Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physiographic of India) | উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল ( Northern Mountain Region)

                      ভারতের ভূপ্রকৃতি 
             (Physiographic of India)


ভূপ্রকৃতি ও গঠনের বৈশিষ্ট্য বিচার করে ভারতকে 7টি প্রধান ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায় : (1) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, (2) ভারতের মরুভূমি (3) দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল (4) মধ্য পূর্বভারতের উচ্চভূমি (5) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (6) উপকূলভাগের সমভূমি (7) ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ।



                     উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

             (Northern Mountain Region)


[1] উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল: উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলটি উত্তরদিকে তিব্বত মালভূমি ও দক্ষিণে ভারতের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলের মধ্যভাগে অবস্থিত। পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত (8126 মি.) থেকে পূর্বে নামচাবারোয়া (7756 মি.) পর্যন্ত 2500 কিমি দীর্ঘ। উত্তর-দক্ষিণে স্থানবিশেষে 150-400 কিমি চওড়া। ভারত ভূখণ্ডে এর আয়তন 5 লক্ষ বর্গকিমি। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল টি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত - a)হিমালয় পর্বত শ্রেণী,  b)কারাকোরাম পর্বত শ্রেণী ও c) উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল।


A. হিমালয় পর্বতশ্রেণী : 

হিমালয় পর্বতমালা উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম এই দু-ভাগে বিভক্ত। যেমন—

উত্তর-দক্ষিণে হিমালয় পর্বতের শ্রেণি (প্রস্থ বরাবর):

হিমালয় পর্বতকে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—(ক) শিবালিক বা অবহিমালয়, (খ) হিমাচল হিমালয়, (গ) হিমাদ্রী বা উচ্চ হিমালয়, (ঘ) ট্রানস বা টেথিস হিমালয়।

(ক) শিবালিক বা অবহিমালয় বা বহিঃহিমালয় (Shiwalik or Outer Himalaya): 

অবস্থান : জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বিস্তার হিমাচল প্রদেশে 50 কিমি থেকে অৰুণাচল প্রদেশে 15 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 600-1500 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : এই অংশে শিবালিক পর্বতশ্রেণি লক্ষ্যে করা যায়।

উপত্যকা : এই অঞ্চলের উপত্যকা গুলি দুন নামে পরিচিত । যেমন দেহরাদুন, রাজৌলি দুন,পতোতি দুন ।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য : শিবালিক পর্বত বিভিন্ন নামে পরিচিত। জম্মুতে 'জম্মু পাহাড়', অৰুণাচল প্রদেশে 'ডাৰুলা',মিবি’, ‘অ্যাবোর', ‘মিশমি পাহাড়',উত্তরাখণ্ডে 'ধ্যাৎ', ধুনবা পর্বতশ্রেণি নামে পরিচিত।


(খ)মধ্য বা হিমাচল বা লেসার (Middle or Himachal or Lesser Himalaya or Lower Himalaya) :

অবস্থান: দক্ষিণের শিবালিক ও উত্তরে গ্রেট হিমালয়ের মাঝখানে মধ্য হিমালয় দুটি পর্বতশ্রেণির সমান্তরালে বিস্তৃত।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 1300-5000 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ  : পিরপাঞ্জাল(কাশ্মীর), ধাওলাধর (হিমাচলপ্রদেশ) মুসৌরী, নাগটি বা (উত্তরাখণ্ড) মহাভারত লেখ ।

গিরিপথ : পির পাঙাল বিদিল, সোলারগর, বানিহাল গিরিপথ ইত্যাদি।

উপত্যকা : কাশ্মীর, কাংড়া (হিমাচলপ্রদেশ) ও কুলু উপত্যকা (ইরাবতীনদীতে) দেখা যায়।


(গ) হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় (Himadri or Great Himalaya):

অবস্থান : হিমালয়ের উত্তরতম পর্বতশ্রেণি বিশেষ। নেপাল, চীন সীমাত্তেও লক্ষ্য করা যায়।

গড় উচ্চতা : এর গড় উচ্চতা 6000 মিটার ।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ : এই অঞ্চলে এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ধবলগিরি, নাশাপর্বত, মাকালু, কামেট, বদ্রীনাথ ইত্যাদি লক্ষ্যে করা যায়।

গিরিপথ : বার্জিল ও জোজিলা, (জম্মু ও কাশ্মীর) বারা- লাচা-না, ও সিপকিলা (হিমাচল প্রদেশ) থাগালা, নিটি ও লিপু লেখ (উত্তরাখণ্ড) নাথুলা, জেলিপলা (সিকিম) ইত্যাদি।

হিমবাহ : এখানকার হিমবাহ গুলির মধ্যে গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, ঝিলাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য হিমাবাহ।


(ঘ) ট্রান্স হিমালয় বা তিব্বত হিমালয় (Trans Himalaya) :

অবস্থান : জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ সহ তিব্বতে অবস্থিত ।

গড় উচ্চতা : এই অংশের গড় উচ্চতা 3000 মিটার।

পর্বতশ্রেণি বা শৃঙ্গ  : জাস্কার, লাদাখ হল প্রধান পর্বতশ্রেণি । এবং জাস্কার পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্খ লিওপার গেল (৭,৪২০মি.)।

গিরিপথ : কারাকোরাম, বুন্দেলপীর, জোজিলা ইত্যাদি।

হিমবাহ: এ অঞ্চলের হিমবাহ গুলির মধ্যে সিয়াচেন,বিয়াফো, বোল্টারো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।



পূর্ব-পশ্চিমে হিমালয় পর্বতশ্রেণী (দৈর্ঘ্য বরাবর) :

পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া পর্যন্ত প্রায় 2,500 কিমি দীর্ঘ হিমালয় পর্বতমালাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা –  পশ্চিম হিমালয়, ও মধ্য হিমালয় ও ও পূর্ব হিমালয়।

ক) পশ্চিম হিমালয় : নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত হিমালয়ের অংশকে পশ্চিম হিমালয় বলে। অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিম হিমালয়কে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

1. কাশ্মীর হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : জম্মু-কাশ্মীরের প্রায় 3.5 লক্ষ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত।

(ii) পর্বতশ্রেণি : শিবালিক, পিরপাঞ্জাল, জাস্কর, লাডাক প্রভৃতি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি। কাশ্মীর হিমালয়ের উত্তরে রয়েছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। এই পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K, (8,611মি) ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

(ii) উপত্যকা : এখানে পিরপাঞ্জাল ও জাস্করের মধ্যে রয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর উপত্যকা। 

(iv) গিরিপথ : প্রধান গিরিপথগুলি হল বানিহাল (জওহর টানেল), জোজিলা, পিরপাঞ্জাল, বুন্দিলপির প্রভৃতি।

(v) হ্রদ : কাশ্মীর হিমালয়ের মধ্যে বেশ কিছু হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ দেখা যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডাল, উলার, নাগিন, আনজার প্রভৃতি।


2. হিমাচল হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের কিছু অংশ নিয়ে প্রায় 64 হাজার বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে হিমাচল হিমালয় বিস্তৃত।

(ii) গড় উচ্চতা : পশ্চিম হিমালয়ের এই অংশের গড় উচ্চতা 3,500 - 4,500মি।

(iii) পর্বতশ্রেণি : ধওলাধর, পিরপাঞ্জাল, মুসৌরি, নাগটিব্বা প্রভৃতি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি।

(iv) উপত্যকা : এখানকার বিখ্যাত উপত্যকাগুলি হল কুলু, কাংড়া, লাহুল, স্পিটি প্রভৃতি।

(v) গিরিপথ : রোটাং, রওলাচলা প্রভৃতি গিরিপথ উল্লেখযোগ্য।


3. কুমায়ুন হিমালয় :

(i) অবস্থান ও আয়তন : উত্তরাখণ্ড রাজ্যের প্রায় 46 হাজার বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হিমালয়ের অংশ কুমায়ুন হিমালয় নামে পরিচিত।

(ii) গড় উচ্চতা : দক্ষিণের গড় উচ্চতা 600 মিটার কিন্তু উত্তরের গড় উচ্চতা 6,000 মিটারের বেশি।

(iii) পর্বতশ্রেণি : শিবালিক ও মুসৌরি এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি। এই অংশে বেশ কিছু তুষার আবৃত সুউচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে। যথা – নন্দাদেবী, কেদারনাথ, কামেট, গঙ্গোত্রী, ত্রিশূল প্রভৃতি।

(iv) উপত্যকা : এই অংশের দক্ষিণে বেশ কিছু উপত্যকা বা দুন আছে। যথা— দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটাপাতিয়া প্রভৃতি।

(v) হ্রদ : এখানে হিমবাহ সৃষ্ট বেশ কিছু হ্রদ লক্ষ করা যায়, যা তাল নামে পরিচিত। যেমন – নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি।

(vi) হিমবাহু : কুমায়ুন হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য হিমবাহগুলি হল গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, মানা, মিলাম প্রভৃতি।


খ) মধ্য হিমালয় : পশ্চিমে কালি নদী থেকে পূর্বে সিঙ্গালিলা পর্বত শ্রেণি পর্যন্ত সমগ্র নেপাল রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে মধ্য হিমালয় বিস্তারলাভ করেছে। এই অঞ্চলটির বেশ কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত। ভারত হিমালয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের দ্বিতীয় ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ (উচ্চতা 8,598মি.) । এখানে অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গ হলো মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা ।


গ) পূর্ব হিমালয় : 

 নেপালের পূর্বসীমার সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের অংশকে পূর্ব হিমালয় বলে। পূর্ব হিমালয়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা— 

1. দার্জিলিং-সিকিম হিমালয় :

(i) সিঙ্গালিলা থেকে পূর্বে ডানকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

(ii) এখানকার উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল কাঞ্চনজঙ্ঘা , সান্দাকফু , ফালুট, সবরগ্রাম প্রভৃতি।

(ii) কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের দ্বিতীয় তথা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এবং সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

(iii)এখানে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য গিরিপথ হল নাথুলা ও জেলেপলা

(v)এখানকার বিখ্যাত হ্রদগুলি হল মিরিক, ছাঙ্গু প্রভৃতি।


2. ভুটান হিমালয় : পূর্ব হিমালয়ের তা ভুটান হিমালয় নামে পরিচিত।


3. অরুণাচল হিমালয় :

\(i) ভুটানের পূর্বসীমা থেকে নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অসম ও অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত। 

(ii) শিবালিক, হিমাচল ও হিমাদ্রি এই তিনটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি দক্ষিণ থেকে উত্তরে পরপর অবস্থিত। 

(iii) পূর্ব হিমালয়ের এই অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নামচাবারওয়া ।

(iv) এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ হল ডোমলা (লা গিরিপথ), তুলুংলা, ঠগলা, বুমলা প্রভৃতি। 

(v) ডাফলা, কৃষ্ণ, মিরি প্রভৃতি হল এই অংশের বিচ্ছিন্ন পাহাড়।

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

B. কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি: কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম ভাগে কারাকোরাম বা কৃষ্ণগিরি পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণিটি 400 কিমি দীর্ঘ। কয়েকটি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে। যেমন—গডউইন অস্টিন বা কে2 (8, 611 মি. ভারতের সর্বোচ্চ ও পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ), হিডনপিক, ব্রডপিক প্রভৃতি। টেথিস সাগরের সঞ্চিত পলি ভাঁজ হয়ে হিমালয় ও লাদাখ পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময়েই কারাকোরামের উৎপত্তি হয়। কারাকোরামে কয়েকটি হিমবাহ আছে, যেমন—সিয়াচেন (76 কিমি, ভারতের দীর্ঘতম), হিসপার (62 কিমি), বলটারো (60 কিমি), বিয়াফো (60 কিমি), রিমো প্রভৃতি। কারাকোরামের কোনো কোনো অংশে সারা বছরই বরফ জমে থাকে বলে এই পর্বতকে বসুধার ধবলশীর্ষ বলে।


C. উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল: এই অঞ্চলটির দুটি অংশ।

পূর্বাচল : এই অংশটি অরুণাচলপ্রদেশের পূর্বপ্রান্ত থেকে বেঁকে দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। এখানে অনেক ছোটো ছোটো পাহাড়, মালভূমি ও সমভূমি দেখা যায়। 

মেঘালয় মালভূমি : এই মালভূমিটি পূর্ব-পশ্চিমে 240 কিমি দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে 97 কিমি প্রশস্ত। এখানকার গারো পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নুকরেক–1,412 মি.); খাসিয়া পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ শিলং পাহাড় – 1,961উল্লেখযোগ্য। এই মালভূমিতে পার্বত্য গুহা আছে। গারো পাহাড়ের সিজু (1,90০ মিটার দীর্ঘ) গুহাটি বিখ্যাত। একে স্থানীয় ভাষায় ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা বলে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ