Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গ্রিনহাউস প্রভাব (Green House Effect) | গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধির কারণ ও গ্রিনহাউসের প্রভাব (Causes & Effect of Green House)

 গ্রিনহাউস প্রভাব (Green House Effect)


গ্রিনহাউস প্রভাব (Green House Effect) : সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি প্রথমে ভূপৃষ্ঠ এবং তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। পরে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি [infrared radiation] বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কিছু গ্যাস (অর্থাৎ জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড, ধূলিকণা প্রভৃতি) দ্বারা শোষিত হয়। ফলে ভূপৃষ্ঠের বিকিরিত তাপের কিছু অংশ মেঘ ও বায়ুমণ্ডলের স্তরকে ভেদ করে ফিরে যেতে পারে না। বরং প্রতি বিকিরিত হয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে এবং পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবীকে গরম রাখার এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে গ্রিন হাউস প্রভাব বলে। 


গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধির কারণ (Causes of Green House Effect) :Green house effect বৃদ্ধির কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল -

1. জীবাশ্ম জ্বালানী : জ্বালানী কাঠ, কয়লা খনিজতেল ব্যবহার করার ফলে বাতাসে CO2, CO প্রভৃতি গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে মিশছে। জীবাশ্ম জ্বালানী অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে দূষিত গ্যাস সমূহ বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করছে। সূর্যের বৃহৎ তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আর যেতে পারে না এবং পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।

2 দাবানল : বনের আগুনকে দাবানল বলে। দাবানলের ফলে বৃহৎ বনভূমি ধ্বংস হয় ফলে CO2, CO গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে মিশছে। দাবানল গ্রীণ হাউস প্রভাব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

3. যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া : যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি হয় CO2, CO হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোকার্বন সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড মতো বিষাক্ত গ্যাস। এই সমস্ত গ্যাসগুলি Green House effect ঘটাতে সাহায্য করে। 1 lit পেট্রোল পোড়ালে তৈরি হয় 2.17 kg CO, গ্যাস।

4. পচনশীল জৈব আবর্জনা : পচনশীল জৈব আবর্জনা গবাদিপশুর গোবর, ধান খেত ও জলাভূমি থেকে নিঃসৃত হয় মিথেন গ্যাস। এই মিথেন গ্যাস গ্রীণ হাউস এফেক্ট সৃষ্টিতে 17% ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে প্রতি বৎসর প্রায় 540 মিলিয়ন টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে মিশছে।

5. রেফ্রিজারেটর ও AC মেশিন : রেফ্রিজারেটর ও AC মেশিন, প্রভৃতি যন্ত্রে CFC ব্যবহার করা হয়। CO অণুর চেয়ে CFC অণু 10 হাজার গুণ বেশি উষ্ণকরণ ক্ষমতা রয়েছে। এই সকল যন্ত্রে ব্যবহৃত গ্যাস গ্রীণ হাউস এফেক্ট ঘটায়।

6. বিভিন্ন শিল্পে : অটোমোবাইল, প্লাস্টিক ফোম, স্প্রে ক্যান শিল্পে, CFC-11, রং শিল্পে Computer এর সিলিকন চিপ তৈরিতে CFC ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট তৈরিতে CFC ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পগুলি হতে বিষাক্ত গ্যাস গ্রীণ হাউস এফেক্ট ঘটাতে সাহায্য করে।

7. অরণ্য ছেদন : অরণ্য ধ্বংসের ফলে CO, পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প ও বসতি বিস্তারের ফলে প্রতি বছর প্রায় 3% হারে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে সালোকসংশ্লেষের হার দীরে ধীরে কমছে। ফলস্বরূপ CO, এর পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে যা Green House effect প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।

8. নগরায়ন ও শিল্পায়ন : নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে বনভূমির পরিমাণ দ্রুত হারে কমছে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে CO2, CO, CH4, CFC,প্রভৃতি হাউস গ্যাসগুলি।

9. পারমাণবিক বিস্ফোরণ : পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হয় CO2, CO, CH4, CFC, SO2, হাইড্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরিণ বায়ুমণ্ডলে মিশেছে ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে মিশে পৃথিবীতে উত্তপ্ত করছে। 

10. আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত : অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরি থেকে প্রচুর পরিমাণে ধুলো, ছাই, CO, CO2, SO2, N2O, CH4, নির্গত হয় ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায করে।


গ্রিনহাউসের প্রভাব (Effect of Green House) :

Green house গ্যাসগুলির প্রভাবে পৃথিবীতে উষ্ণতা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীণ হাউসের প্রভাবগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

1. উষ্ণতা বৃদ্ধি : কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন এবং জলীয় বাষ্প সমন্বিত বায়ুস্তর পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে অবলোহিত রশ্মির (Infra-red ray) প্রতিফলন ঘটিয়ে মহাশূন্যে বিকিরিত হতে দেয় না। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের উয়তা বাড়ে। ওইসব গ্যাসের আধিক্যে উন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

2. হিমবাহের গলন : গ্রীণ হাউস ক্রিয়ার জন্য যদি পৃথিবীর উষ্ণতা 2°C থেকে 4.5°C বাড়ে তাহলে মেরুপ্রদেশের কুমেরু এবং গ্রীণল্যান্ড অঞ্চলে বরফ ও হিমবাহ সব গলে অন্তর্হিত হবে। যদি পৃথিবীর বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চল ঐ আচ্ছাদন থেকে মুক্তি লাভ করে, তাহলে হিসাব মতো সাগর ও মহাসাগরের জলতল প্রায় 6 মিটার বেড়ে যাবে। ফলাফল স্বরূপ —(i) স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ব্যাহত হবে, (ii) উপকূলবর্তী এলাকা জলমগ্ন হবে।

3. সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে মেরু অঞ্চলের বরফ বেশি মাত্রায় গলবে এবং এর ফলশ্রুতি হিসেবে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বাড়বে। এর ফলে বাংলাদেশ, সুন্দরবন অঞ্চল, নেদারল্যান্ড, ইজিপ্ট, মার্শাল দ্বীপ প্রভৃতির বেশ কিছু অংশ সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে।

4. সমুদ্রোপকূলের ওপর প্রভাব : মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে। বন্যার পরিমাণ আরও বাড়বে। সমুদ্রসংলগ্ন অঞ্চল জলের তলায় চলে যাবে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

5. বাস্তুরীতির ওপর প্রভাব : গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে বিভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের যথেষ্ট ক্ষতি হবে। কারণ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিভিন্ন উন্নতায় জীবনধারণ করে। উয়তার পরিবর্তন ঘটলে ওইসব উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে।

6. বনাঞ্চলের ওপর প্রভাব : গ্রিনহাউসের প্রভাবের ফলে পুরোনো দিনের বহু বনাঞ্চল ধ্বংস হবে এবং কিছু কিছু নতুন ধরনের উদ্ভিদের সৃষ্টি হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, আগামী একশো বছরে বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভিদ মেরু অঞ্চলের দিকে প্রায় একশো মাইল থেকে তিনশো চল্লিশ মাইলের মধ্যে সরে যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

7. জলবায়ুর পরিবর্তন : গ্রিনহাউসের প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে যে জলচক্র আছে তার পরিবর্তন ঘটবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অধিক পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হবে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকা একেবারে শুষ্ক হয়ে পড়বে। গ্রীষ্মকালে গরমের পরিমাণ অধিক হবে। আবার বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা হবে।

8. প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি : বায়ুমণ্ডলে CO, পরিমাণ বাড়লে ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্র জলের উষ্ণতা বাড়লে প্রবল ঘূর্ণীঝড় যেমন—সাইক্লোন, টর্নেডো, ক্যাটারিনা, বিজলি, হ্যারিক্যান, টাইফুন, উইলি উইলির মতো বিধ্বংসী ঝড়ের মাত্রা বাড়বে।

9. স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব : গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে তাপমাত্রা এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, রাত ও দিনের তাপমাত্রার মধ্যে তেমন কোনো প্রভেদ থাকবে না। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন—ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পীতজ্বর, প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব বাড়বে। বহু মানুষ হাঁপানি, অ্যালার্জি প্রভৃতি রোগের প্রকোপে পড়বে।

10. মরুভূমির ওপর প্রভাব : গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে দিনে দিনে মরুভূমির উন্নতা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি আরও শুষ্ক হয়ে মরুভূমির বিস্তৃতি আরও বাড়বে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ