Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আকরিক লোহার প্রকারভেদ, ব্যবহার ও বন্টন (Classification, Utilisation & Distribution of Iron Ore)


লৌহ আকরিক (Iron Ore)


লৌহ আকরিক হল লৌহ বর্গীয় অধাতব খনিজ পদার্থ এবং অপুনর্ভব গচ্ছিত প্রাকৃতিক সম্পদ ।বর্তমানে যন্ত্র সভ্যতা যুগের খনিজের মধ্যে সবচেয়ে অধিক বর্তমানে লোহার ব্যবহার সর্বাধিক । বর্তমানের লোহার ব্যবহার এত ব্যাপক ও বিচিত্র হাওয়াই, একে লোহার যুগ বলে। লৌহ আকরিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় লৌহ ইস্পাত শিল্পতে , তাই লৌহ ইস্পাত শিল্পকে সকল শিল্পের মূল বলে।


∆লোহার প্রকারভেদ : ভূতাত্ত্বিকগন লোহার পরিমাণ এবং রাসায়নিক গঠন বিচারে লোহা আকরিক কে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করেছেন --

1)ম্যাগনেটাইট : এই শ্রেণীর লৌহ আকরিকে লোহার পরিমাণ 75 % ।

বৈশিষ্ট্য : 

• প্রধানত আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলার সাথে মিশ্রিত থাকে।

• সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট প্রকৃতির আকরিক।

• এর রং কৃষ্ণবর্ণ।

• এর চৌম্বক ধর্ম থাকার জন্য বৈদ্যুতিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

2)হেমাটাইট : এই শ্রেণীর লৌহ আকরিকে লোহার পরিমাণ 50 - 70 % ।

বৈশিষ্ট্য : 

• হেমাটাইট লোহিত বা ধূসর রঙের ।

• এতে ফসফরাস ,সিলিকা ,অ্যালুমিনা ইত্যাদি মিশ্রিত থাকে।

• সাধারণত পাললিক শিলায় কেলাসিত ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে।

3)লিমোনাইট : এই শ্রেণীর লৌহ আকরিকে লোহার পরিমাণ 50% এর কম ।

বৈশিষ্ট্য : 

• ধূসর বর্ণের লৌহ আকরিক।

• জলাভূমিতে যে লিমোনাইট পাওয়া যায় তাদের বগ আয়রন বলে।

• এটি জলযুক্ত যৌগের অক্সাইড।

4)সিডেরাইট : এদের লোহার পরিমাণ 20 - 50 % থাকে।

বৈশিষ্ট্য : 

• এটি ধূসর হলুদ ও ধূসর বাদামী রঙের।

• পাললিক শিলার মধ্যে এটি অবস্থান করে।


∆লোহার ব্যবহার : লৌহ আকরিক এর ব্যবহার বেশি নেই । লৌহ আকরিক থেকে যে লৌহ ইস্পাত তৈরি হয় তারই ব্যবহার সবচেয়ে বেশি । লৌহ ইস্পাত এর ব্যবহার বহুমুখী লৌহ আকরিকের সঙ্গে লৌহ সংকর ধাতু মিশিয়ে ইস্পাত তৈরি করা হয় , লৌহ ইস্পাত এর ব্যবহার গুলি নিম্নরূপ - 

1.যন্ত্রপাতি নির্মাণে : স্টিম, টারবাইন, কার্পাস ও কাগজ সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার বৃহৎ যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ রোডরোলার , ক্রেন প্রভৃতি ভারী যন্ত্রপাতি এবং হাতুড়ি, কাটারি ,ছুরি-কাঁচি প্রভৃতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি যন্ত্রপাতি তৈরি হয়।

2.ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : জাহাজ ,রেল ইঞ্জিন, রেল গাড়ির চাকা প্রভৃতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

3.হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : রিক্সা ,সাইকেল ,টোটো প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

4.অটোমোবাইল শিল্প : বাস ,লরি ,অটোরিকশা-ট্রাক প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।

5.পরিবহন শিল্প : সেতু ,রেলপথ, জাহাজ প্রভৃতি তৈরিতে লৌহ ইস্পাত ব্যবহৃত হয় ।

6.যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে : বন্দুক ,পিস্তল ,কামান ,বোমা প্রভৃতি সামরিক কাজে লৌহ ইস্পাত ব্যবহৃত হয়।

7.বৈদ্যুতিক শিল্প : বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রের কাঠামো, যন্ত্রপাতি ,পাখা, ফ্রিজ, হিটার কুলার প্রভৃতি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি লৌহ ইস্পাত দ্বারা নির্মিত হয়।

8.কৃষিকাজ : লাঙনের ফলা ,ট্রাক্টর, হারভেস্টার ঝালাই মেশিন, কোদাল, শাবল প্রভৃতি যন্ত্রপাতি তে নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

9.নির্মাণ কাজ : পাকাবাড়ির স্তম্ভ, দরজা-জানালার রড ,কারখানার কাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

10.গৃহস্থালির উপকরণ : ছুরি ,কাঁচি, হাতা, গামলা কড়াই, সাঁড়াশি, সসপেন ,বাসনপত্র ,সিলিন্ডার, চেয়ার টেবিল প্রভৃতি তৈরিতে লৌহ ইস্পাত ব্যবহৃত হয়।


∆ভারতে আকরিক লোহার বন্টন : আকরিক লোহা হলো ভারতের অন্যতম প্রধান খনিজ সম্পদ। এই দেশ বর্তমানে লৌহ আকরিক উত্তোলনে পৃথিবীতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে। ভারতের অধিকাংশ আকরিক লোহা হেমাটাইট ও ম্যাগনেটাইট প্রকৃতির। ভারতের প্রায় 298 টি লৌহ খনি রয়েছে। নিম্নে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের লোহা আকরিক উত্তোলন অঞ্চল সমূহের বিবরণ দেওয়া হলো-

1.উড়িষ্যা : উড়িষ্যা লৌহ আকরিক উত্তোলন এ বর্তমানে ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে। এ রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলার সুলাইপাত, গুরুমহিষাণী, বাদাম পাহাড় ; সুন্দরগড় জেলার বারসুয়া, বোনাই ; কেওনঝড় জেলার টোডা, কিরিবুরু, বাঁশপানি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য লৌহখনি উত্তোলক কেন্দ্র। 2015-2016 খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা প্রায় 7.99 কোটি টন লৌহ আকরিক উত্তোলন করে।

2.ছত্রিশগড় : লৌহ আকরিক উত্তোলনে ছত্রিশগড় বর্তমানে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এ রাজ্যের বাস্তার জেলার বায়লাডিলা, রাওঘাট এবং দুর্গ জেলার দাল্লিরাজহারা নামক স্থানে বেশিরভাগ লৌহ আকরিকের খনিগুলি অবস্থিত।

3.কর্ণাটক : লৌহ আকরিক উত্তোলন তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে কর্ণাটক । এ রাজ্যে ব্যাপক পরিমাণে লোহা উত্তোলিত হয় মূলত বেল্লারি, চিত্রদুর্গ , চিকমাগালুর ,বিজাপুর ,টুমকুর প্রভৃতি জেলা থেকে।

4.ঝাড়খন্ড : লৌহ আকরিক উত্তোলনে ঝাড়খন্ড বর্তমানে ভারতে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। এ রাজ্যের সিংভূম জেলার নোয়ামুন্ডি ,গুয়া, জামদা, পানশিরাবুরু, নোটুবুরূ প্রভৃতি স্থানে লৌহ আকরিকের খনিগুলি অবস্থিত।

5.গোয়া : গোয়া বর্তমানে ভারতের লৌহ আকরিক উত্তোলন এ পঞ্চম স্থান অধিকার করে । গোয়া রাজ্যে উল্লেখযোগ্য লৌহ আকরিক খনি গুলি হল - বিচোলেম, পিরনা, সিরিগাঁও, ওন্দা,মাপুসা, সানকুয়েলেম প্রভৃতি।

6.মধ্যপ্রদেশ : এই রাজ্যেটি লৌহ আকরিক উত্তোলন এ ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে । এ রাজ্যের জব্বলপুর, ছতরপুর ,নরসিংহপুর, মান্দাসর থেকে লোহা আকরিক উত্তোলিত হয়।

7.অন্ধ্রপ্রদেশ : লৌহ আকরিক উৎপাদনে ভারতের প্রথম স্থান অধিকার করে। এ রাজ্যের কুডাপ্পা, নেল্লোর,কুর্নল, অনন্তপুর প্রভৃতি স্থান থেকে লৌহ আকরিক উত্তোলন করা হয়।

8. মহারাষ্ট্র : লৌহ আকরিক উত্তোলনে মহারাষ্ট্র অষ্টম স্থান অধিকার করে। মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি, চন্দ্রপুরা ও ভান্ডারা জেলায় লৌহ আকরিক উত্তোলিত হয়।

9. অন্যান্য রাজ্য : উপরিলিখিত অঞ্চলগুলি ছাড়াও তামিলনাড়ুর সালেম, কাঞ্চা মালাই, তীর্থমালাই, গোদুমালাই, মাদুরাই, তিরুচিরাপল্লী; রাজস্থানের জয়পুর, উদয়পুর, আলোয়ার, ভিলোঁয়ারা; হরিয়ানার মহেন্দ্রগড় এবং হিমাচল প্রদেশের কাঁকড়া প্রভৃতি স্থানে লৌহ আকরিক উত্তোলন করা হয়।

আকরিক লোহার বন্টন


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ