Header Ads Widget

মৃত্তিকা সৃষ্টির পদ্ধতি [Process of soil formation ] আলোচনা করো

মৃত্তিকা সৃষ্টির পদ্ধতি [Process of soil formation ] 


 মাটি সৃষ্টি একটি জটিল ও সংশ্লেষকারী প্রক্রিয়া। মাটি সৃষ্টির প্রথম পর্বে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। কিন্তু এই শিলাচূর্ণকে প্রকৃতপক্ষে মৃত্তিকা বলা যায় না। আবহবিকারের মাধ্যমে সৃষ্ট বিচূর্ণিত বা বিয়োজিত শিলাসমূহ ভূপৃষ্ঠের ওপর যে শিথিল আস্তরণের সৃষ্টি করে তাকে রেগোলিথ [regolith] বলে। এটি হল শিলা ও মৃত্তিকার মাঝামাঝি অবস্থা। এই রেগোলিথ বহুকাল ধরে কতকগুলি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। মাটি সৃষ্টির সর্বপ্রকার প্রক্রিয়াকে সম্মিলিতভাবে মৃত্তিকার উৎপত্তি প্রক্রিয়া [Pedogenesis] বা মৌলিক প্রক্রিয়া বলে। মৃত্তিকা সৃষ্টি প্রধানত একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। প্রধানত তিনটি মূল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। মৃত্তিকা সৃষ্টির এই তিনটি মূল প্রক্রিয়া হল [1] প্রাথমিক বা আদি প্রক্রিয়া, [2] মৌলিক প্রক্রিয়া এবং [3] বিশেষ বা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া।


[1]প্রাথমিক প্রক্রিয়া [Primary Processes]: বিজ্ঞানী সাইমনসন [Simonson, 1959] মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলি হল 

(a) সংযোজন [Gain or Addition) : যে প্রক্রিয়ায় মাটির উপরের স্তরে জল, জৈব পদার্থ, O, ও বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ যুক্ত হয় তাকে সংযোজন বলে। 4

(b) অপসারণ [Loss ] : যে ক্রিয়ায় মাটি থেকে জল বাষ্পীভূত হয় এবং মৃত্তিকাস্থিত জৈব পদার্থের জারণ ঘটে ও তার ফলে সৃষ্ট CO, বায়ুতে মিশে যায় তাকে অপসারণ বলে। 

(c) রূপান্তর [Transformation] : মৃত্তিকা মধ্যস্থিত প্রাথমিকখনিজ পদার্থগুলি বিয়োজিত হয়ে গৌণ খনিজে পরিবর্তিত হয়। A

(d) স্থানান্তরণ[Translocation] : জলের মাধ্যমে দ্রবণ অথবা ভাসমান অবস্থায় খনিজ ও জৈবপদার্থ মাটির গভীরতর অংশে যে প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরিত হয় তাকে স্থানান্তরণ বলে।


[2]মৌলিক প্রক্রিয়া (Fundamental Processes] : প্রায় সব পরিবেশেই এই প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করে। মৃত্তিকার উৎপত্তিতে মৌলিক প্রক্রিয়া চার ভাবে কাজ করে। এগুলি হল – 

(a) হিউমিফিকেশন [Humification] : উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ, ঝরা পাতা ও অন্যান্য জৈব পদার্থ মৃত্তিকার উপরিস্তরে কাঁচা জৈব পদার্থরূপে সঞ্চিত হয়। এই সব পদার্থ আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা বিয়োজিত হয়ে যে কালো রঙের পদার্থের সৃষ্টি হয় তাকে হিউমাস বা জৈবমল বলে। হিউমাস সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে হিউমিফিকেশন বলে।

(b)খনিজকরণ [Mineralisation] : খনিজকরণ হল হিউমিফিকেশনের বিপরীত প্রক্রিয়া। হিউমার্স বায়ুর অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয়ে জল, কার্বন ডাই অক্সাইড ও হিউমাস গঠনকারী খনিজ পদার্থে (লোহা, ফসফরাস), রূপান্তরিত হয়। ফলে হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হিউমাস অচিরেই বিনষ্ট হয়ে খনিজ পদার্থ রূপে পুনরায় মুক্তিকায় ফিরে আসে, এই প্রক্রিয়াকে খনিজকরণ বলে ।

(c) এলুভিয়েশন [Eluviation] : মাটির উপরের স্তর থেকে খনিজ পদার্থ বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে কিংবা জলে ভাসমান অবস্থায় মাটির নীচের স্তরে যে প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরিত হয় তাকে এভিয়েশন বলে। মূলত মাটির ঊর্ধ্বস্তর থেকে খনিজ পদার্থগুলি জলের মাধ্যমে অপসারিত হয় বলে মাটির এই উর্ধ্বভরকে এলভিয়াল স্তর বা এলভিয়োটিক হরাইজন বলে, আবার যে পদ্ধতিতে মৃত্তিকার প্রবণীয় পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় মাটির ওপরের স্তর থেকে নীচের স্তরে চুইয়ে চুইয়ে প্রবেশ করে তাকে লিচিং [Leaching) বলে।

(d) ইলুডিয়েশন (Illuviation) : বিভিন্ন যান্ত্রিক কিংবা রাসায়নিক পদ্ধতির মাধ্যমে মৃত্তিকার ওপরের স্তর [A-স্তর] থেকে দ্রবীভূত খনিজ পদার্থগুলি মাটির নীচের স্তরে [B-স্তরে। গিয়ে সজ্জিত হয়। দ্রবীভূত খনিজ পদার্থের এই সঞ্চয় পদ্ধতিকে ইলুডিয়েশন বা অভিবাসন বলে। 


[3] নির্দিষ্ট বা বিশেষ প্রক্রিয়া [Specific Processes] : প্রকৃতিতে কতকগুলি বিশেষ ধরনের প্রক্রিয়া আছে, যেগুলি প্রাথমিক প্রক্রিয়া ও মৌলিক প্রক্রিয়ার ন্যায় সব ধরনের পরিবেশে সক্রিয় নয়। এই নির্দিষ্ট বা বিশেষ প্রক্রিয়াগুলি নিম্নলিখিত ছয় প্রকারের। যথা- 

(a) ল্যাটেরাইজেশন [Laterisation]:  প্রধানত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে যেখানে উষ্ণতা 24°-28° সেন্টিগ্রেড ও 200-300cm বৃষ্টিপাত সেখানে অত্যাধিক ধৌত প্রক্রিয়ার ফলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি ক্ষারকীয় দ্রব্য পদার্থ A স্তর থেকে B স্তরে অপসারিত হলেও আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম দ্রবীভূত না হয়ে স্বস্থানে থেকে যায় । এই প্রক্রিয়াকে  ল্যাটেরাইজেশন বলে। 

(b) পডজলাইজেশন বা চেলুভিয়েশন [Podzolisation or Cheluviation] : শীতল আদ্র তৈগা বা সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে মাটির A স্তর থেকে বিভিন্ন দ্রবণীয় ক্ষারকীয় পদার্থ যেমন -ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম অপসারিত হয় এবং উপরের স্তরে সিলিকার আধিক্য বেড়ে যায় ফলে মাটি ধুসর রঙের হয়ে পড়ে ,একে পডজলাইজেশন বলে।

(c) ক্যালসিফিকেশন [Calcification] : মরুপ্রায় অঞ্চলগুলিতে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি, সেখানে মৃত্তিকার উপরিস্তরে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি থেকে যায়। একেই ক্যালসিফিকেশন বলে। মরুপ্রায়, প্রেইরি ও স্তেপ তৃণভূমি অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার অভাবে ক্যালসিফিকেশন পদ্ধতিতে গঠিত ক্যালসিয়ামের আধিক্যযুক্ত মাটিকে পেডোক্যাল [Pedocal বলে।

(d) স্যালিনাইজেশন [Salinization]: মৃত্তিকায় বিভিন্ন লবণ যেমন ক্যালসিয়াম সোডিয়াম ও পটাশিয়াম সালফেট এবং ক্লোরাইড জাতীয় লবণ সঞ্চিত হওয়াকে স্যালাইনাইজেশন বলে। এই লবণ গুলি সঞ্চিত হয়ে মৃত্তিকার উপরিভাগে একটি লবণাক্ত স্তর গঠন করে একে সোলানচাক মৃত্তিকা বলে । লবণ মিশ্রিত ভৌম জলস্তর ঊর্ধ্বে অবস্থান করলে এবং বাষ্পীভবনের পরিমাণ বৃষ্টিপাতের তুলনায় অধিক হলে এই প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয়।

(e) গ্লেইজেশন [Gleization] : আর্দ্র-শীতল জলবায়ু কিংবা নাতিশীতোয় জলমগ্ন অঞ্চলের মাটিতে অক্সিজেনের জোগান কম থাকেসেখানে বিজারণ প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা গঠিত হয়। একে গ্লেইজেশন বলে। জলাভূমি অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া দেখা যায়।


আরও নোটস পেতে ক্লিক করো ⬇️

মৃত্তিকা গঠনে নিয়ন্ত্রক সমূহ আলোচনা করো

মৃত্তিকা পরিলেখের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ