Header Ads Widget

Responsive Advertisement

এল নিনো (EI Nino) | এল নিনোর প্রভাব (Effect of El-Nino)

               এল নিনো (EI Nino)

 


অর্থ : ‘EI Nino' (এল নিনো)-এর আক্ষরিক অর্থ হল 'দস্যি হাওয়ার ঘূর্ণিস্রোত’। স্পেনীয় শব্দ ‘ELO NINO'-এর অর্থ ‘দুরন্ত বালক বা ‘শিশু খ্রিষ্ট’ (Child Christ)। যে বছর সাধারণ অবস্থা বিরাজ করে বা বজায় থাকে তাকে 'La Nada' (স্প্যানিশ 'La Nada' কথার অর্থ হল ‘The nothing) বলা হয়। আর যে বছর সাধারণ অবস্থার বিঘ্ন ঘটে ভিন্ন প্রকৃতির আবহাওয়া বিরাজ করে বা বজায় থাকে তাকে ‘El Nino' বলে ।


সংজ্ঞা : প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সাধারণত পেরু ও ইকুয়েডর উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী শীতল পেরু বা হামবোল্ড স্রোত প্রবাহিত হয়। কোনো কোনো বছর নানা প্রাকৃতিক কারণে ডিসেম্বর মাসে শীতল উত্তরমুখী পেরুস্রোতের পরিবর্তে যে দক্ষিণমুখী অস্থির উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি হয় এবং যার প্রভাবে বিশ্ব জলবায়ুতে নানা ধরনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, সেই উরু দক্ষিণমূখী স্রোতকে এল নিনো বলে। সুতরাং এল নিনো বলতে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূল অর্থাৎ পশ্চিম উপকূল বরাবর আকস্মিক ভাবে উদ্ধৃত এবং দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত অনিয়মিত উয় সমুদ্রস্রোতকে বোঝায়।

বৈশিষ্ট্য (i) উষ্ণ স্রোত : এটি একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত (ii) অবস্থান : এটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি উপকূল বরাবর নিরক্ষীয় অঞ্চলে থেকে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে এই অস্থির স্রোত প্রবাহিত হয়। (iii) অক্ষাংশগত অবস্থান : এই স্রোত 3° দক্ষিণ থেকে 36° দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে প্রবাহিত হয়ে থাকে (iv) বৃষ্টিপাত : এই স্রোতের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের বৃদ্ধি ঘটে। (v) ভারতের জলবায়ুতে প্রভাব : এই স্রোত (এল নিনো) আটলান্টিক পশ্চিমীয় স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লে ভারতের মৌসুমী বায়ুর উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এই স্রোত ভারত মহাসাগরে উয় জল বয়ে আনে। (vi) স্থায়িত্ব : এটি খুবই অল্প সময় স্থায়ী হয়, মাত্র 14-22 মাস। (vii) সংঘটন : এটি প্রত্যেক বছর সৃষ্টি হয় না, 2-7 বছর অন্তর দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে ডিসেম্বর মাসে উৎপত্তি লাভ করে থাকে।


এল নিনোর প্রভাব (Effect of El-Nino) : এল নিনোর আবির্ভাব ঘটলে পৃথিবীতে বিপরীতধর্মী আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে।নিম্নে এল-নিনোর প্রভাব আলোচনা করা হল – 

(1) বন্যার আশঙ্কা : এল নিনোর প্রভাবে নিরক্ষরেখার যেসব স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় সেসব স্থানের আকাশে বজ্র মেঘের সঞ্চার ঘটে। এর ফলে পেরু ও ইকুয়েডরে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে বলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

(2)শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি : এল নিনোর প্রভাবে উত্তর আমেরিকার মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অংশ এবং কানাডায় শীতের প্রকোপ হ্রাস পায়। 

(3) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময়কাল : এল নিনোর কারণে পূর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বৃষ্টিপাতের সময়কাল বেড়ে যায়। ফলে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে।। 

(4) শুষ্ক আবহাওয়ার সৃষ্টি : এল নিনোর আবির্ভাবের বছরে দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।

(5) বাতাসের উষ্ণতার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি : যে বছর এল নিনো সংঘটিত হয় সে বছর এল নিনোর আবির্ভাবের পর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মকালের অর্ধেকের বেশি সময় বাতাসের উন্নতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় । 

(6) দাবানল : এল নিনোর কারণে আমাজন অববাহিকা, কলম্বিয়া, মধ্য আমেরিকা, দঃ-পঃ এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। ফলে দাবানলের সৃষ্টি হয় ও দাবানলের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

(7)বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি : স্বাভাবিক বছরগুলিতে ইকুয়েডর ও পেরুর শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে 10-13 সেমি সেখানে এল নিনোর বছরগুলিতে বৃষ্টিপাত 300-400 সেমি হয়ে থাকে। ফলে ফসলের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। 

(8) খরা ও বন্যা : এল নিনোর বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে খরা এবং পের, চিলির শুষ্ক মরুভূমিতে অত্যধিক বৃষ্টির ফলে বন্যা দেখা দেয়। 

(9) মৌসুমী বায়ুর উপর এল নিনোর প্রভাব : (i) এল নিনোর প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায় । (ii) এল নিনোর প্রভাবে বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে। উচ্চচাপের স্থানে নিম্নচাপ আবার নিম্নচাপের স্থানে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। ফলে মৌসুমী বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়। (iii) এল নিনোর প্রভাবে ভারতে অনিয়মিত ও কম বৃষ্টিপাত হয়। ফলে পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে খরার সৃষ্টি হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ