Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physiographic of India) সম্পর্কে আলোচনা করো?

                      ভারতের ভূপ্রকৃতি 
              (Physiographic of India)


ভূপ্রকৃতি ও গঠনের বৈশিষ্ট্য বিচার করে ভারতকে 7টি প্রধান ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায় : (1) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, (2) ভারতের মরুভূমি (3) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল (4) মধ্য পূর্বভারতের উচ্চভূমি (5) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (6) উপকূলভাগের সমভূমি (7) ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ।


                  উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
       (Northern Mountain Region)


[1] উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল: উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলটি উত্তরদিকে তিব্বত মালভূমি ও দক্ষিণে ভারতের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলের মধ্যভাগে অবস্থিত। পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত (8126 মি.) থেকে পূর্বে নামচাবারোয়া (7756 মি.) পর্যন্ত 2500 কিমি দীর্ঘ। উত্তর-দক্ষিণে স্থানবিশেষে 150-400 কিমি চওড়া। ভারত ভূখণ্ডে এর আয়তন 5 লক্ষ বর্গকিমি। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল টি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত - a)হিমালয় পর্বত শ্রেণী, b)কারাকোরাম পর্বত শ্রেণী ও c) উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল।


A. হিমালয় পর্বতশ্রেণী

হিমালয় পর্বতমালা উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম এই দু-ভাগে বিভক্ত। যেমন—

∆ উত্তর-দক্ষিণে হিমালয় পর্বতের শ্রেণি (প্রস্থ বরাবর):

হিমালয় পর্বতকে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—(ক) শিবালিক বা অবহিমালয়, (খ) হিমাচল হিমালয়, (গ) হিমাদ্রী বা উচ্চ হিমালয়, (ঘ) ট্রানস বা টেথিস হিমালয়।


(ক) শিবালিক বা অবহিমালয় বা বহিঃহিমালয় (Shiwalik or Outer Himalaya): 

অবস্থান : জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বিস্তার হিমাচল প্রদেশে 50 কিমি থেকে অৰুণাচল প্রদেশে 15 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 600-1500 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : এই অংশে শিবালিক পর্বতশ্রেণি লক্ষ্যে করা যায়।

উপত্যকা : এই অঞ্চলের উপত্যকা গুলি দুন নামে পরিচিত । যেমন দেহরাদুন, রাজৌলি দুন,পতোতি দুন ।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য : শিবালিক পর্বত বিভিন্ন নামে পরিচিত। জম্মুতে 'জম্মু পাহাড়', অৰুণাচল প্রদেশে 'ডাৰুলা',মিবি’, ‘অ্যাবোর', ‘মিশমি পাহাড়',উত্তরাখণ্ডে 'ধ্যাৎ', ধুনবা পর্বতশ্রেণি নামে পরিচিত।


(খ)মধ্য বা হিমাচল বা লেসার (Middle or Himachal or Lesser Himalaya or Lower Himalaya) :

অবস্থান: দক্ষিণের শিবালিক ও উত্তরে গ্রেট হিমালয়ের মাঝখানে মধ্য হিমালয় দুটি পর্বতশ্রেণির সমান্তরালে বিস্তৃত।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 1300-5000 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : পিরপাঞ্জাল(কাশ্মীর), ধাওলাধর (হিমাচলপ্রদেশ) মুসৌরী, নাগটি বা (উত্তরাখণ্ড) মহাভারত লেখ ।

গিরিপথ : পির পাঙাল বিদিল, সোলারগর, বানিহাল গিরিপথ ইত্যাদি।

উপত্যকা : কাশ্মীর, কাংড়া (হিমাচলপ্রদেশ) ও কুলু উপত্যকা (ইরাবতীনদীতে) দেখা যায়।


(গ) হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় (Himadri or Great Himalaya):

অবস্থান : হিমালয়ের উত্তরতম পর্বতশ্রেণি বিশেষ। নেপাল, চীন সীমাত্তেও লক্ষ্য করা যায়।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 6000 মিটার ।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : এই অঞ্চলে এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ধবলগিরি, নাশাপর্বত, মাকালু, কামেট, বদ্রীনাথ ইত্যাদি লক্ষ্যে করা যায়।

গিরিপথ : বার্জিল ও জোজিলা, (জম্মু ও কাশ্মীর) বারা- লাচা-না, ও সিপকিলা (হিমাচল প্রদেশ) থাগালা, নিটি ও লিপু লেখ (উত্তরাখণ্ড) নাথুলা, জেলিপলা (সিকিম) ইত্যাদি।

হিমবাহ : এখানকার হিমবাহ গুলির মধ্যে গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, ঝিলাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য হিমাবাহ।


(ঘ) ট্রান্স হিমালয় বা তিব্বত হিমালয় (Trans Himalaya) :

অবস্থান : জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ সহ তিব্বতে অবস্থিত ।

গড় উচ্চতা : এই অংশের গড় উচ্চতা 3000 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : জাস্কার, লাদাখ হল প্রধান পর্বতশ্রেণি । এবং জাস্কার পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্খ লিওপার গেল (৭,৪২০মি.)।

গিরিপথ : কারাকোরাম, বুন্দেলপীর, জোজিলা ইত্যাদি।

হিমবাহ: এ অঞ্চলের হিমবাহ গুলির মধ্যে সিয়াচেন,বিয়াফো, বোল্টারো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।



পূর্ব-পশ্চিমে হিমালয় পর্বতশ্রেণী (দৈর্ঘ্য বরাবর) :

পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া পর্যন্ত প্রায় 2,500 কিমি দীর্ঘ হিমালয় পর্বতমালাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা – পশ্চিম হিমালয়, ও মধ্য হিমালয় ও ও পূর্ব হিমালয়।

ক) পশ্চিম হিমালয় : নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত হিমালয়ের অংশকে পশ্চিম হিমালয় বলে। অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিম হিমালয়কে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

1. কাশ্মীর হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : জম্মু-কাশ্মীরের প্রায় 3.5 লক্ষ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত।

(ii) পর্বতশ্রেণি : শিবালিক, পিরপাঞ্জাল, জাস্কর, লাডাক প্রভৃতি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি। কাশ্মীর হিমালয়ের উত্তরে রয়েছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। এই পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K, (8,611মি) ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

(ii) উপত্যকা : এখানে পিরপাঞ্জাল ও জাস্করের মধ্যে রয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর উপত্যকা। 

(iv) গিরিপথ : প্রধান গিরিপথগুলি হল বানিহাল (জওহর টানেল), জোজিলা, পিরপাঞ্জাল, বুন্দিলপির প্রভৃতি।

(v) হ্রদ : কাশ্মীর হিমালয়ের মধ্যে বেশ কিছু হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ দেখা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডাল, উলার, নাগিন, আনজার প্রভৃতি।


2. হিমাচল হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের কিছু অংশ নিয়ে প্রায় 64 হাজার বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে হিমাচল হিমালয় বিস্তৃত।

(ii) গড় উচ্চতা : পশ্চিম হিমালয়ের এই অংশের গড় উচ্চতা 3,500 - 4,500মি।

(iii) পর্বতশ্রেণি : ধওলাধর, পিরপাঞ্জাল, মুসৌরি, নাগটিব্বা প্রভৃতি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি।

(iv) উপত্যকা : এখানকার বিখ্যাত উপত্যকাগুলি হল কুলু, কাংড়া, লাহুল, স্পিটি প্রভৃতি।

(v) গিরিপথ : রোটাং, রওলাচলা প্রভৃতি গিরিপথ উল্লেখযোগ্য।


3. কুমায়ুন হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : উত্তরাখণ্ড রাজ্যের প্রায় 46 হাজার বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হিমালয়ের অংশ কুমায়ুন হিমালয় নামে পরিচিত।

(ii) গড় উচ্চতা : দক্ষিণের গড় উচ্চতা 600 মিটার কিন্তু উত্তরের গড় উচ্চতা 6,000 মিটারের বেশি।

(iii) পর্বতশ্রেণি : শিবালিক ও মুসৌরি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি। এই অংশে বেশ কিছু তুষার আবৃত সুউচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে। যথা – নন্দাদেবী, কেদারনাথ, কামেট, গঙ্গোত্রী, ত্রিশূল প্রভৃতি।

(iv) উপত্যকা : এই অংশের দক্ষিণে বেশ কিছু উপত্যকা বা দুন আছে। যথা— দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটাপাতিয়া প্রভৃতি।

(v) হ্রদ : এখানে হিমবাহ সৃষ্ট বেশ কিছু হ্রদ লক্ষ করা যায়, যা তাল নামে পরিচিত। যেমন – নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি।

(vi) হিমবাহু : কুমায়ুন হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য হিমবাহগুলি হল গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, মানা, মিলাম প্রভৃতি।


খ) মধ্য হিমালয় : পশ্চিমে কালি নদী থেকে পূর্বে সিঙ্গালিলা পর্বত শ্রেণি পর্যন্ত সমগ্র নেপাল রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে মধ্য হিমালয় বিস্তারলাভ করেছে। এই অঞ্চলটির বেশ কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত। ভারত হিমালয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের দ্বিতীয় ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ (উচ্চতা 8,598মি.) । এখানে অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গ হলো মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা ।


গ) পূর্ব হিমালয় : 

 নেপালের পূর্বসীমার সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের অংশকে পূর্ব হিমালয় বলে। পূর্ব হিমালয়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা— 

1. দার্জিলিং-সিকিম হিমালয় :

(i) সিঙ্গালিলা থেকে পূর্বে ডানকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

(ii) এখানকার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল কাঞ্চনজঙ্ঘা , সান্দাকফু , ফালুট, সবরগ্রাম প্রভৃতি।

(ii) কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের দ্বিতীয় তথা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এবং সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

(iii)এখানে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য গিরিপথ হল নাথুলা ও জেলেপলা

(v)এখানকার বিখ্যাত হ্রদগুলি হল মিরিক, ছাঙ্গু প্রভৃতি।


2. ভুটান হিমালয় : পূর্ব হিমালয়ের তা ভুটান হিমালয় নামে পরিচিত।


3. অরুণাচল হিমালয় :

\(i) ভুটানের পূর্বসীমা থেকে নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অসম ও অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত। 

(ii) শিবালিক, হিমাচল ও হিমাদ্রি এই তিনটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি দক্ষিণ থেকে উত্তরে পরপর অবস্থিত। 

(iii) পূর্ব হিমালয়ের এই অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নামচাবারওয়া ।

(iv) এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ হল ডোমলা (লা গিরিপথ), তুলুংলা, ঠগলা, বুমলা প্রভৃতি। 

(v) ডাফলা, কৃষ্ণ, মিরি প্রভৃতি হল এই অংশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়।


উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

B. কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি: কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম ভাগে কারাকোরাম বা কৃষ্ণগিরি পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণিটি 400 কিমি দীর্ঘ। কয়েকটি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে। যেমন—গডউইন অস্টিন বা কে2 (8, 611 মি. ভারতের সর্বোচ্চ ও পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ), হিডনপিক, ব্রডপিক প্রভৃতি। টেথিস সাগরের সঞ্চিত পলি ভাঁজ হয়ে হিমালয় ও লাদাখ পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময়েই কারাকোরামের উৎপত্তি হয়। কারাকোরামে কয়েকটি হিমবাহ আছে, যেমন—সিয়াচেন (76 কিমি, ভারতের দীর্ঘতম), হিসপার (62 কিমি), বলটারো (60 কিমি), বিয়াফো (60 কিমি), রিমো প্রভৃতি। কারাকোরামের কোনো কোনো অংশে সারা বছরই বরফ জমে থাকে বলে এই পর্বতকে বসুধার ধবলশীর্ষ বলে।


C. উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল: এই অঞ্চলটির দুটি অংশ।

পূর্বাচল : এই অংশটি অরুণাচলপ্রদেশের পূর্বপ্রান্ত থেকে বেঁকে দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। এখানে অনেক ছোটো ছোটো পাহাড়, মালভূমি ও সমভূমি দেখা যায়। 

মেঘালয় মালভূমি : এই মালভূমিটি পূর্ব-পশ্চিমে 240 কিমি দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে 97 কিমি প্রশস্ত। এখানকার গারো পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নুকরেক–1,412 মি.); খাসিয়া পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ শি

লং পাহাড় – 1,961উল্লেখযোগ্য। এই মালভূমিতে পার্বত্য গুহা আছে। গারো পাহাড়ের সিজু (1,90০ মিটার দীর্ঘ) গুহাটি বিখ্যাত। একে স্থানীয় ভাষায় ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা বলে।



                  উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল

                  (Northern Plain Region)


অবস্থান ও বিস্তার : সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র—এই তিনটি নদী এবং এদের উপনদীগুলির সঞ্চয়কার্যের ফলে উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী স্থানে যে বিশাল সমতল ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে, তাকে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল বলে। 2,400 কিমি দীর্ঘ ও 240-300 কিমি বিস্তৃত এই সমভূমির মোট আয়তন 6,52,000 বর্গকিমি। 


ভূপ্রকৃতি : উত্তর ভারতের সমভূমির ভূপ্রকৃতি প্রায় সমতল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা 4 মিটার থেকে 300 মিটারের মধ্যে, তবে নদীর ক্ষয়কার্যের ও সঞ্চয়কার্যের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে স্থানভেদে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, উঁচু ঢিবি, স্বাভাবিক বাঁধ, নদীর খাড়া পাড় প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপ দেখা যায়।


শ্রেণিবিভাগ : উত্তর ভারতের বিশাল সমভূমিকে চারটি অংশে ভাগ করা হয়। যথা— 1. রাজস্থানের সমভূমি, 2. শতদ্রু সমভূমি, 3. গঙ্গা সমভূমি এবং 4. ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।  

1. রাজস্থানের সমভূমি : আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে অবস্থিত এই সমভূমি অঞ্চলটি বিভিন্ন ধরনের বালিয়াড়ি, লবণাক্ত জলের হ্রদ প্রভৃতি দ্বারা গঠিত। রাজস্থান সমভূমির পশ্চিমদিকের অংশটির নাম মরুস্থলী (মৃতের দেশ)। এখানে সম্বর, দিদওয়ানা, পচপদ্রা, কাচমান প্রভৃতি লবণাক্ত হ্রদ বা ধান্দ আছে।

2. শতদ্রু সমভূমি : ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু এবং ঘর্ঘরা নদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে এই সমভূমি গড়ে উঠেছে। একে পাঞ্জাব সমভূমিও বলা হয়। এই সমভূমির গড় উচ্চতা 200-300 মিটার । পাঞ্জাব সমভূমিতে দুটি নদীর মধ্যবর্তী পলিগঠিত উচ্চভূমি দোয়াব এবং নতুন পলিগঠিত নদী তীরবর্তী অঞ্চল বেট নামে পরিচিত।

3. গঙ্গা সমভূমি : পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রায় 3,57,000 বর্গকিমি স্থান জুড়ে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে গাঙ্গেয় সমভূমি বিস্তৃত। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমগ্র গঙ্গা সমভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— উচ্চ-গঙ্গা সমভূমি,  মধ্য-গঙ্গা সমভূমি ও  নিম্ন-গঙ্গা সমভূমি।

[a] উচ্চ-গঙ্গা সমভূমি ঃ যমুনার বামতীর থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত অংশ উচ্চ গঙ্গা সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমির গড় উচ্চতা 100 মিটার এবং এটি প্রায় 630 কিমি বিস্তৃত। 

[b] মধ্য-গঙ্গা সমভূমি : পশ্চিমে এলাহাবাদ থেকে পূর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত (প্রায় 650 কিমি) বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে মধ্য-গঙ্গা সমভূমি অবস্থিত। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 30-100/ মিটার।

[c] নিম্ন-গঙ্গা সমভূমি : রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে নিম্ন-গঙ্গা সমভূমি বিস্তৃত। এটির গড় উচ্চতা 30 মিটারের কম। কোথাও কোথাও উচ্চতা 2 মিটারের মধ্যে। এই উপঅঞ্চলটি আবার তিন ভাগে বিভক্ত—উত্তরবঙ্গ সমভূমি, বদ্বীপ অঞ্চল ও রাঢ় সমভূমি।

4. ব্রহ্মপুত্র সমভূমি : গাঙ্গেয় সমভূমির পূর্বদিকে অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার বিভিন্ন উপনদীর পলি সঞ্চয়নের ফলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে তা ব্রহ্মপুত্র সমভূমি বা অসম উপত্যকা নামে পরিচিত। এটি প্রায় 700 কিমি দীর্ঘ ও ৪০ কিমি প্রশস্ত। নিম্ন অসমের ব্রহ্মপুত্র নদে সৃষ্ট বালুচর মাজুলি (614 বর্গকিমি) ভারতের এবং পৃথিবীর বৃহত্তম নদী গঠিত দ্বীপ।




              দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল
                (Peninsular Plateau)


∆ অবস্থান : উত্তরে সাতপুরা-মহাকাল পর্বত থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ত্রিভুজাকার ভূখণ্ড দাক্ষিণাত্য মালভূমি নামে পরিচিত।

∆ আয়তন : প্রায় 13,50,000 বর্গকিমি।

∆ উৎপত্তি : ক্রিটেসিয়াশ যুগে উপদ্বীপীয় মালভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের ফাটল দিয়ে ধীরে ধীরে নির্গত হয়ে অঞ্চলটিকে ঢেকে ফেলে। এইভাবে কালক্রমে লাভা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্য মালভূমির সৃষ্টি হয়।

∆ ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ : এই মালভূমিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – (1) পার্বত্যভূমি ও (2) মালভূমি।


(1) পার্বত্যভূমি : উল্লেখযোগ্য পর্বতগুলি হল -

a) পশ্চিমঘাট পর্বত বা সহ্যাদ্রি : এটি একটি স্তূপপর্বত। আরব সাগরের উপকূল বরাবর প্রায় 1600 কিমি দীর্ঘ। এর গড় উচ্চতা 900 - 1000 মিটার । এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্খ হল আনাইমালাই পর্বতের আনাইমুদি ,এটি দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। পশ্চিমঘাট পর্বতের মাঝে প্রধান তিনটি ফাঁক রয়েছে, যথা – ভোরঘাট, থলঘাট ও পালঘাট।

b) পূর্বঘাট পর্বত বা মলয়াদ্রি : এটি একটি ক্ষয়জাত পর্বত। বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত নান্নামালাই, ভেলিকোন্ডা, পলকোন্ডা, পচামালাই, জাভাদি প্রভৃতি কতগুলি বিচ্ছিন্ন পর্বতের সমষ্টি। এর গড় উচ্চতা 450-600 মিটার। এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্খ হল জিন্দাগাদা ।

c) নীলগিরি: পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বত দুটি নীলগিরি পর্বতে এসে মিলিত হয়েছে। তাই একে পর্বত গ্রন্থি বলে। এর গড় উচ্চতা 1,500 - 2,000 মিটার। এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেতা ।

d) সাতপুরা : দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর প্রান্তে অবস্থিত সাতপুরা হল একটি স্তূপ পর্বত। এর গড় উচ্চতা 500 600 মিটার।এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধূপগড় ।


2) মালভূমি: মালভূমি অংশের তিনটি ভাগ, যথা -

a) মহারাষ্ট্র মালভূমি : দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অংশ জুড়ে অবস্থিত। মালভূমির সমতল চূড়াযুক্ত পর্বতগুলি ধাপে ধাপে দক্ষিণ-পূর্বে নেমে এসেছে। একে ডেকানন্ট্রাপ বলে। এই মালভূমি ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত। এখানে অজন্তা, ইলোরা, বালাঘাট, হরিশচন্দ্র ইত্যাদি পাহাড় অবস্থিত।

b) কর্ণাটক মালভূমি : দাক্ষিণাত্য মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ জুড়ে অবস্থিত। এটি প্রধানত গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত। এই মালভূমির পশ্চিম অংশের উঁচু-নীচু ঢেউখেলানো ভূমিকে মালনাদ বলে। ময়দান : পূর্বের অনুচ্চ, মৃদু তরঙ্গায়িত ভূমিভাগকে ময়দান বলে। 

c) তেলেঙ্গানা মালভূমি: কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে তেলেঙ্গানা রাজ্য জুড়ে এই মালভূমি অবস্থিত। এই মালভূমির গড় উচ্চতা 500-600 মিটার। 



               মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি
              (Central & East Highland)


ভারতের বৃহত্তম ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ উপদ্বীপীয় মালভূমির প্রধান দুটি অংশ হল ও মধ্য ভারতের উচ্চভূমি ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি।


1) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি : 

অবস্থান : উত্তর-পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে পূর্বে রেওয়া মালভূমি এবং উত্তরে শতদ্রু ও গঙ্গা সমভূমি থেকে দক্ষিণে নর্মদা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশ হল মধ্য ভারতের উচ্চভূমি।

ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ :

(i) আরাবল্লি পর্বত : এটি ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত। বর্তমানে এটি ক্ষয়জাত পর্বতে পরিণত হয়েছে। এর গড় উচ্চতা 800 – 900 মিটার। এটি দিল্লি থেকে আমেদাবাদ পর্যন্ত ৪০০ কিমি দীর্ঘ এবং চওড়ায় প্রায় 100 কিমি প্রশস্ত। আরাবল্লি পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আবু পাহাড়ের গুরুশিখর । এই পার্বত্য অঞ্চলে সম্বর, নওয়া, কুচামান প্রভৃতি লবণাক্ত জলের হ্রদ দেখা যায়।

(ii) মারওয়াড় উচ্চভূমি : আরাবল্লির পূর্বের এই উচ্চভূমি কাদাপাথর ও বেলেপাথর দ্বারা গঠিত। এই অংশের গড় উচ্চতা 200 450 মিটার। এটি পূর্ব রাজস্থানের উচ্চভূমি নামেও পরিচিত।

(iii) মধ্য ভারত পাথার : উচ্চভূমির এই অংশের পৃষ্ঠদেশ পাথুরে ও ঢেউ খেলানো।

(iv) বুন্দেলখণ্ড : যমুনা নদীর পশ্চিমে গ্রানাইট ও নিস শিলায় গঠিত ক্ষয়িত ঢালযুক্ত উচ্চভূমিকে বুন্দেলখণ্ড বলে। এখানে মেসা ও বিউট দেখা যায়। এই উচ্চভূমির গড় উচ্চতা 100 – 300 মিটার। 

(v) মানব মালভূমি : আরাবল্লি ও বিন্ধ্য পর্বতের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত এই মালভূমি লাভা দ্বারা গঠিত। এর গড় উচ্চতা 200 মিটার।

(vi) বিন্ধ্যপর্বত : মালব মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত পাললিক শিলায় গঠিত স্তূপ পর্বত হল বিন্ধ্যপর্বত। এর পশ্চিমাংশ লাভা দ্বারা গঠিত। এই পর্বতের গড় উচ্চতা 300 মিটার এবং এটি 1,050 কিমি দীর্ঘ। বিন্ধ্যপর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মানপুর ।

vii) নর্মদা উপত্যকা : বিন্ধ্য ও সাতপুরা স্তূপ পর্বত দুটির মাঝে অবস্থিত গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।

(viil) রেওয়া মালভূমি: বিন্ধ্যপর্বত ও মালব মালভূমির ঈষৎ ঢেউখেলানো লাভাদ্বারা গঠিত মালভূমিটি রেওয়া মালভূমি নামে পরিচিত।


2) পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি :

অবস্থান : মধ্য ভারতের উচ্চভূমির পূর্বে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ জুড়ে পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি অবস্থিত 

ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ :

(i) বাঘেলখণ্ড : পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিমে শোন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন পাললিক ও গ্রানাইট শিলায় গঠিত অবস্থিত প্রাচীন পাললিক ও গ্রানাইট শিলায় গঠিত মালভূমি বাঘেলখণ্ড নামে পরিচিত। এই মালভূমির গড় উচ্চতা 400-600 মিটার।

(ii) ছোটোনাগপুর মালভূমি : বাঘেলখণ্ডের পূর্বে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের অংশবিশেষ নিয়ে গড়ে উঠেছে ছোটোনাগপুর মালভূমি। এটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর গড় উচ্চতা 400 – 1,000 মিটার। মালভূমির পশ্চিম অংশের পাট অঞ্চল সবচেয়ে উঁচু। এই মালভূমির সর্বোচ্চ পাহাড় হল পরেশনাথ। এ ছাড়া এখানে রাজমহল,শুশুনিয়া, দলমা, অযোধ্যা, মামাভাগ্নে প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায়। 

(iii) মহানদী অববাহিকা : ছোটোনাগপুর মালভূমি দক্ষিণে প্রায় সরার মতো আকৃতি বিশিষ্ট চুনাপাথর ও শেল দ্বারা গঠিত মহানদী অববাহিকা অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা 250 300 মিটার। এই - আববাহিকার মধ্যভাগকে ‘ছত্তিশগড় সমতল ক্ষেত্র’ বলা হয়।

(iv) দন্ডকারণ্য : ছত্তিশগড় সমতলক্ষেত্রের দক্ষিণভাগে ওড়িশা ও ছত্তিশগড় রাজ্য দুটির কিয়দংশ জুড়ে অবস্থিত উচ্চভূমি দন্ডকারণ্য নামে পরিচিত। এর গড় উচ্চতা 500 - 900 মিটার।

(v) গড়জার্ট পাহাড় : মহানদী অববাহিকার পূর্বাংশের অরণ্যময় ওড়িশা উচ্চভূমি গড়জাট পাহাড় নামে পরিচিত। এখানে সিমলিপাল, বোনাই, কেওনঝড় প্রভৃতি পাহাড় রয়েছে।


                 উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল 
                 (Coastal Plain Region)


উপদ্বীপীয় মালভূমির দু-পাশে উপকূল বরাবর যে সংকীর্ণ সমভূমি গড়ে উঠেছে তাকে উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বলে। ভারতের উপকূলরেখার মোট দৈর্ঘ্য 7,516.6 কিমি। ভারতের উপকূল সমভূমি দু-ভাগে বিভক্ত—


[A] পূর্ব উপকূল সমভূমি: বাংলাদেশের পশ্চিম সীমা থেকে কুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উপকূলটি 1,500 কিমি দীর্ঘ ও 100 - 130 কিমি প্রশস্ত। এই উপকূলের উত্তরাংশের সুবর্ণরেখার মোহানা থেকে কৃষ্ণা নদীর মোহানা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে উত্তর সরকার উপকূল বলে এবং কৃষ্ণা নদীর মোহানা থেকে কুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণাংশের উপকূলকে করমণ্ডল উপকূল বলে। এই সমভূমিটি প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত। যেমন— 

1) উৎকল বা ওড়িশা উপকূল : সুবর্ণরেখা থেকে রুশিকুল্যা নদী পর্যন্ত এই উপকূল বিস্তৃত। এই উপকূলে বহু বালিয়াড়ি আছে। এখানে বৃহত্তম উপহ্রদ চিল্কা অবস্থিত। এখানে প্রচুর বালিচর আছে। এখানে পুরী, কটক, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি শহর অবস্থিত।

2) অন্ধ্র উপকূল : চিল্কা উপহ্রদ থেকে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটি অন্ধ্র উপকূল নামে পরিচিত। পুলিকট ও কোলেৱু উপহ্রদ অবস্থিত। এই উপকূলে বিশাখাপত্তনম, নেলোর প্রভৃতি বন্দর শহর অবস্থিত।

3) তামিলনাড়ু বা করমণ্ডল উপকূল : কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অংশটি তামিলনাড়ু উপকূল বা করমণ্ডল উপকূল নামে পরিচিত।এখানে কাবেরী নদীর বদ্বীপ আছে। এই উপকূলে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায়। এগুলিকে স্থানীয় ভাষায় থেড়িস বলে।


[2]পশ্চিম উপকূল সমভূমি: পশ্চিম উপকূলের সমভূমি পাকিস্তানের সীমা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই সমভূমি বিভিন্নভাবে বিভক্ত -

1) কচ্ছ উপদ্বীপ অঞ্চল : কচ্ছ শব্দের অর্থ ‘জলময় দেশ’ এবং উত্তরে বৃহৎ রণ ও দক্ষিণে ক্ষুদ্র রণ। রণ হলো কর্দমাক্ত লবণাক্ত নিম্নভূমি। বছর বছর নদী ও সমুদ্র প্লাবনে গুজরাটে এই রণ অঞ্চল গঠিত হয়েছে।

2) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ অঞ্চল : গুজরাটের এই উপকূল অঞ্চল লাভা দ্বারা গঠিত। এখানে গির ও গিরনার পাহাড় আছে। গোরক্ষনাথ হলো এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এই উপদ্বীপের দক্ষিণে দিউ দ্বীপ অবস্থিত। 

3) কোঙ্কন উপকূল : দমন থেকে গোয়ার দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত কোঙ্কন উপকূল বিস্তৃত। 45- 75 কিমি প্রশস্ত এই উপকূল। এই উপকূল সর্বাধিক ভগ্ন। এর নিকট সলসেট ও এলিফ্যান্টা দ্বীপ অবস্থিত।

4) কর্ণাটক উপকূল : কর্ণাটকের অন্তর্ভুক্ত সমভূমিটিকেই কর্ণাটক উপকূল বলে। এই উপকূল বালুকাময় ও মাঝে মাঝে শৈলশিরা দেখা যায়।

5) মালাবার উপকূল : কেরলে বিস্তৃত অঞ্চলটি মালাবার উপকূল নামে পরিচিতি। এখানে অনেক উপহ্রদ আছে, যাদের কয়াল বলে। যেমন- ভেম্বানাদ কয়াল, অষ্টমুদি কয়াল প্রভৃতি


                      ভারতের দ্বীপপুঞ্জ
                    (Islands of India)


অনেকগুলি ছোটো ছোটো দ্বীপকে একসঙ্গে দ্বীপপুঞ্জ বলা হয়। ভারতে দুটি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে। যথা-



1. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ :

অবস্থান : বঙ্গোপসাগরে 265টি ছোটো-বড়ো দ্বীপ নিয়ে

ভারতের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান ও নিকোবর গড়ে উঠেছে। 

আয়তন : মোট আয়তন প্রায় 8249 বর্গকিমি। 

বিস্তার : এই দ্বীপপুঞ্জ উত্তর-দক্ষিণে প্রায় 170 কিমি দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 120 কিমি প্রশস্ত।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : (i) এই দ্বীপপুঞ্জ প্রকৃতপক্ষে আগ্নেয় দ্বীপের সমষ্টি। (ii) তবে নিকোবর দ্বীপের কিছু অংশ প্রবাল দ্বারা গঠিত। (iii) এই দ্বীপপুঞ্জ বড়ো আন্দামান, মধ্য আন্দামান, দক্ষিণ আন্দামান, ছোটো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিভক্ত। (iv) 'স্যাডল পীক’ (737 মিটার) এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। (v) এই দ্বীপপুঞ্জের ‘ব্যারেন’ একটি সবিরাম আগ্নেয়গিরি এবং ‘নারকোল্ডাম’ একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। (vi) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ‘10°চ্যানেল' দ্বারা বিচ্ছিন্ন।(vii) দক্ষিণ আন্দামান ও ছোটো আন্দামানের মধ্যে রয়েছে 'ডানকান প্যাসেজ'। (viii) গ্রেট নিকোবরের দক্ষিণতম বিন্দু ‘ইন্দিরা পয়েন্ট’ ভারতের দক্ষিণতম স্থলবিন্দু। (ix) দ্বীপগুলি খরস্রোতা নদী, বিচ্ছিন্ন পাহাড় ও ঘন চিরহরিৎ অরণ্য অধ্যুষিত। 


2. লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ :

অবস্থান : আরব সাগরের বুকে 36টি ছোটো-বড়ো দ্বীপ নিয়ে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ গড়ে উঠেছে।

আয়তন : মোট আয়তন প্রায় 32 বর্গকিমি।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : (i) এই দ্বীপপুঞ্জের সব দ্বীপই প্রবাল কীটের দেহাবশেষ জমে সৃষ্ট প্রবাল দ্বীপ। (ii) দ্বীপগুলির কোনো স্থানই সমুদ্রতলের 5 মিটারের বেশি উঁচু নয়। (iii) দ্বীপগুলির মধ্যে মিনিকয়, আমিনদিভি, লাক্ষাদ্বীপ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। (iv) মিনিকয় দ্বীপটি এখানকার সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ। (v) এখানে সুন্দর প্রবাল হ্রদ দেখা যায়।


             ভারতের সর্বমোট 1,208টি দ্বীপ আছে যার মধ্যে অনেকগুলিতেই মনুষ্য বসবাস গড়ে ওঠে নি। উল্লেখযোগ্য দ্বীপগুলি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচিত হল- 

∆মুনরো দ্বীপ : কেরালার কোল্লাম জেলায় অষ্টমুদি হ্রদ ও কল্পড নদীর সঙ্গমস্থলে আটটি দ্বীপের সমন্বয়ে মুনরো দ্বীপ গনে উঠেছে। 

∆রমেশ্বরম: ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী মান্নার প্রণালীতে রামেশ্বরম দ্বীপের অবস্থান ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেলপথেপাম্বাম সেতু দ্বারা এটি যুক্ত। এটি পাম্বান দ্বীপ নামেও খ্যাত। 

∆কোচিন দ্বীপ : কোচি উপকূলের অদূরে বোলগাত্তি, চেরাই, ভাইপিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য দ্বীপ অবস্থিত।

∆চোরাও : পানাজি থেকে 5 কিমি দূরে মান্ডবী নদীর বুকে অবস্থিত চোরাও দ্বীপ গোয়ার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দ্বীপ।

∆এলিফ্যান্টা দ্বীপ : মুম্বাই বন্দরের নিকটে আরব সাগরে এলিফ্যান্টা দ্বীপ অবস্থিত। এই দ্বীপের গুহা মন্দিরগুলি উল্লেখযোগ্য পর্যটন গন্তব্য।

∆দিউ : ভারতের পশ্চিম উপকূলে আবর সাগরের তীরে অবস্থিত দমন ও দিউ একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যার মধ্যে দিউ একটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপ।

∆মাজুলি দ্বীপ : আসাম রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে অবস্থিত মাজুলি একটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপ। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপের উদাহরণ। বহু বিরল প্রজাতির পাখির আবাসস্থল এই দ্বীপ।


 ভারতীয় মরুভূমি অঞ্চল (Indian Desert)


∆ অবস্থান : ভারতের পশ্চিমে রাজস্থান রাজ্যে, আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে এবং পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণে থর মরুভূমির ভারতীয় অংশ (মরুস্থলী) অবস্থিত।

∆ উৎপত্তি ঃ এই অঞ্চলটি দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত হওয়ায় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় ও আরবসাগরীয় শাখা এখানে যখন এসে পৌঁছোয় তখন তাতে খুব কম পরিমাণে জলীয়বাষ্প থাকে ফলে সামান্য বৃষ্টিপাত (25 cm) হয়। তা ছাড়া ওই অঞ্চলের উন্নতা বেশি থাকায় জলীয় বাষ্পও অল্প পরিমাণে ঘনীভূত হয়। দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।


∆ ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় থর মরুভূমি সিন্ধু সমভূমির অংশ। এই অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

• চরম প্রকৃতির জলবায়ুর জন্য এখানে শুধু বালি দেখা যায় ।  

• থর মরুভূমির গড় উচ্চতা 150 300 মি প্রায়।  

•অঞ্চলটি প্রধানত বালি, বালিয়াড়ি, পাথর ও উঁচু ঢিবি দ্বারা গঠিত।  

• বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয়ের ফলে এখানকার ভূমিরূপ সমতল, ঢেউখেলানো। নীচু অংশে বহু লবণাক্ত হ্রদ (রান) দেখা যায়। সম্বর মরু অঞ্চলের বৃহত্তম লবণাক্ত হ্রদ। 

• থর মরুভূমির চলমান বালিয়াড়িকে থ্রিয়ান এবং অবনত নীচু অংশগুলিকে ধান্দ বলে । 

• থর মরুভূমিতে মাঝে মধ্যে ছোটো নদী বা প্রস্রবণ দেখা যায়, কিন্তু গ্রীষ্মকালে এগুলি শুকিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এখানকার একমাত্র বড়ো নদী হল লুনি।


∆ ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ : ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুযায়ী থর মরুভূমিকে 5টি ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন - 

1)বাগর : মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশের অংশটি বাগর নামে পরিচিত। 

2)রোহি: আরাবল্লির পশ্চিম অংশে অসংখ্য ক্ষুদ্র জলধারা পাদদেশে পললরাশি সঞ্চিত হয়ে রোহি সমভূমির সৃষ্টি করেছে। উর্বর পললরাশি ও জলের সুবিধার জন্য এখানে কৃষিকাজ হয়। 

3)ক্ষুদ্র মরু : রোহির পশ্চিমপ্রান্তের অংশ হলো ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল। । 

4)হামাদা : ক্ষুদ্র মরুর পশ্চিমপ্রান্তে বালি ও শিলাখণ্ড দ্বারা গঠিত অঞ্চল হলো হামাদা। 

5)মরুস্থলী : হামাদার পশ্চিমের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ বালুকাময়, রুক্ষ ও উদ্ভিদহীন অঞ্চল। এটিই হলো আসল থর মরুভূমি। মরুস্থলীতে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ