Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পাত সংস্থান তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory)

                      পাত সংস্থান তত্ত্ব 


ভূমিকা : ভূমিরূপ গঠন এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তত্ত প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে পাত সংস্থান তত্ত্ব টি একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ যার সাহায্যে ভূতাত্ত্বিক যাবতীয় ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায় যেমন সমুদ্র সম্প্রসারণ, মহাদেশীয় সঞ্চারণ ,ভূমিকম্প ,অগ্নুৎপাত ইত্যাদি। ফরাসি বিজ্ঞানী লি পিচো তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন । উইলসন প্রথম পাত সংস্থান তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীকালে ম্যাকেঞ্জি অলিভার পার্কার প্রোব বিজ্ঞানীগণ এর সম্পর্কে মতবাদ প্রদান করেন।


পাতের ধারণা : দৃঢ় শিলামন্ডলীয় খণ্ড অথবা দৃঢ় ও কঠিন ভূত্বকীয় আন্তরণকে পাত বলে। পাতের বিবর্তন, প্রকৃতি, গতিশীলতা, পাতসীমানার মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক প্রভৃতি ঘটনাবলিকে একত্রে পাতসংস্থান (Plate Tectonic) বলে।

∆পাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য :

1)আয়তন ও গভীরতা : পাতের আয়তন প্রায় 10 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এবং গভীরতা প্রায় 70-150 কিলোমিটার পর্যন্ত ।

2)অবস্থান : পাতগুলি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর ওপর ভাসমান অবস্থায় পরিচলন স্রোতের প্রভাবে গতিশীল।

3)পাতের প্রকৃতি : প্রত্যেকটি পাত কঠিন ও ভঙ্গুর এবং প্রত্যেকেটি গতিশীল কোনটি দ্রুত কোনটি ধীর প্রকৃতির।


পাতের সংখ্যা ও প্রধান প্রধান পাত সমূহ :

 7টি প্রধান পাত - ইউরেশীয় পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, আফ্রিকা পাত, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়া পাত, উত্তর আমেরিকা পাত, দক্ষিণ আমেরিকা পাত, আন্টার্টিকা পাত ।  

8টি মাঝারি পাত যেমন- আরবীয় পাত, নাজকা পাত , ফিলিপাইন পাত, ক্যারিবিয়ান পাত ,ভারতীয় পাত,

20টির বেশি ক্ষুদ্র পাত যেমন- পানামা পাত, সোমালি পাত ,মাদাগাস্কার পাত ,গ্রীনল্যান্ড পাত, শ্রীলংকা পাত, ইরানীয় পাত।


পূর্ব অনুমান সমূহ :

•সমুদ্রের তলদেশ ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।

•মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বরাবর নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বক সৃষ্টি হচ্ছে

•খাতে সমুদ্রের তলদেশ ধ্বংস হচ্ছে ।

•একটি পাতের নিচে আরেকটি পাত প্রবেশ করে একে নিমজ্জন বলে ।


মূল বক্তব্য :

•পৃথিবী এক সময় উত্তপ্ত তরল অবস্থায় ছিল তাপ বিকিরণ করে উপরিভাগ ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়েছে।

•পৃথিবীর উপরিভাগ লিথোস্ফিয়ার নামে পরিচিত উপরিভাগ শীতল কঠিন ও ভঙ্গুর।

•এটি কতকগুলি অবিচ্ছন্ন খন্ডে বিভক্ত যাদের plate বলে।

•অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর ওপর এগুলি ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং এগুলি পরিচলন স্রোতের প্রভাবে গতিশীল।

•পাতগুলি গতিশীল হওয়ার জন্য ভূপৃষ্ঠে বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।


পাত-সংস্থানের কারণসমূহ (causes of plate tectonic): পাত-সংস্থানের প্রধান কারণগুলি হল -

1)অভিকর্ষজ ও টানের প্রভাব : হ্যাগার-এর ধারণানুসারে, মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরা মহাসাগরীয় পাতের থেকে উচু হওয়ায় অভিকর্ষজ টানের প্রভাবে পাত উচু স্থান থেকে নীচু স্থানের দিকে অর্থাৎ খাতের দিকে সঞ্চালিত হয়। 

2)পরিচলন স্রোত : আর্থার হামস এর পরিচলন 'স্রোত সংক্রান্ত ধারণা অনুসারে অ্যাসথেনােস্ফিয়ারে সৃষ্ট পরিচলন স্রোতকে পাতের সঞ্চালনের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় বিপরীত দিক থেকে আগত দুটি নিম্নমুখী স্রোত মিলিত হলে পাতগুলিও পরস্পরের অভিমুখে সঞ্চালিত হয় অনাদিকে ঊর্ধ্বমুখী পরিচলন স্রোত পরস্পরের বিপরীত দিকে চালিত হলে পাতের ক্ষেত্রেও অনুরুপ সঞ্চালন ঘটে থাকে।

 3)ম্যাগমার ঊর্ধ্বমুখী স্রোত : পরস্পরের বিপরীত দিকে দুটি পাতের সঞ্চারণের ফলে ম্যাগমার ঊর্ধ্বমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়, যা উক্ত পাতগুলিকে ক্রমাগত পরস্পরের থেকে দুই দিকে সরিয়ে দেয়। 

4)উষ্ণ স্থানের প্রভাব : ভূহকের নীচে অবস্থিত প্রায় 21টি উষ্ণ স্থান থেকে ম্যাগমার উত্থানের ফলেও পাতের অনুভূমিক সঞ্চরণ ঘটতে পারে।

 5)নিমজ্জিত পাতের টান : পরস্পরের অভিমুখে আগত পাতের সামানা বরাবর ভারী পাতের নিমজ্জনের কারণে পাতের অপর অংশে যে টানজনিত বলের সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে পাতটির সঞ্চরণ ঘটে।


পাত সীমানা ও পাত সীমানার প্রকারভেদ (classification of plate boundaries): 

একটি পাতের শেষ অংশ কে পাত প্রান্ত (plate margin) বলে এবং যে সীমানা বরাবর পাশাপাশি অবস্থিত দুটি পাতের মধ্যে পারস্পারিক গড়ে ওঠে বা দুটি পাতের মধ্যবর্তী অংশকে পাত সীমানা( plate boundary)বলা হয় । প্রধানত তিন প্রকার পাত সীমানা দেখা যায় , যথা-


1)প্রতিসারী/অপসারী/গঠনকারী পাতসীমানা (Disvergent/Constructive Plate Boundaries):

একটি পাত যখন অপর পাতের থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে, তখন তাকে প্রতিসারী/অপসারী পাতসীমানা বলে। 

শ্রেণীবিভাগ :

a)মহাসাগরীয়- মহাসাগরীয় : যখন দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের প্রতিসারী হয়

সৃষ্ট ভূমিরূপ : মহাসাগরীয় শৈলশিরা ,সাগর -মহাসাগর উৎপত্তি ।

উদাহরণ : মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বরাবর লক্ষ্য করা যায়।

b) মহাদেশীয় মহাদেশীয় : যখন দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের প্রতিসারী হয় 

সৃষ্ট ভূমিরূপ : রিফট ভ্যালি, ট্রান্সফর্ম চ্যুতি।

উদাহরণ : আফ্রিকান রিফট ভ্যালি


2)অভিসারী/বিনাশকারী পাতসীমানী (Convergent/Destructive Plate Boundaries) : দুটি পাত যখন পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন তাকে অভিসারী পাতসীমানা বলে।

শ্রেণীবিভাগ :

a)মহাদেশীয়- মহাদেশীয় : এ ক্ষেত্রে দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে থাকে।

সৃষ্ট ভূমিরূপ : সুচার লাইন ,অগ্নুৎপাত ,ভঙ্গিল পর্বত।

উদাহরণ : ইউরেশীয় পাত ও ভারতীয় পাতের মিলনের ফলে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি।

b)মহাদেশীয় -মহাসাগরীয় : মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতের অগ্রসর এর ফলে মহাদেশীয় পাতের নিচে মহাসাগরীয় পাত প্রবেশ করে।

সৃষ্ট ভূমিরূপ : সামুদ্রিক খাত, ভঙ্গিল পর্বত ,আগ্নেয় পর্বত ইত্যাদি।

উদাহরণ : প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ও আমেরিকান পাতের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট রকি ও আন্দিজ পর্বত।

c)মহাসাগরীয়- মহাসাগরীয় : একটি সামুদ্রিক পাত অপর একটি সামুদ্রিক পাত এর নিচে প্রবেশ করে

সৃষ্ট ভূমিরূপ : বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা ,সুগভীর সমুদ্র খাত বেসিন প্রভৃতি।

উদাহরণ : জাপান দ্বীপপুঞ্জ , মারিয়ানা খাত।


3)সংরক্ষণশীল /নিরপেক্ষ / ট্রান্সফর্ম পাত সীমানা (Conservative / Neutral / Transform / Shear Plate Boundaries):

কোনো চ্যুতি বরাবর যখন দুটি পাত পরস্পরের পাশাপাশি অবস্থান করে এবং পরস্পরের বিপরীত দিকে সঞ্চারিত হয়, তখন সেই পাত সীমানাকে সংরক্ষণশীল বা নিরপেক্ষ বা ট্রান্সফর্ম পাত সীমানা বলে।

শ্রেণীবিভাগ :

a)মহাসাগরীয়- মহাসাগরীয় : যখন দুটি মহাসাগরীয় পাত পাশাপাশি অবস্থান করে

সৃষ্ট ভূমিরূপ : খাত এবং উপত্যকা সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ : kane fracture

b)মহাদেশীয়- মহাদেশীয় : যখন দুটি মহাদেশীয় পাত পাশাপাশি অবস্থান করে 

সৃষ্ট ভূমিরূপ : চ্যুতি গঠিত অঞ্চল

উদাহরণ : সান অন্ড্রিজ চ্যুতি 


এছাড়াও আরেক ধরনের পাত সীমানা দেখা যায় সেটি হল-

ত্রি -পাত সম্মেলন( triple junction plate boundary )

 তিনটি প্লেট যে বিন্দুতে মিলিত হয় সেই বিন্দুকে triple junction plate boundary বলে। এই পাত সীমানা Y আকৃতির হয়। এক্ষেত্রে দুটি পাত সক্রিয় ও তৃতীয় পাত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে।

সৃষ্ট ভূমিরূপ : শৈলশিরা, চ্যুতি

উদাহরণ: প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত , জুয়ান দে ফুকো পাত ও উত্তর আমেরিকা পাতের একত্রে সম্মিলন ঘটেছে।


পাতসংস্থান তত্ত্বের সমালােচনা (criticism) : এই তত্ত্বের প্রধান দুর্বলতাগুলি হল-

1) মহাসাগর সংলগ্ন স্থানে সমস্ত প্রতিসারী পাতসীমানার অবস্থান এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে পাতের নিমজ্জনের বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি। 

2)একদিকে পৃথিবীর স্থির আয়তন ও অন্যদিকে পাতের সম্প্রসারণের হার নিমজ্জনের থেকে বেশি-এই বিষয়টির যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

3)একই পাত কীরূপে দুদিকেই সঞ্চালিত হতে পারে সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। 

4)প্রতিসারী পাতসীমানার স্থানান্তরের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আলােকপাত করা হয়নি। 

5)পাতের চলনের জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তিগুলি সম্পর্কে ভূবিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।  

6)সর্বত্র বেনিঅফ এলাকা গড়ে না ওঠার (যেমন-উত্তর আমেরিকা পাতের পশ্চিম দিক) কারণ সম্পর্কে এই তত্ত্বে কোনাে উল্লেখ নেই।


আরও নোটস পেতে ক্লিক করো ⬇️

সমুদ্রবক্ষের প্রসারণ আলোচনা করো

মহীসঞ্চরণ তত্ত আলোচনা করো 

সমস্থিতি মতবাদ আলোচনা করো 


∆কিভাবে নোটগুলো খুঁজবে (Find Notes)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ