Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত [Tropical Cyclone] | ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি বা জীবনচক্র [Origin of Tropical Cyclone]

   ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত [Tropical Cyclone] 


ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত [Tropical Cyclone] :

সংজ্ঞা [Definition] : পৃথিবীপৃষ্ঠের ঠিক মধ্যভাগে অর্থাৎ উভয় ক্রান্তিরেখার (কর্কট এবং মকর) মাঝখানে যে সব ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তারা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত [Tropical Cyclone] নামে পরিচিত। অর্থাৎ পৃথিবীর কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অংশে যেসব ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তাদের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে।

অবস্থান [Location] : উভয় গোলার্ধের 5° থেকে 25° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অংশে পৃথিবীর অধিকাংশ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে। সব ধরনের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ক্রান্তীয় সমুদ্রের ওপর উৎপন্ন হয়।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য [Characteristics of Tropical Cyclone]] : (i) ক্রান্তীয় অঞ্চলের কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে নির্দিষ্ট ঋতুতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। (ii) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি নিয়মিতভাবে ঘটে। (iii) উন্ন সমুদ্রপৃষ্ঠে [উন্নতা 27° সেন্টিগ্রেড] ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতগুলি উৎপত্তি লাভ করে।(iv) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের [deep depression] উত্তর ত সৃষ্টি হয়। এখানে বায়ুর চাপ থাকে 45 মিলিবার পর্যন্ত নেমে যায় [অর্থাৎ বায়ুর চাপ থাকে 950 মিলিবারের নীচে]। (v) এই সময় চারদিক থেকে বায়ু ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের জুলাই দিকে প্রবল বেগে ধাবিত হয়। (vi) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উচ্চতা প্রায় 9.6 কিলোমিটার জুন-জুল হয়, ব্যাস 16,000 কিলোমিটার এবং বায়ুর গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় 120 থেকে 160 কিমি গোলাে পর্যন্ত হয়ে থাকে। (vii) এই প্রকার ঘূর্ণবাতের বায়ু কেন্দ্রে পৌঁছালে উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। (viii) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের মধ্যে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা ওপরে উঠলে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে গাঢ় মেঘের সৃষ্টি হয় এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়।


ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টির শর্ত বা কারণ[Favourable Condition for Tropical Cyclone] : ঘূর্ণবাত সৃষ্টির উপযোগী অবস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে ঘূর্ণবাত-সৃষ্টিতে সাহায্য করে থাকে।

1)ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তাপ ও লীনতাপ : সমুদ্রপৃষ্ঠের উন্নতা [Sea-surface tempera ture] 27° সেঃ বা তার বেশি হলে যথেষ্ট পরিমাণে বাষ্পীভবন ঘটতে থাকে। ফলে বাতাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয়বাষ্প মেশার সুযোগ পাই যা প্রয়োজনীয় লীন তাপ প্রদান করে।

2)উষ্ণ জলের গভীরতা : 27° সেঃ উন্নতা সম্পন্ন সমুদ্র জলের গভীরতা অনধিক 60-70 মিটারের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এর বেশি হলে গভীর পরিচলন স্রোতের [Convectional current]জন্য নীচের শীতল জল উপরে উঠে এলে তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েঘূর্ণবাত বিলীন হয়ে যায়। 

3)বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ভূতপূর্ব গোলযোগের উপস্থিতি : বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ITCZ-এ পুবালি বায়ুতরঙ্গের অবস্থান, ঘূর্ণবাতের প্রাথমিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। 

4)ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের গোলযোগ : ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে বা ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে কোনো নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের পরিত্যক্ত ট্রাফ [trough] থাকলে, তার কেন্দ্রে শীতল বাতাস থাকে। এই বাতাস প্রচুর লীনতাপ ছাড়লে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। 

5)কোরিওলিস বল : ঘূর্ণবাত সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কোরিওলিস বলের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। বাতাসকে তরঙ্গের মতো পরিচালিত করতে ন্যূনতম কোরিত্তলিস বল প্রতি সেকেন্ড 10 ডাইন হওয়া দরকার।

6)নিম্নস্তরে মৃদু নিম্নচাপের উপস্থিতি : বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে মৃদু নিম্নচাপের পূর্ব উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। অনুকূল পরিস্থিতিতে এই নিম্নচাপই ঘনীভূত ও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি করে। 

7)প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উপস্থিতি: নিম্নচাপ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বে 9-15 কিমি উচ্চতায় প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উপস্থিতি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টির অন্যতম প্রধান শর্ত। কারণ ঘূর্ণবাত মধ্যসর বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে তা প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমগ্র প্রণালীটি সাবলীলভাবে সচল থাকে।


ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি বা উদ্ভব পর্যায় বা জীবনচক্র [Origin of Tropical Cyclone]]: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপাত্ত ও বিকাশ নিম্নলিখিত চারটি পর্যায়ে সংঘটিত হয় —–  

(I) প্রাথমিক পর্যায় : 27° সেঃ উন্নতাযুক্ত বিস্তৃত সমুদ্রের অবস্থান এই প্রকারঘূর্ণবাত সৃষ্টির প্রথম শর্ত। সমুদ্রজলের অধিক উন্নতা ছাড়া এই প্রকার প্রবল গতিবেগ ও ঘূর্ণনযুক্ত ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হতে পারে না। এই কারণে মে-সেপ্টেম্বর মাসের উন্নতর সমুদ্রে এই ঘূর্ণবাতগুলির সৃষ্টি হয়। এই প্রকার উদ্ধৃতর সমুদ্র অঞ্চলের উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে এবং একটি ঘূর্ণবাতজনিত আবর্তনের সৃষ্টি হয়। এই সময় আকাশে পালক মেঘের সৃষ্টি হয় এবং একটি নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় ও চারপাশে বাতাসের গতিবেগ 40 কিমি পর্যন্ত হয়।

(II) গঠন পর্যায় বা বিকাশশীল পর্যায় : এই পর্যায়ে বায়ুর চাপ কমে প্রায় 770 মিলিবারে পৌঁছায় এবং আরও শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে নিম্নচাপ কেন্দ্রের চারপাশে বাতাসের গতিবেগ 40 কিমি থেকে বেড়ে 120 কিমি পর্যন্ত হয় ও ঝড়ের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় বড়ো ঘূর্ণবাত ভেঙে ছোটো ছেটো ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।

(III) পরিণত অবস্থা : এই পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড়কে ভয়ঙ্কর আখ্যা দেওয়া হয়। এই অবস্থায় ঘূর্ণবাতেরগঠনগত অবস্থাকে 4টি বলয়ে ভাগ করা যায় - (i) প্রথম বলয় বা কেন্দ্র : ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে একটি শান্ত অঞ্চল থাকে। কেন্দ্রস্থলে মেঘমুক্ত আকাশের সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলকে গবাক্ষ বলে। 20-30 কিমি ব্যাসযুক্ত কেন্দ্রীয় এই এলাকাকে ঘূর্ণবাতের চোখ বলে। (ii) দ্বিতীয় বলয় : এই শান্ত বলয়কে ঘিরে ঘণ্টায় 90 কিমির বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝঞ্ঝা বাতাসের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে বৃষ্টিপাত ঘটে। একে ঘিরে 100-150 কিমি ব্যাসযুক্ত অঞ্চলে বায়ুর চাপ ঢাল বেশ খাড়া হয়। এজন্য এখানে বাতাসের গতিবেগ বেশি ও খুব বৃষ্টিপাত হয়। এটি হল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বলয়। (iii) তৃতীয় বলয় : বাইরের অংশের বাতাসেও তখন অতি শক্তিশালী ঝড়ের সৃষ্টি হয়। (iv) চতুর্থ বলয় : ঘূর্ণবাতের সীমানায় সবচেয়ে দুর্বলঅংশের অবস্থান লক্ষ করা যায় । 

(IV) অন্তিম পর্যায় : বায়ুচাপের অনুভূমিক ঢাল ক্রমশ কমতে থাকায় বায়ুর গতিবেগ কমে যায় এবং বৃষ্টির পরিমাণ হ্রাস পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ