Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মৎস্যশিকার উন্নতি লাভের কারণ (Causes of the Development of Fishing Ground in Temperate Region)

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মৎস্যশিকার উন্নতি লাভের কারণ : 


অবস্থান : উভয় গোলার্ধে 30°-70° অক্ষরেখার মধ্যে চিন, রাশিয়া, জাপান, নরওয়ে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ নাতিশীতোয় জলবায়ুর প্রভাবাধীন। এই জলবায়ু অঞ্চল বাণিজ্যিক মৎস্য শিকার ক্ষেত্র রূপে প্রসিদ্ধ এবং এই অঞ্চলে অত্যন্ত উন্নত পদ্ধতির সাহায্যে মাছ শিকার করা হয়ে থাকে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মৎস্যশিকার উন্নতি লাভের কারণ গুলি হল নিম্নরূপ --


A. প্রাকৃতিক কারণসমূহ :

1. অগভীর বা বিস্তৃত মহিসোপান : 200 মিটার গভীরতাযুক্ত মহাদেশের প্রান্তভাগের স্বল্প ঢালু অংশ মহিসোপান নামে পরিচিত। সূর্যালোক সাধারণত এই 200 মিটার গভীরতা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। অগভীর ও বিস্তৃত মহিসোপান অঞ্চলে পর্যাপ্ত উন্নতা থাকায় বিভিন্ন সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং মাছের অন্যতম খাদ্য প্ল্যাংকটন জন্মায়। এছাড়া মাছের ডিম প্রসবের ক্ষেত্রেও মহিসোপান অত্যন্ত আদর্শ স্থান এবং স্থলভাগ থেকে আগত বিভিন্ন আবর্জনা, যা মাছের অন্যতম খাদ্য, তা এই অঞ্চলে এসে সঞ্চিত হয়।  

2. মগ্নচড়ার অবস্থান : হিমশৈল দ্বারা বয়ে আসা পদার্থগুলি সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চিত হয়ে যে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে, সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে প্ল্যাংকটন জন্মানোর কারণে মাছের সমাগম ঘটে। যেমন—জর্জেস ব্যাংক, গ্র্যান্ড ব্যাংক, ডগার্স ব্যাংক, রক্কল ব্যাংক প্রভৃত্তি। 

3. উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোতের সম্মিলন : উয় ও শীতল স্রোতের সম্মিলনের ফলে শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলি উয় স্রোতের প্রভাবে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত পদার্থগুলি মহিসোপানে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়া গড়ে তোলে এবং এখানে মাছের খাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান থাকায় এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য শিকার ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। 

4. প্ল্যাংকটন আধিক্য : মাছের অন্যতম খাদ্য হল প্ল্যাংকটন। উয় ও শীতল স্রোতের সম্মিলন স্থলে যেখানে হস্থলভাগ থেকে বয়ে আসা আবর্জনাগুলি জমা হয়, সেখানে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাংকটন জন্মায়, কারণ এই আবৰ্জনাগুলি থেকে প্ল্যাংকটন পুষ্টি লাভ করে।  

5. নাতিশীতোষ্ণ জঁলবায়ুর উপস্থিতি : সাধারণত শীতল আবহাওয়ায় মাছ সহজে সংরক্ষণ করা যায় এবং 20°C এর কম উন্নতায় অধিকাংশ মাছের সমাবেশ ঘটায় নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে বেশিরভাগ মৎস্যশিকার ক্ষেত্রগুলি গড়ে উঠেছে। 

6. ভগ্ন উপকূলরেখা : নাতিশীতোয় অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানেই ভগ্ন সমুদ্র উপকূল লক্ষ করা যায়। এই অঞ্চলে অসংখ্য আধুনিক ও উন্নত বন্দর গড়ে উঠেছে এবং ফলস্বরূপ বাণিজ্যিক মৎস্যশিকার ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটেছে । 

7. বন্ধুর ভূপ্রকৃতি : নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত অধিকাংশ দেশেই বন্ধুর ভূপ্রকৃতি বিশেষত পর্বতের উপস্থিতি থাকায় এখানকার অধিবাসীরা কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না এবং বাধ্য হয়ে তাদের মৎস্য শিকারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে হয়। যেমন—নরওয়ে ও জাপানের উপকূলভাগ পর্বত অধ্যুষিত এবং এই দেশগুলি মৎস্য শিকারে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ।

8. সরলবর্গীয় অরণ্যের অবস্থান : নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলের সরলবর্গীয় অরণ্যের নরম কাঠ দিয়ে মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় নৌকো, ট্রলার, জাহাজ প্রভৃতি তৈরি করা হয়, যা এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক মৎস্য শিকার ক্ষেত্রের বিকাশে সাহায্য করে।


B. আর্থ-সামাজিক কারণসমূহ :

1. উন্নত প্রযুক্তি : বর্তমানে নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলে উন্নত প্রযুক্তি, যেমন—উপগ্রহ চিত্র, বিমান চিত্র, GPS প্রভৃতির সাহায্যে খুব কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে মাছের অবস্থান নির্ধারণ করা এবং মাছ আহরণ করা সম্ভব হয়। 

2. শ্রমিকের জোগান : নাতিশীতোয় অঞ্চলের জনবসতি অত্যন্ত ঘন হওয়ায় এখানে শ্রমিকের জোগানের ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ করা যায় না। মাছ আহরণ যেহেতু একটি শ্রম নিবিড় কাজ, তাই এক্ষেত্রে মাছ শিকার, মাছ সংরক্ষণ, মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতি বিভিন্ন কাজে অসংখ্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। 

3. আধুনিক বন্দর : নাতিশীতোয় অঞ্চলের বন্দরগুলি অত্যন্ত আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ। এই ধরনের বন্দরের সাহায্যে দূর সমুদ্রের জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, মাছ সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজ সহজেই করা সম্ভব হয়। 

4. মূলধনের জোগান : আধুনিক পদ্ধতিতে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ শিকারের জন্য যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। এই অঞ্চলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে খুব সহজেই মূলধনের জোগান পাওয়া যায়। 

5. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : নাতিশীতোয় অঞ্চলে উন্নত মানের সড়ক পথের সাহায্যে মৎস্য বন্দরের সঙ্গে বাজারের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় এবং আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রভাবে সহজেই মাছ বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হয়। 

6. চাহিদা : এই অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি এবং মাছের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় মাছের সুবিশাল বাজার গড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। 

7. মৎস্যনির্ভর শিল্পের উন্নয়ন : নাতিশীতোয় অঞ্চলে মাছ ও মাছের থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন দ্রব্য এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠে। যেমন—সামুদ্রিক প্রাণী ও মাছের দেহ থেকে তেল নিষ্কাশন, বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন প্রভৃতি। 

8. হিমাগারের ব্যবস্থা : আহরিত মাছের সম্পূর্ণ অংশটি বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয় না এবং মাছ দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এই উদ্বৃত্ত মাছ সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। নাতিশীতোয় অঞ্চলে যথেষ্ট সংখ্যক উন্নত ও আধুনিক হিমাগারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ