Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) | বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহ (Components of Ecosystem)


বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)


∆বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) : ইকোসিস্টেম' শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। Eco শব্দের উৎপত্তি Oikes' থেকে, যার অর্থ হল বাসস্থান এবং ‘System' শব্দটির অর্থ হল নীতি বা রীতি। 1935 খ্রিস্টাব্দে সালে এ. জি. ট্যান্সলে সর্বপ্রথম ইকোসিস্টেম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতি এবং ওই অঞ্চলের অজীব উপাদানগুলির মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক গঠিত হয়, তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।

এ. জি. ট্যান্সলে এর মতে “বাস্তুতন্ত্র হল একটি ক্রিয়ামূলক একক যেখানে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অন্তর্গত জীবজ এবং অজীবজ উপাদান একত্রে পরস্পরের ওপরে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে।”


∆বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহ (Components of Ecosystem) 

বাস্তুতন্ত্রের প্রধান দুটি উপাদান হল – অজীবজাত বা জড় উপাদান এবং জীবজাত বা সজীব উপাদান।

1.অজীবজাত বা জড় উপাদান (Abiotic Components) : বাস্তুতন্ত্রের অজীবজাত উপাদানগুলি আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত—

a) জলবায়ুগত উপাদান (Climatic Substances) : জলবায়ুগত উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সূর্যরশ্মি, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি। 

b) অজৈব উপাদান (In organic Substances) : অজৈব উপাদানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, হাইড্রোজেন, সালফার প্রভৃতি খনিজ চক্রের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়। 

c) জৈব উপাদান (Organic Substances) : পরিবেশে উপস্থিত ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন প্রভৃতি জড় ও সজীব উপাদানের মধ্যে সমন্বয়ে সাধনে সহায়তা করে।


2.জীবজাত বা সজীব উপাদান (Biotic Components) :পুষ্টি স্তর অনুসারে বাস্তুতন্ত্রের জীবজাত উপাদানগুলি দু'ভাগে বিভক্ত, যেমন : স্বভোজী উপাদান ও পরভোজী উপাদান।

a) স্বভোজী বা অটোট্রফিক উপাদান (Autotrophic components) বা উৎপাদক (Producer) : বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব সৌরশক্তি শোষণ করে বিভিন্ন অজৈব উপাদান সহযোগে (প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন) জটিল খাদ্য প্রস্তুতে সক্ষম, তাদের স্বভোজী উপাদান বলা হয়। সবুজ উদ্ভিদ, ক্লোরোফিলযুক্ত প্রাণী, সালোক-সংশ্লেষকারী ব্যাকটিরিয়া, কেমোসিন্থেটিক জীবাণু ইত্যাদি বাস্তুরীতির স্বভোজী উপাদান।


b) পরভোজী বা হেটেরোট্রফিক উপাদান (Heterotrophic components) বা খাদক (Consumer) : বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্য উৎপাদনে অক্ষম এবং খাদ্যের জন্য উৎপাদকের তৈরি খাদ্যের উপর নির্ভরশীল, তাদের পরভোজী উপাদান বা কন্‌জিউমার (consumer) বলে। এরা আবার বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত।

1)খাদ্য গ্রহণের প্রকৃতির ভিত্তিতে : 

(a) তৃণভোজী (Herbivores) : যেসব খাদক খাদ্যগ্রহণের জন্য সরাসরি সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে, তাদের তৃণভোজী বলে। যেমন—ছাগল, হরিণ প্রভৃতি। 

(b) মাংসাশী (Carnivores) : যেসব প্রাণী তৃণভোজীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের মাংসাশী বলে। যেমন—সিংহ, বাঘ প্রভৃতি। 

(c) সর্বভুক (Omnivores) : যেসব খাদক উৎপাদক ও অন্যান্য সব স্তরের খাদকদেরই খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তাদের সর্বভুক বলে। যেমন – ভাল্লুক,মানুষ প্রভৃতি।

2)খাদ্য খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে : 

 (i) প্রাথমিক খাদক (Primary consumer) : যে সব খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি স্বভোজী জীব অর্থাৎ উদ্ভিদদের ওপর নির্ভরশীল, যেমন: স্থলজ ও জলজ কীট-পতঙ্গ, জলজ কবচী শ্রেণির প্রাণী, তৃণভোজী প্রাণী ইত্যাদি। 

(ii) গৌণ খাদক (Secondary consumer) : যে সব খাদক খাদ্যের জন্য প্রাথমিক খাদকদের ওপর নির্ভরশীল, যেমন: ছোটো ছোটো মাংসাশী প্রাণী, অর্থাৎ কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি এবং পতঙ্গভুক প্রাণী অর্থাৎ‍ ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোটো মাছ ইত্যাদি।  

(iii) প্রগৌণ খাদক (Tertiary consumer) : যে সব খাদক খাদ্যের জন্য গৌণ খাদকদের ওপর নির্ভরশীল যেমন : বড় মাংসাশী প্রাণী, অর্থাৎ—বাঘ, সিংহ, কুমির, বাজপাখি, শোল, শাল,বোয়াল, হাঙর, তিমি ইত্যাদি।


c) বিয়োজক(Decomposer) : যেসব অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরজীবী জীবাণু উৎপাদক ও খাদকদের বিয়োজিত দেহাবশেষের কিছুটা অংশ শোষণ করে এবং বাকি অংশকে সাধারণ উপাদানে পরিণত করে যা স্বভোজী উপাদান বা উৎপাদকেরা গ্রহণ করে, তাদের বিয়োজক (Decomposer) বলে। যেমন—ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ