সমুদ্রস্রোত কাকে বলে : পৃথিবীর আবর্তন গতি, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রজলের লবণতা, উষ্ণতা ৩ ঘনত্বের তারতম্যের ফলে সমুদ্রের উপরিতলের জলরাশি প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে নির্দিষ্ট দিকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রের জলরাশির এইরুপ সঞ্চালনকে সমুদ্রস্রোত বলে ।
সমুদ্রস্রোতের শ্রেণিবিভাগ : ও উয়তার তারতম্যের ভিত্তিতে সমুদ্রস্রোতকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-1 উষ্ণ স্রোত ও 2 শীতল স্রোত।
1. উষ্ণ স্রোত : নিম্ন অক্ষাংশে অধিক উষ্ণতার জন্য সমুদ্রজল উষ্ণ ও হালকা হয়ে পৃষ্ঠপ্রবাহরুপে শীতল মেরুপ্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয়, একে উষ্ণ স্রোত বলে। সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে। একে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোত বলা হয়।
2. শীতল স্রোত : উষ্ণমণ্ডলের জলের অভাব পূরণের জন্য মেরু অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী জলরাশি সমুদ্রের অপেক্ষাকৃত নিম্নাংশ দিয়ে উষ্ণমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয় বলে একে শীতল স্রোত বলে। একে অন্তঃ স্রোত বলা হয়।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ গুলি হল -
1. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ : নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ুর ঘর্ষণে সমুদ্রের জল বায়ুপ্রবাহের দিকে প্রবাহিত হয়।
2. পৃথিবীর আবর্তন গতি : ফেরেলের সূত্রানুসারে, পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সমুদ্রস্রোত উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায় ।
3. উষ্ণতার তারতম্য : উষ্ণমন্ডলের অধিক উয়তায় জলরাশি আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং বহিঃস্রোত হিসেবে শীতল জলরাশির দিকে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে, জলের সমতা বজায় রাখার জন্য শীতল অঞ্চল থেকে শীতল স্রোত অন্তঃস্রোত হিসেবে উমণ্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়।
4. লবণতার তারতম্য : অধিক লবণতা যুক্ত জলের ঘনত্ব বেশি। এই কারণে বেশি লবণতাযুক্ত জল ঘনত্বের সমতা বজায় রাখার জন্য কম ঘনত্বযুক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
5. মহাদেশের অবস্থান : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় ভূখণ্ড অবস্থান করলে সমুদ্রস্রোতের গতিপথের পরিবর্তন ঘটে বা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
6. বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থলঃ সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থলে জলের ওঠানামার ফলে সমুদ্রস্রোত কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়।
7.মেরু অঞ্চলে বরফের গলন : গ্রীষ্মকালে মেরু অঞ্চলে বরফ গলনের জন্য জলরাশি স্ফীত হয় ও লবণতা হ্রাস পায়, ফলস্বরূপ সাময়িকভাবে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
0 মন্তব্যসমূহ