Header Ads Widget

Responsive Advertisement

অগ্নুৎপাত (Volcanicity) । অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ( Causes of Volcanicity) | অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ সমূহ নিঃসারী ও উদবেধী


অগ্নুৎপাতের সংজ্ঞা (Definition of Volcanocity):

ভু- অভ্যন্তরস্থ ভস্ম, বাম্প, ধোঁয়া, গ্যাসসহ অত্যন্ত উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা দ্রুতগতিতে ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা দুর্বল স্থান দিয়ে বিস্ফোরণসহ অথবা নিঃশব্দে বাইরে নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অগ্নৎপাত বলে।


অগ্ন্যুৎপাতের কারণ (Causes of Volcanocity)

অগ্ন্যুৎপাতের প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ -


1)ভূত্বকে ফাটল বা দুর্বল স্থানের উপস্থিতি : ভূ ত্বকের দুর্বল স্থানগুলিতে ভূ-আলােড়নের প্রভাবে সৃষ্ট সুরঙ্গপথ বা ফাটল দিয়ে অগ্নুৎপাত হয়ে থাকে।


2)পাতের চলন:  

a)অভিসারী পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : অভিসারী পাতসীমান্তে ভারী মহাসাগরীয় পাত হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ওই নিমজ্জিত পাতের সম্মুখবর্তী প্রান্তভাগ ভূগর্ভস্থ উত্তাপে ম্যাগমায় পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে ভূ-ত্বকের ফাটল দিয়ে সামুদ্রিক জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে বাম্পে পরিণত হয় এবং বাম্প ও গ্যাসসহ ম্যাগমা ভূগর্ভে চাপ বৃদ্ধি করতে থাকে। এই চাপের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলে দুর্বল অভিসারী পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে। 

b)প্রতিসারী পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাত :এক্ষেত্রে পরস্পরের বিপরীত দিকে পাতের চলনের ফলে সৃষ্ট ফাটল দিয়ে ভূগর্ভস্থ মাগমার নির্গমন ঘটে এবং মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা গড়ে তােলে।

c)সংরক্ষণশীল পাতসীমানায় অধ্যুৎপাত: সংরক্ষণশীল বা নিরপেক্ষ পাতসীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের বিপরীত দিকে একে অপরকে পাশ কাটিয়ে সঞ্চালিত হয় হলে ট্রান্সফর্ম চ্যুতি গড়ে ওঠে এবং এই দুর্বল অংশ বরাবর অগ্নুৎপাত হয়।


3)পৃথিবীর সংকোচন : বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জেফি (Caftry)-র মতানুসারে, পৃথিবীর ক্রমাগত তাপ বিকিরণের ফলে শীতল ও সংকুচিত হওয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ভূগর্ভের গলিত পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।


4) বাষ্পীয় চাপের প্রভাব : ভূত্বকের ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূপৃষ্ঠস্থ জলের ভূ-অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ ঘটে প্রচন্ড উত্তাপে ওই জল বাষ্প পরিণত হয় ও আয়তনে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাগমা প্রকাস্ঠে প্রবল চাপের সৃষ্টি করে এবং বাষ্প সহ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে নিগত হয়।


5) তেজস্ক্রিয় পদার্থের অস্তিত্ব : ভূগর্ভের দিকে গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইউরেনিয়াম, থােরিয়াম, রেডিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই পদার্থগুলির ফলে উৎপন্ন তাপের প্রভাবে ভূগর্ভের বিভিন্ন শিলা গলে উত্তপ্ত তরল ম্যাগমার সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি ঘটায়।


6)তত্তবিন্দু ও প্লিউমের উপস্থিতিও :যে অঞ্চল গুলিতে হট স্পট বা তপ্ত বিন্দুর উপস্থিতি রয়েছে সেখান থেকে লাভার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহকে প্লিউম (Plume) বলে এবং প্লিউমের উপরে আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠতে দেখা যায়। 


7)গ্যাসীয় পদার্থের প্রভাব: ভূ-অভ্যন্তরে উত্তপ্ত পদার্থ শীতল হয়ে পড়লে এবং ভূ-অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন গ্যাসীয় পদার্থের চাপেও অগ্নৎপাত হয়ে থাকে। 


8)ভু-আলােড়নজনিত প্রভাবঃ ভূ-আলােডনজনিত কারণে কোনাে স্থানে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভূপৃষ্ঠের দূর্বল শিলাস্তরে ফাটল গড়ে ওঠে, যার মাধ্যমে ম্যাগমা বাইরে নির্গত হয়।



অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ সমূহ নিঃসারী ও উদবেধী 


*নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ :


1)আগ্নেয়গিরি (Volcanic Cone / volcano): ভুঅভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা কেন্দ্রীয় অুপাতের ফলে বাইরে নির্গত হয় এবং নির্গমন নলের চারদিকে শীতল ও কঠিন হয়ে শঙ্কু আকৃতির যে পর্বত গড়ে তােলে তাকে আগ্নেয় পর্বত বা আগ্নেয়গিরি বলে।


2)হর্নিটো (Hornito ): লাভা প্রচণ্ড ঠান্ডা ও জমাটবন্দু হয়ে খাড়া খালবিশিষ্ট শঙ্কু আকৃতির ক্ষুদ্র আগ্নেয়গিরি গড়ে উঠলে তাকে হর্নিটো বলে।


3)প্লাগডোম : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা ভূপৃষ্ঠে জমা হয় এবং এর ফলে খাড়া ও স্বল্প উচ্চতাবিশিষ্ট (সাধারণত 1000 মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট) গম্বুজাকৃতির যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে তাকে প্লাগডোম বলে।


4) থােলয়েড (Tholaid) : প্লাগডােমের শীর্ষদেশ প্রশস্ত ছাতার মতন আকৃতিবিশিষ্ট হলে তাকে থােলয়েভ বলে।


5)মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা Mid-0ceanie Ridge) : সমুদ্রবক্ষে সৃষ্ট দীর্ঘ ফাটল দিয়ে অগ্ন্যুদগমের প্রভাবে ওই ফাটল বরাবর মধা-সামুদ্রিক শৈলশিরা গড়ে ওঠে। 


6)আগ্নেয় দ্বীপ (Volcanic island) : অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা মহাসাগর বা সাগরের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় দ্বীপ গড়ে তােলে। উদাহরণ ও জাপান দ্বীপপুঞ্জ, শাখালিন, ফিলিপাইনস প্রভৃতি


7)জালামুখ (Crater) : আগ্নেয়গিরির নির্গমন পথ যা দিয়ে লাভা, ভস্ম, গ্যাস প্রভৃতি নির্গত হয়, তার উপরের অংশকে জালামুখ বলে।


8)ক্যালডেরা(Caldera) :বিশালায়তন, অবতল আকৃতিবিশিষ্ট,অগভীর, বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার জালামুখকে ক্যালডেরা বলে।


9)আগ্নেয় হ্রদ (Volcanic Lake) : ক্যালডেরা ও জ্বালামুখে বৃষ্টির জল সঞ্চিত হয়ে আগেয় হ্রদ গঠন করে ।


10)লাভাক্ষেত্র (Lava Field) : লাভা বিশাল অঞলব্যাপী বিস্তীর্ণ হলে লাভা ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। লাভার প্রকৃতি লাভাক্ষেত্রের গাঠনিক বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। 


*উদবেধী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ :


1)সিল (SilI) : যখন কোনাে গঠনতলে বা পাললিক শিলাস্তরের সমান্তরালে ম্যাগমা অবস্থান করে তবে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে পাত বা স্ল্যাবের মতন অবয়ব গড়ে তােলে, তখন তাকে সিল বলে।


2)ডাইভ (Dyke) : ভূত্বকীয় উল্লম্ব ফাটলের ভিতর দিয়ে উত্থানের সময় ম্যাগমা ওই ফাটলের অভ্যন্তরে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে যে উল্লম্ব আগ্নেয় অবয়ব গড়ে তােলে তাকে ডাইক বলে।


3)লোপোলিথ (Lopolith) : শিলাস্তরের স্থানীয় গাঠনিক প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে গঠিত সরা বা চামচের মতাে অবতল প্রকৃতির আগ্নেয় উদবেধকে লেগােলিথ বলে।


4)ল্যাকোলিথ (Lacolith) : অনুভূমিকভাবে অবস্থিত পাললিক শিলান্তরের মধ্যে ম্যাগনার অনুপ্রবেশের হলে যে গম্বুজ বা উত্তল লেন্সের মতন আগ্নেয় উদভেধ গড়ে ওঠে, তাকে ল্যাকোলিথ বলে।


5)ব্যাথােলিথ (Batholith) : ভূত্বকের যথেষ্ট গভীরতায় ম্যাগমার সঞ্চয় এর ফলে সৃষ্ট বিশাল আয়তন বিশিষ্ট অবয়বকে ব্যাথোলিথ বলে। 


6)ফ্যাকোলিথ(Phacolith) : ভঙ্গিল শিলাস্তরের ঊর্ধ্ব ভঙ্গ ও_অধােভঙ্গে ম্যাগমা সঞ্চিত হয়ে যে অবয়ব গঠন করে তাকে ফ্যাকোলিথ বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ