ঘনীভবন(Condensation)
ঘনীভবন(Condensation) : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু শীতল হয়ে শিশিরাে পৌঁছোলে বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়। জঙ্গীয় বাষ্পের জলকণায় পরিণত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। বায়ুতে অবস্থিত ভাসমান ধূলিকণা, লবণকণা, খনিজকণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং জলকণায় পরিণত হয়।
ঘনীভবন প্রক্রিয়া সাধারণত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর (i) বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা বায়ুতে অবস্থিত করে। যথা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, (ii) শীতলীকরণের মাত্রা ও (ii) বায়ুতে অ্যারোসলের পরিমাণ। উন্নতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা কমে যায়। তাই, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুরে যদি ক্রমাগত শীতল করা যায়, তবে ওই বায়ুতে একটা সময়ে ঘনীভবন শুরু হয়ে যায়।
ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপ(Form of Condensation) : বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ঘনীভূত জলকণায় পরিণত হয়। শিশির, তুহিন, কুয়াশা প্রভৃতি রূপে অবস্থান করে।
1. শিশির (Dew) : শরৎ, হেমন্ত বা শীতের মেঘমুক্ত রাত্রিতে যখন বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলকণায় পরিণত হয়, তখন তাকে শিশির বলে । ঘাস, গাছের পাতা, খড়ের চালের ওপর শিশির জমা হয়। মেঘমুক্ত রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে বলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু তাড়াতাড়ি ঘনীভূত হয়ে বেশি মাত্রায় শিশির সঞ্চিত করে।
2. তুহিন (Frost) : ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন নিম্ন বায়ুস্তরের উয়তা তাপ বিকিরণজনিত কারণে যখন হিমাঙ্কের (0°C) নীচেনেমে যায়, তখন বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প সরাসরি বরফকণায় পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে সাবলিমেশন (Sublimation) বলে। এই বরফকণা ভূমিভাগে শিশিরের ন্যায় জমা হয়, একে তুহিন বলে। তুহিনের উৎপত্তি শিশিরের ন্যায় হলেও তুহিনের ক্ষেত্রে উয়তা হিমাঙ্কের নীচে নামতে হয়। তুহিন বা তুষারকণা ঘাস ও গাছপালার ওপর বরফের আকারে জমা হয়।
3. কুয়াশা (Fog) : দীর্ঘ শীতল রাত, মেঘমুক্ত আকাশ প্রভৃতি কারণে অধিক তাপ বিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ ও সংলগ্ন বায়ুস্তরের উন্নতা শিশিরাঙ্ক পৌঁছোলে বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ঘনীভূত হয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণায় পরিণত হয় এবং ধোঁয়ার মতো ভাসতে থাকে। একে কুয়াশা বলে। বিশেষত শেষরাতের দিকে কুয়াশা দেখা যায়। কুয়াশা দৃশ্যমানতা কমিয়ে দেয়, হালকা কুয়াশা 2-3 কিমি অনুভূমিক দূরত্ব পর্যন্ত দৃষ্টিস্বচ্ছতা কমাতে পারে। আর ভারী, ঘন কুয়াশা কয়েক মিটার পর্যন্ত কমাতে পারে এবং পরিবহণ ও যাতায়াতে বাধার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত কুয়াশা ফসলের ক্ষতি করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রৌদ্রতাপে কুয়াশা বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
4. কুঞ্ঝটিকা বা মিস্ট (Mist) : কখনো কখনো আদ্রপৃষ্ঠে যেমন - জলাভূমি, হ্রদ বা নদী জলপৃষ্ঠে ঘনীভবনের ফলে কুয়াশা গঠিত না হলেও হালকা প্রায় কুয়াশার অনুরূপ অস্বচ্ছ আবরণ গড়ে ওঠে, একে মিস্ট বলে। এর দৃশ্যমানতার দূরত্ব কুয়াশার থেকে বেশি হয়।
5. ধোঁয়াশা (Smog) : কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা মিশে ধোঁয়াশা তৈরি হয় । ধোঁয়াশা গঠনের ফলে দৃশ্যমানতা অনেক কমে যায় এবং এর মধ্যে মিশে থাকা জ্বালানির অবশেষ এবং অন্যান্য রাসায়নিক আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। শহরাঞ্চলে ধোঁয়া বেশি দেখা যায়। এর ফলে গলা, নাক জ্বালা করে, শ্বাসকষ্ট হয়।
6. রাইম (Rime) : উয়তা হিমাঙ্কের নীচে নেমে গেলে কুয়াশার জলকণা তীক্ষ্ণ বস্তুর অগ্রভাগে সঞ্চিত ও শীতল হয়ে শুভ্র স্বচ্ছ তুষার কেলাস গঠিত হয়, একে রাইম বলে।
7. মেঘ (Cloud) : ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে জলীয় বাষ্পপূর্ণ পরিপৃক্ত বায়ু শীতল হয়ে শিশিরাঙ্ক অতিক্রম করলে তা ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা (ব্যাস 0.02 - 0.06 মিমি) বা তুষারকণায় পরিণত হয়। বাতাসের চেয়েও হালকা এই জলকণাগুলি বায়ুস্থিত ধূলিকণাকে আশ্রয় করে আকাশে ভেসে বেড়ায়। পুঞ্জীভূত ভাসমান এই জলকণার সমষ্টিকেই মেঘ বলা হয়।
আবহবিজ্ঞানে মেঘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মেঘ অধঃক্ষেপণ ঘটায়, সৌরবিকিরণ বিচ্ছুরণ ঘটায়, সৌরতাপ শোষণ করে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে প্রেরণ করে।
0 মন্তব্যসমূহ