টিফ্যাক্ট বলে।

বৈশিষ্ট্য :

•মরু অঞ্চলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় এই ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় 

•বায়ুর একমুখী ক্ষয়কার্যের ফলে একদিকে মসৃণ ও অপরদিক অমসৃণ হয়।

উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে এরূপ ভূমিরূপ দেখা যায়।


4)ড্রেকন্টার : যেসব মরুভূমিতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানকার প্রস্তর খন্ড গুলির উপর তিনটি তলের সৃষ্টি হয়ে থাকে, এই প্রকার শিলাখণ্ড গুলোকে ড্রেকন্টার বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য :

•এক্ষেত্রে বায়ু বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয় ।

•শিলার চারিদিক মসৃণ হয়।

উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে দেখা যায়।


5)গৌর(Gour) : মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কোমল শিলাস্তুপ উলম্বভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় তার তলদেশ কোমল শিলা দ্বারা গঠিত হয় বলে বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং উপরের অংশটা কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত বলে উপরে চওড়া ও নিচে শুরু হয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এরূপ ব্যাঙের ছাতার মতো ভূমিরূপকে বলা হয় গৌর।

বৈশিষ্ট্য

•এগুলি দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো হয় বলে এদের Mushroom Rock-ও বলে। 

•এদের উপরের প্রশস্ত অংশ অমসৃণ এবং নীচের সরু অংশ মসৃণ হয়।  

•এরা মরুভূমির মাঝে অবশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে কি প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায়।

গৌর

6)ইয়ারদাং(Yardang) : শুষ্ক ও প্রায় শুষ্ক মরুভূমি এলাকায় ভূপৃষ্ঠে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উলম্বভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলা স্তর গুলো বেশী এবং কঠিন শিলা স্তর গুলো কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ফলে কঠিন শিলা গুলো সারিবদ্ধ ভাবে উচ্চভূমি রূপে প্রায় সমান্তরালে অবস্থান করে । এদের ইয়ারদাং বলে।

বৈশিষ্ট্য

• এদের উচ্চতা 6 মিটার, প্রস্থ 36 মিটার এবং বিস্তার 70 400 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

•ইয়ার্দাঙের মাথাগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছুঁচোলো হলে তাকে নিডিল" বলে।

•ইয়ারদাং ও কঠিন শিলা ও কোমল শিলা উলম্বভাবে অবস্থান করে।

উদাহরণ : সৌদি আরবের মরুভূমির এই ভূমিরূপ দেখা যায়।

ইয়ারদাং

7)জুগ্যান(Zeugen)  : মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার দারন ও ফাটল বরাবর বায়ু ক্ষয় করতে করতে নরম শিলায় পৌঁছালে নরমশিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। এর ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপটা মাথাবিশিষ্ট যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে জুগ্যান বলে । 

বৈশিষ্ট্য

•এরা 3-30 মিটার পর্যন্ত উচ্চ হয়।  

•এদের উপরিভাগ বা মস্তকদেশ চ্যাপটা ও সমতল হয়।

•এক্ষেত্রে কঠিন শিলা অনুভূমিকভাবে থাকে।

উদাহরণ : কালাহারি এবং অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে দেখা যায়।

জুগ্যান

8)ইনসেলবার্জ (Inselberg) : শুষ্ক অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ হল ইনসেলবার্জ । জার্মান শব্দ ইনসেলবার্জ এর অর্থ হলো দীপ শৈল। মরুভূমির মধ্যস্থিত চারিদিকের সমতল ভূমির উপর খাড়ার  পার্শ্বদেশ এবং প্রায় সমতল শিখর বিশিষ্ট অবশিষ্ট পাহাড় গুলিকে বলা হয় ইনসেলবার্জ।

 বৈশিষ্ট্য :

•এইরুপ পাহাড় বেলেপাথর, কঙ্গলোমেরেটস শিলা দ্বারা গঠিত ।

•ইনসেলবার্জ সাধারণত অবশিষ্ট পাহাড় এর ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ ।

•এগুলি মরুভূমির সমতল অংশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত অবস্থান করে।

 উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে এই ভূমিরূপ দেখা যায়।   

ইনসেলবার্জ

 * আবার দীর্ঘদিন ধরে ইনসেলবার্জ গুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোট ছোট টিলার রূপ ধারণ করে । এই ছোট-ছোট অবশিষ্ট পাহাড় গুলোকে  বলে টরস । আবার কোনো কোনো স্থানে একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শিলা চূর্ণ গুলো সঞ্চিত হয়ে টিলার মতো ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায় এদের বলায় ক্যাসেল কেপিজ।


9)মেসা ও বিউট : স্পেনীয় শব্দ মেসার অর্থ হলো টেবিল। মরু অঞ্চলে চারিদিকে সমভূমির মাঝখানে টেবিলের মতো খাড়া উচ্চভূমিকে মেসা বলে।

      ফরাসি শব্দ বিউট এর অর্থ হল ঢিবি । কাটা গাছের গুড়ির সঙ্গে অনেকটা আকৃতির মিল আছে তাই এরূপ আকৃতিবিশিষ্ট অর্থাৎ উপরিভাগ সমতল অথচ চারিপাশ খাড়া ঢাল বিশিষ্ট অপেক্ষা ছোট ঢিপি কে  বলা হয় বিউট ।



                       বায়ুর সঞ্চয় কার্য


    বায়ুবাহিত বালুরাশি মরুভূমির স্থানে স্থানে জমা হয় সাধারণত মরুভূমির মাঝে কোন বৃহৎ শিলাখণ্ড অথবা ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ থাকলে তাকে আশ্রয় করে বালুকার রাশি সঞ্চিত থাকে একে বলা হয় অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় কার্য।

অবক্ষেপণ এর প্রক্রিয়া : তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অবক্ষেপন কার্য সম্পন্ন হয় । যথা- 


1)থিতানো বা অধঃপতন প্রক্রিয়া : ধীরগতিসম্পন্ন বায়ু প্রবাহ দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে আস্তে আস্তে অধঃক্ষেপণ কার্য সম্পন্ন হলে তাকে অধঃপতন প্রক্রিয়া বলে।


2)উপলেপন প্রক্রিয়া : প্রবল বায়ু প্রবাহ দ্বারা লাফাতে লাফাতে বা গরিয়ে গরিয়ে বালুকণা সঞ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় উপলেপন প্রক্রিয়া ।


3)অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া : অসমতল ভূপৃষ্ঠে বালুকণা আটকে গিয়ে যেখানে সঞ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বলে।


বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ :

মরু অঞ্চলে বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত বিভিন্ন ভূমিরূপ গুলি হল- 

1)বালিয়াড়ি(Dune) : মরুভূমির মাঝখানে কোন শিলাখণ্ড বা ক্যাকটাস জাতীয় গাছের প্রতিবন্ধকতা ব্যতীত স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠা বালির স্তুপকে বালিয়াড়ি বলে । ভূবিজ্ঞানী Bagnold এর মতে 'প্রকৃত বালিয়াড়ি হল এমন এক সচ্ছল বা গতিময় বালির স্তুপ যার গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি বা কোনরকম নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতার হাত নেই'।

বৈশিষ্ট্য :

•বালিয়াড়ি সম্পূর্ণরূপে বায়ুপ্রবাহ নির্ভর ।

•বালিয়াড়ি কখনও ভূ প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না।

•বালিয়াড়ি হলো গতিশীল।

উদাহরণ : সাহারা ও কালাহারি তে এই বালিয়াড়ি দেখা যায়।


বালিয়াড়ি শ্রেণীবিভাগ :বালিয়াড়িকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যথা -

A]প্রকৃতি ও গঠন অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ:

Bagnold এর মতে প্রকৃত বালিয়াড়ি দুই ধরনের।যথা- 

a)বার্খান বালিয়াড়ি (Barkhan) : বায়ুর গতির আড়াআড়িভাবে গঠিত অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালির স্তূপকে বাখান বালিয়াড়ি বলে। Barkhan একটি তুর্কি শব্দ 'Barkan' থেকে এসেছে; যার অর্থ sand hill বা বালি পাহাড়। 

বৈশিষ্ট্য : 

•পশ্চাৎদিকে বায়ুর অভিমুখী বিস্তৃত বালির পাখা বা শিরা দেখা যায়। 

•বায়ুপ্রবাহের দিকটি উত্তল ঢালের হয় ঢাল 10°- 15° হয়।

•বায়ুপ্রবাহের বিপরীত দিকের ঢাল অবতল ও খাড়াই (34°) হয়। 

•মধ্যভাগ উঁচু ও দু প্রান্তভাগ নীচু প্রকৃতির হয়।


b)সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি(Seif dune): বায়ুপ্রবাহের দিকের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত বালিয়াড়িকে সিফ বালিয়াড়িবলে। Seif একটি আরবি ভাষার শব্দ; যার অর্থ ' sword' বা তরবারি। আসলে এগুলির শীর্ষদেশ ছুরি বা তরবারির মতো বলে এরূপ নামকরণ হয়েছে। 

বৈশিষ্ট্য: 

•এরূপ বালিয়াড়ির প্রতিবাত দিকটি চওড়া ও গোল হয়।

•দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে করিডর বলে। করিডরে বায়ু সোজাপথে প্রবলভাবে যায়।

•দীর্ঘাকৃতি এই বালিয়াড়ির শিখরদেশে করাতের মতো দেখতে চূড়াপিড়া থাকে।


           এই দুই প্রকার প্রধান বালিয়াড়ি ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের বালিয়াড়ি দেখা যায়। যথা -

c)তির্যক বা অনুপ্রস্থ বালিয়াড়ি (Transverse dune): বায়ুর গতিপথের সঙ্গে তির্যক বা আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বালির শৈলশিরাকে তির্যক বালিয়াড়ি বলে। যে অঞ্চলে বালির পরিমাণ বেশি সেই অঞ্চলে এটি গঠিত হয়। উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।

d)অ্যকলে বালিয়াড়ি(Akle Dune) : অনেক সময় একাধিক বার্খান বালিয়াড়ি পরস্পর যুক্ত হয়ে দীর্ঘ আঁকাবাঁকা সাপের দেহের মত সারিবদাভাবে এগিয়ে পিছিয়ে অবস্থান করে একে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলে ।

e)নক্ষত্র বালিয়াড়ি(Star Dune) : যখন কোনো বালিয়াড়ির মধ্যভাগে একটি বালির শৃঙ্গা দেখা যায় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে বালির শৈলশিরা ছড়িয়ে অবস্থান করে, তখন তাকে নক্ষত্র বালিয়াড়ি বা পিরামিড বালিয়াড়ি বলে।

f)অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি (Parabolic Dune) : বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গর্তগুলির প্রতিবাত ঢাল থেকে বালি অপসারিত হয়ে অনুবাত ঢালে সঞ্চিত হলে দীর্ঘ চামচের মতো গর্ত বা অধিবৃত্তের ন্যায় যে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়, তাকে অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি বলে।

g) দ্রাস বা হোয়েলব্যাক বালিয়াড়ি (Draas or Whaleback Dune) : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত তিমির পৃষ্ঠদেশের ন্যায় আকৃতির বালিয়াড়িকে দ্রাস বা হোয়েলব্যাক বালিয়াড়ি বলে।


B] অবস্থান অনুসারে বালিয়াড়ি :

(i) মস্তক বালিয়াড়ি (Head Dune) : বায়ুর গতিপথে কোনো প্রস্তরখণ্ড বা টিলা অবস্থান করলে তার প্রতিবাত বা বায়ুদিকমুখী অংশে যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।

(ii) পুচ্ছ বালিয়াড়ি (Tail Dune) : প্রস্তরখণ্ড বা টিলার অনুবাত পার্শ্বে অর্থাৎ, মস্তক বালিয়াড়ির বিপরীতে যে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে।

(iii) অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি (Advanced Dune) : মস্তক বালিয়াড়ির কিছুটা আগে ঘূর্ণি বায়ুর জন্য অনেকসময় বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়। একে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে।

(iv) পার্শ্ব বালিয়াড়ি (Lateral Dune) : বায়ু প্রবাহপথে বাধা পাওয়ার পর তার দুপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, তাকে পার্শ্ব বালিয়াড়ি বলে।

(v) পরবর্তী বালিয়াড়ি (Wake dune) : পার্শ্ব বালিয়াড়ির পরবর্তী পর্যায়ে যে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়, তাকে পরবর্তী বালিয়াড়ি বলে।


1) লোয়েস (Loess) : ‘Loess' শব্দটি জার্মান শব্দ ‘Loss’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘সূক্ষ্ম পলি'। বায়ুবাহিত অতি সূক্ষ্ম বালিকণা (0.05 মিলিমিটারের কম ব্যাসযুক্ত) উৎস অঞ্চল থেকে দূরে কোথাও অবক্ষিপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস বলে। লোয়েস প্রবেশ্য ও চুনময় ৷ লোয়েস অকঠিন কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, ক্যালসাইট, ডলোমাইটের সূক্ষ্ম কণা।

উদাহরণ : চিনের উত্তর মধ্যভাগে হোয়াংহো অববাহিকায় পৃথিবীর বৃহত্তম লোয়েস সঞ্চয় দেখা যায়

2)বালির শৈলশিরা (Sand Ridge) বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে বালি সম্মিত হয়ে সৃষ্ট বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপকে বালির শৈলশিরা বলে। 

3)বালির তরঙ্গ (Sand Ripple): ঈষৎ অসমতল ভূপৃষ্ঠে মৃদু বায়ুপ্রবাহের ফলে সম্মান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালুকারাশি অনুবাত ঢালের তুলনায় প্রতিবাত ঢালে অধিক পরিমাণে জমা হয়। এর ফলে বালির স্তর বা বালুকা উর্মি সৃষ্টি হয়।

4)বালির পাত (Sand Sheet) মরুভূমির অভ্যস্ত সমতল অংশে বালির সঞ্চয় ঘটলে পাতলা বালির স্তর তৈরি হয়। একে বালির পাত বা বালির অবক্ষেপ বলে। উদাহরণ – লিবিয়ার বিখ্যাত 'সেলিমা' বালির পাত।



বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপসমুহ


         মরু অঞ্চলে মাঝে মাঝে যে সামান্য বৃষ্টি হয় তা মুশলধারে হয়ে থাকে। এর ফলে যে জলধারার সৃষ্টি হয় তা অত্যন্ত বেগবান ও ক্ষনস্থায়ী হয়। হঠাৎ সৃষ্ট এইরূপ জলপ্রবাহকে ফ্ল্যাশ ফ্লাড (Flash-flood) বলে। এই জলের সঙ্গে মরুভূমির সুক্ষ্ম পলি, বালি মিশে কর্দম প্রবাহের (Mud flow) সৃষ্টি হয়। এই জলধারা ও বায়ুর সম্মিলিত কার্যের ফলে মরু অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। যথা-  


1)ওয়াদি (Wadi) :

অর্থ: ‘ওয়াদি’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ"শুষ্ক উপত্যকা"।

সংজ্ঞা: মরু অঞ্চলের শুষ্ক নদীখাতগুলিকে ওয়াদি বলে।

উৎপত্তি : মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির ফলে যে জলধারার সৃষ্টি হয় তা নদীখাতে পরিণত হয়। প্রবাহপথে জলের দ্রুত অগমন ও অধিক পরিমাণে বাষ্পীভবনের কারণে নদীখাতটি শুকিয়ে যায় এবং ওয়াদি গড়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য : 

•বছরের অধিকাংশ সময় এই নদীখাতগুলি শুষ্ক থাকে।

•নদীখাতগুলির দৈর্ঘ্য খুব বেশি হয় না। 

উদাহরণ: আরব মরুভূমির স্থানে স্থানে ওয়াদি দেখতে পাওয়া যায়।


2)পেডিমেন্ট (Pediment):

অর্থ : G. K. Gilbart 1882 সালে প্রথম পেডিমেন্ট' শব্দটি ব্যবহার করেন। এর অর্থ 'পাহাড়ের পাদদেশ' (পেডি পাদদেশ, মেন্ট পাহাড়)

সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশের প্রস্তরময় ঈষৎ ঢালু, বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে পেডিমেন্ট বলে।। 

উৎপত্তি : বায়ু ও সাময়িক জলধারার মিল কার্যের ফলে মরুভূমির পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল ক্ষয়ীভূত হয়ে পেডিমেন্টের উৎপত্তি হয়।

বৈশিষ্ট্য : 

•পেডিমেন্ট মোটো বড়ো প্রস্তরখন্ড, নুড়ি, মারা গঠিত হয়।

•এর গড় ঢাল 1°-17° পর্যন্ত হয়। 

•পেডিমেন্ট তিন প্রকার। যথা - (a) বাজাদা দ্বারা আবৃত - আবৃত পেডিমেন্ট, (b) একাধিক পেডিমেন্ট মিলিত হয়ে সৃষ্ট - সংযুত্ব পেডিমেন্ট, (c)জলের কার্যের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচ্ছিন্ন- ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট।

উদাহরণ: সাহারা মরুভূমির পাদদেশীয় অঞ্চলে পেডিমেন্ট দেখা যায়।


3)বাজাদা (Bajada) :

অর্থ : বাজাদা (Bajado) একটি স্প্যানিশ শব্দ বাহাদা 'Bahada' থেকে এসেছে; যার অর্থ একাধিক পলল পাখাযুক্ত এক সমভূমি বিশেষ ।

সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশীয় পলল সমভূমিকে বাজাদা বলে।  

উৎপত্তি : বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি ক্ষয়িত পদার্থ বাহিত হয়ে পেডিমেন্টের পরবর্তী অংশে সঞ্চিত হলে বাজাদা গড়ে ওঠে। আবার অনেকের মতে পর্বতের পাদদেশে একাধিক পলল শঙ্কু পরস্পর সংযুক্ত হয়ে রাজাদা গড়ে ওঠে। 

বৈশিষ্ট্য: 

•বাজাদা মূলত সুক্ষ্ম পলি, বালি দ্বারা গঠিত হয়।  

•এর গড় ঢাল 3°-4° । 

•বাজাদা কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। 

উদাহরণ : সাহারা, কালাহারি, আরর ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমির পর্বতের পাদদেশে পেড়িমেন্টের সঙ্গে বাজােদা দেখা যায়।


4)প্লায়া (Playa) :

অর্থ : 'Playa' একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ লবণাক্ত জলের হ্রদ।

সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলের লবণাক্ত হ্রদগুলিকে প্লায়া বলে। প্লায়াকে আফ্রিকায় শটস (Shotts) বলে। 

উৎপত্তি : মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট একাধিক জলধারা কোনো পর্বতবেষ্টিত অবনত ভূমিতে এসে সঞ্চিত হয়ে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি করে। জলের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ ধুয়ে এসে এই হ্রদে জমা হয় বলে এগুলি লবণাক্ত হয়।  

বৈশিষ্ট্য : 

•বছরের অধিকাংশ সময় প্লায়া শুষ্ক থাকে। 

•শুষ্ক অবস্থায় প্লায়ার উপরিভাগে লবণের আবরণ দেখা যায়। একে অ্যালকালি ফ্ল্যাট বলে। 

•অতিরিক্ত লবণাক্ত প্লায়াগুলিকে স্যালিনা বলে। 

উদাহরণ : ভারতের রাজস্থানের সম্বর হ্রদ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ