Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নিয়ত বায়ুপ্রবাহ(Planetary Wind) | আয়ন বায়ু (Trade wind) | পশ্চিমা বায়ু (Westerly wind) | মেরূবায়ু (Polar wind)

      নিয়ত বায়ুপ্রবাহ(Planetary Wind)


সংজ্ঞা(Defination): ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট পথে ও প্রায় একই গতিতে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলে।


শ্রেণিবিভাগ(Classification) : পৃথিবী সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে কয়েকটি স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় আছে। বায়ুচাপ বলয়গুলির মধ্যে সমতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিতভাবে নিয়ত বায়ু প্রবাহিত হয়। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে প্রধানত তিনটি নিয়ত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। সেগুলি হল • আয়ন বায়ু, ও পশ্চিমা বায়ু ও ও মেরু বায়ু।


1) আয়ন বায়ু (Trade wind) :

সংজ্ঞা : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর ধরে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে আয়ন বায়ু (Tropical wind) বলে। 'আয়ন’ শব্দের অর্থ হল ‘পথ'।

বৈশিষ্ট্য : ● বিস্তার : উভয় গোলার্ধে গড়ে 5° – 25° অক্ষরেখার মধ্যে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। • শ্রেণিবিভাগ : আয়ন বায়ু দু-প্রকার - ফেরেলের সূত্র অনুসারে, আয়ন বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে (i) উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে (ii) দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। • গতিবেগ : উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ 16 কিমি/ঘণ্টা এবং দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ 22 - 30 কিমি/ঘণ্টা। • বাণিজ্য বায়ু : প্রাচীনকালে এই বায়ুর প্রবাহপথ ধরে পালতোলা জাহাজে বাণিজ্য চলত বলে একে বাণিজ্য বায়ু বলা হয়। • প্রভাব : (i) আয়ন বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বদিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। (ii) এই বায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় 5টি বড়ো বড়ো মরুভূমির (সাহারা, কালাহারি, আটাকামা, গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান মরুভূমি, সোনেরান) সৃষ্টি হয়েছে।


2) পশ্চিমা বায়ু (Westerly wind) :

সংজ্ঞা : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে যে দুটি বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের পশ্চিমা বায়ু (Westerly wind) বলে।

 বৈশিষ্ট্য : • বিস্তার : উভয় গোলার্ধে 35° 60° অক্ষরেখার মধ্যে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। • শ্রেণিবিভাগ : পশ্চিমা বায়ুও ফেরেলের সুত্রানুসারে, উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু রূপে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। • গতিবেগ : দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের বিস্তার বেশি হওয়ায় ঘর্ষণজনিত বাধার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর বেগ উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর তুলনায় কম হয়। • বিভিন্ন নাম : পশ্চিমা বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য অত্যন্ত দ্রুতবেগে শব্দ করতে করতে বয়ে চলে। একে 40° দক্ষিণ অক্ষাংশে গর্জনশীল চল্লিশা, 50° দক্ষিণ অক্ষাংশে ক্রোধোন্মত্ত পঞ্চাশ এবং 60° দক্ষিণ অক্ষাংশে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট নাম দেওয়া হয়েছে। • প্রভাব : (i) পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে অধিক বৃষ্টিপাত হয়। (ii) এই বায়ুর প্রবাহপথে মহাদেশগুলির মধ্যভাগে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে সুবিস্তৃত তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- উত্তর আমেরিকার প্রেইরি, দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস ইত্যাদি। (iii) পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।


3) মেরূবায়ু (Polar wind) :

 সংজ্ঞা : দুই মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে শীতল ও শুষ্ক বায়ু মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে মেরু বায়ু (Polar wind) বলে।

বৈশিষ্ট্য : ● বিস্তার : উভয় গোলার্ধে 70°-80° অক্ষরেখার মধ্যে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। • শ্রেণিবিভাগ : মেরু বায়ু দু-ধরনের হয়—ফেরেলের সূত্রানুসারে, উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু রূপে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। • গতিবেগ : উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে উন্মুক্ত সমুদ্র বেশি থাকায় মেরু বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি বেগে প্রবাহিত হয়। • প্রকৃতি : এই বায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়। • প্রভাব : (i) অত্যধিক শীতল অঞ্চলে মেরু বায়ুর উৎপত্তি হওয়ায় এই বায়ু যে যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানে উন্নতা হ্রাস পায়। (ii) এই বায়ুর প্রভাবে তুষারপাত ও তুষার ঝড় হয়। (ii) দক্ষিণ গোলার্ধে মেরু বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তে ঝড়ের সৃষ্টি হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ