জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বা বিনাশের কারণসমূহ
কোনো প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বাসস্থলে সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বা গোষ্ঠীর অবলুপ্তি বা সংখ্যা হ্রাসকে প্রজাতির বিলুপ্তি বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতানুসারে, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় 4কোটি প্রজাতির অস্তিত্ব থাকলেও প্রতি বছরে এর মধ্যে প্রায় 10 হাজার প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানী পল এলরিচ্ (Paul Ehrlich) -এর মতানুযায়ী, 2050 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 1/2 বা 1/3 অংশ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বা বিনাশের কারণসমূহ (Causes of Loss of Biodiversity) : জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণসমূহ গুলি হল-
1)বাসস্থান বিলুপ্তি (Habitat loss) : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য শিল্পাঞ্চল, নগর, রাস্তাঘাট, কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতি তৈরি করা হচ্ছে। এই সমস্ত কাজই জীবের প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস হওয়ার মূল কারণ। কোনো প্রজাতির অবলুপ্তির মুখ্য কারণ হল এই প্রাকৃতিক বাসস্থানের বিলুপ্তি।
2)শিকার এবং চোরাশিকার (Hunting and poaching) : মানুষ অর্থের লোভে বা নিছক শিকারের আনন্দে পশুপাখি শিকার করে। এর ফলে আজ অনেক বন্যপ্রাণীই অবলুপ্তির মুখে। তাছাড়া বিভিন্ন চোরাশিকারিরা বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া, লোম, দাঁত, শিং প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করার জন্য চোরাশিকারে লিপ্ত হচ্ছে।
3)অতি ব্যবহার (Over exploitation) : প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, যেমন—বৃক্ষছেদন, পশু-পাখি নিধন, মৃত্তিকা কর্ষণ, অতিরিক্ত জলসম্পদের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
4)দূষণ (Pollution) : মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে শিল্পকারখানার বর্জ্যপদার্থ, যানবাহনের ধোঁয়া, কীটনাশক, রাসায়নিক সারের ব্যবহার পরিবেশকে দ্রুত দূষিত করে তুলছে যা জীববৈচিত্র্য হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ।
5)বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ (Introduction of exotic species) : অনেক সময় বহিরাগত প্রজাতির কারণে স্থানীয় প্রজাতির ক্ষতির সম্ভাবনা লক্ষ করা যায়। যেমন—মরিশাস দ্বীপপুঞ্জে আগে ডোডো নামক উড্ডয়ন ক্ষমতাবিহীন একপ্রকার পাখি বাস করত। পরবর্তীকালে ওই দ্বীপে কুকুর ও শুকরের প্রতিপালনের কারণে তাদের আক্রমণের | ফলে পৃথিবী থেকে ডোডো পাখি বিলুপ্ত হয়েছে।
6)প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural calamities) : বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন—খরা, বন্যা, তুষারপাত, ভূমিকম্প, সুনামি, সাইক্লোন, দাবানল ইত্যাদি কারণে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটছে।
7)জলবায়ুর পরিবর্তন (Change in environment) : ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এর ফলে বহু জীব প্রজাতির জীবনযাত্রা, প্রজনন ক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে যা ক্রমশ তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে।
8)বিশ্ব উন্নায়ন (Global warming) : বায়ুদূষণের ফলে পৃথিবীর গড় উন্নতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে মেরু অঞ্চলের উচ্চ পর্বতশিখরে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে। যার ফলে, সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে বহু জীব প্রজাতির অস্তিত্ব বর্তমানে সংকটাপন্ন।
0 মন্তব্যসমূহ