Header Ads Widget

Responsive Advertisement

একারম্যানের জন সংখ্যা সম্পদ অঞ্চল (Population Resource Region of Ackerman)

 

একারম্যানের জন সংখ্যা সম্পদ অঞ্চল (Population Resource Region of Ackerman)


Population resource region : পৃথিবীতে যত রকমের সম্পদ আছে সর্ব শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো মানবসম্পদ । জনসংখ্যা ও সম্পদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গেলে তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলি হল জনসংখ্যা, সম্পদ ও প্রযুক্তি বিদ্যা এগুলির মধ্যে প্রযুক্তিবিদ্যা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । কারণ প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত দেশ ও অঞ্চলগুলি সম্পদে পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারে যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশ।

               1970খ্রিস্টাব্দে Ackerman জনসংখ্যা ও সম্পদের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করে পৃথিবীকে পাঁচটি জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চলে বিভক্ত করেন। এই জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চল নির্ধারণ করতে গিয়ে তিনি তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এর কথা উল্লেখ করেন এগুলি হল জনসংখ্যা, সম্পদ ও প্রযুক্তি বিদ্যা ।


      একারম্যান সমগ্রপৃথিবীর জনসংখ্যা অঞ্চলকে পাঁচটি জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চলে ভাগ করেছেন। যথা

A. যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরণের অঞ্চল (United State Type Region)

B. ইউরোপীয় ধরনের অঞ্চল (European Type Region)

C. ব্রাজিলীয় ধরেনর অঞ্চল (Brazilian Type Region)

D. মিশরীয় ধরনের অঞ্চল (Egyption Type Region) 

E. মরু ও মেরুদেশীয় ধরনের অঞ্চল (Desert and Arctic Type Region)


A. যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরণের অঞ্চল (United State Type Region) :

সংজ্ঞা (Definition) : যে সমস্ত দেশে সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশ কম এবং যেখানে প্রযুক্তি বিদ্যা বেশ উন্নত এবং সম্পদ উৎপাদন ও ভোগের সুযোগ বেশি থাকে এবং উদ্বৃত্ত ও বেশি থাকে যা সহজে রপ্তানি করা যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা যে সকল দেশে অব্যাহত রয়েছে সেই সকল জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরনের সম্পদ অঞ্চল বলে।

 বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :

i. এই সমস্ত দেশে জনসংখ্যা কম হয়ে থাকে অথবা মধ্যম প্রকৃতির।

ii. এই ধরনে অঞ্চলে প্রযুক্তি বিদ্যা যথেষ্ট উন্নত ফলে সম্পদ উৎপাদন ও ভোগ করার যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। III. সাধারণ ভাবে এই অঞ্চল বা দেশগুলির আয়তন বড় হয়।

iv. এই ধরনের দেশগুলিতে জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদের পরিমান বেশি হয়। v. দেশগুলিতে বর্তমান ও সম্ভাব্য সম্পদের পরিমাণ বেশি।

v. এই সমস্ত দেশে ভোগ বিলাসের জন্য এবং সমাজকে ভালোভাবে সুসজ্জিত করার জন্য কারিগরি জ্ঞানের

যথেষ্ট ব্যবহার ঘটেছে।

vi এই সব দেশগুলিতে উন্নত সংস্কৃতি এবং উন্নত মানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখা যায়।

Vill. এই সমস্ত অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে কারিগরি কর্মী পাওয়া যায়।

ix. এই সমস্ত অঞ্চল শিল্পে যথেষ্ট উন্নত।

x. প্রতিটি ব্যক্তির জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত হয়।

xi. দেশগুলি বড় তাই সম্পদের পরিমান বেশি ও ব্যবহারও অপরিমিত।

উদাহরণ (Example) : যুক্তরাষ্ট্রীয় ধাঁচের দেশগুলির মধ্যে রয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আর্জেন্টিনা, নিউল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া।


B. ইউরোপীয় ধরনের অঞ্চল (European Type Region) :

সংজ্ঞা (Definition) : যে সকল দেশে জনসংখ্যা ও সম্পদের অনুপাত বেশি এবং দেশগুলির আয়তন ও ছোট। প্রযুক্তি বিদ্যায় উন্নত এই সমস্ত দেশসমূহকে ইউরোপীয় ধরনের বলে বিজ্ঞানী একারম্যান চিহ্নিত করেছেন।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :

i. এই সমস্ত দেশ সমূহে প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হয়।

ii. এই সমস্ত দেশগুলিতে কারিগরি জ্ঞান খুবই উন্নত এবং প্রযুক্তি বিদ্যাও যথেষ্ট উন্নত।

 iii. এই সমস্ত দেশে সম্পদের যোগান বেশি না হলেও সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার বিজ্ঞান সম্মত।

v. এই দেশগুলিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হারও যথেষ্ট বেশি হয়।

v. সাধারণত এই ধরনের অন্তর্গত দেশগুলির আয়তন খুব ছোট হয়।

vi. এই সমস্ত দেশগুলি সম্পদের বহনক্ষমতার সঙ্গে জনসংখ্যা ও কারিগরি দক্ষতার একটি সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখে তাই এই ধরনের দেশগুলিকে অভিজাত (Elite Region) বা সীমান্ত অঞ্চল বলে।

vil এই সমস্ত অঞ্চল বা দেশ সমূহ স্থানীয় সম্পদকে পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারে।

Vill. এই ধরনের অঞ্চলগুলি শিল্পোন্নত এবং প্রাপ্ত সম্পদের প্রায় পূর্ণ বিকাশ ঘটে গেছে কিন্তু জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে মানবসম্পদ অনুপাত উচ্চ।

ix যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষের আয় কম ও জীবনস্তর নিম্ন।

x. এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বানিজ্য, প্রযুক্তি বিদ্যা এবং পন্য দ্রব্যের উপর।

xi. এই সমস্ত দেশের শিল্পস্তর ও কর্ম দক্ষতাও উন্নত শ্রেণীর।

উদাহরণ (Example) : ইউরোপীয় ধরনের অর্ন্তভুক্ত দেশগুলি হল পশ্চিম ও দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো যারা গত 200 বছর আগে ব্রাজিলীয় ধরনের অন্তর্গত ছিল।


C. ব্রাজিলীয় ধরনের অঞ্চল (Brazilian Type Region) :

সংজ্ঞা (Definition) : যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা ও সম্পদের অনুপাত কম হয় এবং দেশগুলি হ বিদ্যায় অনুন্নত। সেই সম্পদ অঞ্চলকে ব্রাজীলিয় ধরনের সম্পদ অঞ্চল বলে।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics ) :

i. এই ধরনের দেশগুলিতে জনসংখ্যা ও সম্পদের অনুপাত কম হয়।

ii. এই ধরনের অন্তর্গত দেশগুলি প্রযুক্তিবিদ্যায় অনুন্নত হয়ে থাকে।

iii. আয়তনের দিক থেকে এই সম্পদ অঞ্চলগুলি সাধারণত বড় প্রকৃতির হয়।

iv. অধিক আঞ্চলিক বিস্তারের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পদের প্রাচুর্য আছে কিন্তু ভৌগোলিক, আর্থিক, রাজনৈতিক অবরোধের কারনে অল্প বিকশিত অবস্থায় রয়েছে।

v. উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ভবিষ্যতে হলে এই অঞ্চলে সম্পদ আরোও বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

vi. এই ধরনের দেশগুলিতে সম্পদের পরিমান যথেষ্ট বেশি হয়।

vii. ভূমির বিস্তারের সঙ্গে এখানকার সম্ভাব্য সম্পদের মাত্রাও বেশি।

vili. এই ধরনের সম্পদ অঞ্চল ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ধরনের শ্রেণিতে পৌঁছোতে পারে যদি প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নয়ন ঘটানো হয়।

ix. এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুব ধীর গতিতে ঘটে।

x. এই অঞ্চলের দেশসমূহের জনসংখ্যা যেমন কম তেমনি কৃষি ও শিল্পে অনুন্নত।

xi. ব্রাজীলিয় ধাঁচ হলো ইউরোপীয় ধরনে ও মিশরীয় ধরনে মধ্যেকার এক পরিবর্তনশীল অবস্থা।

উদাহরণ (Example) : ব্রাজিলীয় ধরনের অধিকাংশ দেশসমূহ লাতিন আমেরিকা, ইন্দোচিন এবং ক্রান্তিয় আফ্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই তিন অঞ্চলের অন্তর্গত দেশগুলি হল ব্রাজিল ভেনেজুয়েলা কলম্বিয়া, চিলি, প্যারাগুয়ে, মধ্য আর্জেন্টিনা; ফিলিপাইন, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কিউবা, কুয়েত ইত্যাদি।


D. মিশরীয় ধরনের অঞ্চল (Egyption Type Region) :

সংজ্ঞা (Definition) : যে সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ও সম্পদের অনুপাত অনেক বেশি। অর্থাৎ সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি এবং প্রযুক্তি বিদ্যায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। সেই সমস্ত অঞ্চলকে মিশরীয় ধরনের অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য (Characteristics ) :

i. জনসংখ্যা ও সম্পদের অনুপাত বেশি হয়। অর্থাৎ জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদের পরিমান বেশ কম হয়।

ii. জনঘনত্ব বেশি এবং জনসংখ্যা বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

iii. এই ধরনের অন্তর্গত দেশসমূহ প্রযুক্তি বিদ্যায় মাঝারি ধরনের উন্নত।

iv. এই ধরনের দেশগুলিতে অনেক সময় প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান বেশি থাকলেও অত্যাধিক জনসংখ্যার কারণে তার সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

v. এই সমস্ত দেশে আমদানি নির্ভর বাণিজ্য অর্থনীতি গড়ে ওঠে।

vi. এই পর্যায়ের অন্তর্গত দেশগুলিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হারও বেশ কম। 

vil এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ প্রাথমিক কার্যাবলী অর্থাৎ কৃষির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

viii. কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ কম। তাই উৎপাদনও কম। বেশিরভাগ কৃষি জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। এখানকার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তিই হলো কৃষি

ix. শিল্পে এই অঞ্চল অল্প উন্নত এবং অনগ্রসর অবস্থায় রয়েছে।

x. এই সমস্ত দেশের বেশিরভাগ বসতি এলাকাগুলো উর্বর পলল মৃত্তিকায় সমৃদ্ধ। 

xi. জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন।

xii. এই সকল দেশগুলিতে মৃত্যু হারের তুলনায় জন্মহার বেশি এবং দ্রুত তাই জনসংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

xiii. এই ধরনের অন্তর্গত দেশগুলিতে মূলধন ও সীমাবদ্ধ এবং সীমিত।

xiv. দারিদ্রতা, বেকারত্ব, অপরাধপ্রবনতা, অনুন্নয়ন প্রভৃতি এই অঞ্চলের মানুষের উপর প্রচুর প্রভাব ফেলে।

 xv. নীবিড় কৃষি ও নিম্ন মানের জীবন যাপন, প্রণালী এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

 উদাহরণ (Example) : পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই এই ধরনের দেশ খুঁজে পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রায় সবদেশই এক সময় এই অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। যেমন এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি। ইউরোপের সিলিসি, গ্রিস, আফ্রিকার মিশর, টিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া ইত্যাদি এই ধরনের সম্পদ অঞ্চলের অন্তর্গত।


E. মরু ও মেরুদেশীয় ধরনের অঞ্চল (Desert and Arctic Type Region) :

সংজ্ঞা (Definition) : যে অঞ্চলের প্রযুক্তিবিদ্যা খুবই অনুন্নতমানের, মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খুবই কম, জনসংখ্যা বিরল প্রকৃতির, খুবই স্বল্প পরিমানে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয় সেই সমস্ত অঞ্চলকে অর্থনীতিবিদ একারম্যান মরু ও মেরুদেশীয় ধরনের অঞ্চল বলেছেন।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics ) :

i. এই ধরনের অঞ্চলে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত শুষ্কতা যা চরম ঠান্ডা প্রকৃতির।

ii. এই অঞ্চলে মানুষের বাঁচর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ খুবই কম।

iii. যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব প্রতিকূল জলবায়ু প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতি কারণে এই অঞ্চলগুলি প্রযুক্তি

iv. এই ধরনের অঞ্চলে জনসংখ্যা বিরল প্রকৃতির হয়ে থাকে।

v. এই অঞ্চলে যাযাবর শ্রেণীদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন—এস্কিমো, বুশম্যান, নিগ্রো ইত্যাদি।

vi. এই অঞ্চলে খুব স্বল্প পরিমানে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদিত হয়।

vii. এই ধরনের অন্তর্গত অঞ্চলে জমির কার্যকারিতা খুবই কম হয়।

vill. এই সম্পদ অঞ্চলে প্রাপ্ত সম্পদের পরিমান যথেষ্ট কম বা পাওয়া গেলেও তা আহরন করা অত্যন্ত কঠিন বা অসম্ভব। ফলে সম্পদ উন্নয়ন বা ভোগ তেমন হয় না।

ix. প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব, জনশূন্যতা, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা প্রভৃতি কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান নিম্নপ্রকৃতির।

x. এই অঞ্চল শিল্প ব্যবস্থায় বিশেষ উন্নত নয়।

 উদাহরণ (Example) : এই ধরনের অন্তর্গত দেশগুলি হল আফ্রিকার সাহারা ও কালাহারি, এশিয়ার পর ওগোবি মরুভূমি, আন্টাটিকা, গ্রিনল্যান্ড, উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশ, মধ্য অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি।


∆কিভাবে নোটগুলো খুঁজবে (Find Notes)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ